চমকপ্রদ জীবনের চমকহীনতা

নানকারগেট। নটিংহ্যাম কাউন্টির এক অকিঞ্চন গ্রাম। গ্রামের প্রায় সবাই কয়লা খনিতে চাকরি করতেন। এমনিতে বিশেষ কিছু নেই এই গ্রাম নিয়ে বলার মতো। বর্তমানে আর সেখানে কয়লা খনি নেই। কয়লার কালো বদলে গেছে নির্মল বনানীর সবুজে। কিন্তু সেই গ্রামের ১৭ নম্বর চ্যাপেল স্ট্রিটের বাড়িতে ১৯০৪ সালে জন্মেছিলেন এক ভদ্রলোক।

নানকারগেট। নটিংহ্যাম কাউন্টির এক অকিঞ্চন গ্রাম। গ্রামের প্রায় সবাই কয়লা খনিতে চাকরি করতেন। এমনিতে বিশেষ কিছু নেই এই গ্রাম নিয়ে বলার মতো। বর্তমানে আর সেখানে কয়লা খনি নেই। কয়লার কালো বদলে গেছে নির্মল বনানীর সবুজে। কিন্তু সেই গ্রামের ১৭ নম্বর চ্যাপেল স্ট্রিটের বাড়িতে ১৯০৪ সালে জন্মেছিলেন এক ভদ্রলোক।

জন্মের ২৮ বছর বাদে তিনি অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট মাঠে এমন সব কাণ্ড ঘটান, যার প্রভাব দুই দেশ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলো। সেই ঘটনার পর তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনই শেষ হয়ে যায়। ক্রিকেটের বহু নিয়ম পাল্টে যায়। তিনি হ্যারল্ড লারউড।

লারউড নিয়ে বলার আগে তাঁর গ্রাম নিয়ে আরেকটু বলি। নানকারগেট গ্রাম থেকে সবচেয়ে কাছের রেল স্টেশন ৫ মাইল দূরে। এক সাংবাদিক ২০১১ সালে লারউড অনুসন্ধানে সেই গ্রামে গিয়েছিলেন। এবং লারউড যেমন ভাবে হেঁটে যেতেন স্টেশনে ট্রেন ধরতে, তিনিও হেঁটেই গিয়েছিলেন। ২০১১ সালেও সেসব পথঘাট এমনই ফাঁকা ছিল, যে সাংবাদিক মাঝপথে ভাবছিলেন, এ কোথায় চলে এলাম।

আর লারউড যখন সে পথ দিয়ে কাঁধে কিটব্যাগ নিয়ে হেঁটে নটিংহ্যামের ট্রেন ধরতে যেতেন, তখন পাকা রাস্তাও ছিল না। কয়লার কালো আর ঘ্রান লেপ্টে থাকতো গোটা পথ জুড়ে। কিন্তু ওই কয়লার পরিবেশে দম বন্ধ হয়ে যেত হ্যারল্ডের। কয়লা খনির কাজ থেকে তিনি মুক্তি চাইতেন। সেই মুক্তির স্বাদ তাঁকে দিতো ট্রেন্টব্রিজ নটিংহ্যামের সবুজ গালিচা।

নটিংহ্যাম কাউন্টির সাথে তাঁর প্রথম চুক্তি ছিল সাপ্তাহিক ২ পাউন্ড। এবং খেলতে গিয়ে কোনো চোট আঘাত লাগলে কর্তৃপক্ষ তার দায়ভার বহন করবে না। আজকের দিনে তৃতীয় ডিভিশন ক্লাব ক্রিকেটারকেও বোধহয় এই চুক্তি অফার করা হলে, তিনি চুক্তির কাগজ ছিঁড়ে কুটি কুটি করে অন্য রাস্তা দেখতেন। লারউড করেননি। কারণ তিনি কয়লা খনির শ্রমিক জীবন থেকে মুক্তি চাইতেন।

লারউড খুব একটা লম্বা চওড়া ছিলেন না। ফাস্ট বোলারের যে কাল্পনিক চিত্র আমাদের চোখে ভাসে, সেরকম একেবারেই নন। তুলনা টানার জন্যে বলি, তাঁর শরীরের গঠন খানিক মার্শালের মতোই। কাজেই শুরুর দিকে, নির্বাচকরা তাঁকে খুব একটা পাত্তা দিতেন না। কিন্তু তাঁর মাখনের মতো অ্যাকশনে করা গোলাগুলি গুলো যখন ব্যাট বিট করে পিছনের নেটে গিয়ে লাগতো, তখন একটা দেখার মতো ব্যাপার ঘটতো বটে।

নটিংহ্যামের নেট গুলো নাকি লারউড এর গোলাগুলির আঘাত সইতে না পেরে মাঝে মাঝেই ফেটে যেত। অত:পর ১৯২৪ সালে কাউন্টি ক্রিকেটে অভিষেক। এবং ১৯২৬ সালে টেস্ট ম্যাচে।যদিও টেস্ট ক্রিকেট আসল লারউড-নামা প্রতক্ষ্য করবে আরো বছর সাতেক বাদে। তার একটা ব্যাক স্টোরি অবশ্য আছে। সেটা শুরু হয় ১৯৩০ সালে।

১৯৩০ সালের অ্যাশেজ সিরিজ ছিল ব্র্যাডম্যানের। গোটা সিরিজে তিনি করেন ৯৭৪ রান। গড় ১৩৯। লারউড কেন, সব ইংরেজ বোলাররাই ব্র্যাডম্যানের ব্যাটে কচুকাটা হন। বিশ্বজোড়া অর্থনৈতিক মন্দা, যাকে ‘গ্রেট ডিপ্রেশনও’ বলা হয়, তার মাঝে ডনের ব্যাট ছিল অস্ট্রেলিয়দের আশার আলো। তবে ১৯৩০ সিরিজেরই ওভাল টেস্টে বৃষ্টির পর পিচ সামান্য ভিজে যাওয়াতে ডন খান দুয়েক বাউন্সার খেলতে একটু সমস্যায় পড়েন।

এবং সেটা দেখেছিলেন ইংরেজ কিপার জর্জ ডাকওয়ার্থ। অত:পর আসছে এশেজে ডনকে আটকানোর একটা নীল নকশা ছকে ফেললেন ইংরেজ অধিনায়ক জার্ডিন। ‘লেগ-থিওরি’ বা ‘বডিলাইন’। এবং ব্যাপারটা ডনের বিরুদ্ধে বাস্তবায়িত করার জন্যে তাঁর দরকার ছিল তীব্র গতির বোলার। জব ডেস্ক্রিপশনের সাথে লারউড এর প্রোফাইল একেবারে খাপে খাপ মিলে যায়।

শোনা যায় লারউড আর ভোস নাকি একবার একটি কাউন্টি ম্যাচে এক ভারতীয় ব্যাটারের পাগড়ি কে আগে খসাতে পারে, সেই নিয়ে এক প্যাকেট সিগারেট বাজি ধরেছিলেন। এহেন লারউড এশেজের আগে বছর দুয়েক, কাউন্টি সার্কিটে ক্রমাগত তীব্র গতির বাউন্সার অনুশীলন করতে লাগলেন। ১৯৩২-৩৩ এর এশেজ সিরিজের প্রথম টেস্টেই ব্র্যাডম্যান বিহীন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে লারউড ও জার্ডিন মিলে লেগ থিওরির একটা ড্রেস রিহার্সাল দেন। ম্যাকেবের অনবদ্য ১৮৭ সত্ত্বেও প্রথম ম্যাচে হার হয় অজিদের।

দ্বিতীয় ম্যাচে ডন ফিরলেন, অস্ট্রেলিয়া জয়ে ফিরলো। প্রথম ইনিংসে যদিও ব্র্যাডম্যান ০ করেন, দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ১০৩। অস্ট্রেলিয় সমর্থক, খেলোয়াড়, সাংবাদিক সকলেই মনে করতে শুরু করলেন, লেগ থিওরি বা বডিলাইনের বিরুদ্ধেও অস্ট্রেলিয়া জিততে পারে। আর চরম নিন্দিত হতে লাগলেন জার্ডিন ও লারউড। এমতাঅবস্থায় সিরিজ গিয়ে পৌঁছলো অ্যাডিলেডে।

ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে করে ৩৪১। প্রায় শামুকের গতিতে। দ্বিতীয় দিনে ব্র্যাডম্যানকে ব্যাট করতে দেখার আশায় প্রায় ৫১০০০ লোক এডিলেডের মাঠে আসেন। ফিঙ্গেলটন তাড়াতাড়ি ফিরে যান। গাবি এলেনের বলে। এরপর নামেন ব্র্যাডম্যান। লারউড তাঁর প্রথম ওভারেই অজি অধিনায়ক উডফুলের বুকে মারেন। উডফুলের লুটিয়ে যাবার দৃশ্য আজও সেই সিরিজের সবচেয়ে আলোচিত দৃশ্য।

এই ধরণের কাণ্ড ঘটলে, সাধারণত অধিনায়ক বা বোলার তাড়াতাড়ি ব্যাটারের দিকে দৌড়ে যান। জার্ডিন অবশ্য অন্য ধাতুর। উল্টো দিকে ব্র্যাডম্যানকে শুনিয়েই যেন বললেন, ‘ওয়েল বোল্ড’। দর্শক রাগে বাঁধনছাড়া হতে থাকে। পুলিশ তৎপরতা বাড়তে থাকে। আগুনে ঘৃতাহুতি হিসাবে ব্র্যাডম্যানের শর্ট বলে আউট দর্শককে আরো রাগিয়ে দেয়। অজি অধিনায়ক উডফুল ২২ রান করে যখন ড্রেসিং রুমে ফিরে আসেন, তাঁকে সমবেদনা জানাতে আসেন ইংরেজ ম্যানেজার প্লাম ওয়ার্নার।

উডফুল বলেন, ‘তোমার মুখ দেখতে চাই না। মাঠে দুটো দল রয়েছে। একদল ক্রিকেট খেলতে চাইছে। আরেকদল অন্যকিছু।’ বিখ্যাত উক্তি। পরেরদিন খবর টা বাইরে বেরিয়ে যায়।সৌজন্যে সম্ভবত অস্ট্রেলিয় ব্যাটার তথা সাংবাদিক জ্যাক ফিঙ্গেলটন। ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে, ওয়ার্নারকে বলতে হয়, ‘উডফুল অনুতপ্ত। আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে।’

উডফুল তা প্রকাশ্যে অস্বীকার করেন। ব্যাপার গুরুতর হয়ে দাঁড়ায়। লারউড অবশ্য তাঁর কাজ সমানে চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অজি উইকেট রক্ষক বার্ট ওল্ডফিল্ডকেও একবার বাউন্সারের ধাক্কায় শুইয়ে দেন। লারউড তখন অজিদের গণশত্রু। ড্রিঙ্কস ব্রেকে অজি সমর্থকদের ব্যারাকিং ভেসে আসে, ‘একে জল দিও না। মালটাকে তেষ্টায় মরতে দাও।’

লারউড এর অবশ্য কিছুতেই কিছু আসে যায় না। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও বিদ্ধংসী বোলিং করলেন। এবার ৭১ রানে ৪ উইকেট। ইংল্যান্ড ম্যাচ জিতলো। ম্যাচ শেষে দর্শকদের উদ্দেশে লারউড বলেন, “আমি এই ম্যাচ বা বোলিং নিয়ে কি বলতে চাই, তাতে কিছু যায় আসে না। দর্শকরা এই ম্যাচ দেখে পয়সা উসুল করেছে।” সিরিজ না খেলে ইংল্যান্ড ফিরে আসবে, অবস্থা এমন দাঁড়ায়। শেষমেশ সিরিজ খেলা হয়।

জার্ডিন কিন্তু তাঁর গেমসম্যানশিপ অ্যাডিলেড উত্তরও বন্ধ করেননি। শোনা যায়, লম্বা একটি স্পেলের শেষে লারউড পায়ের তীব্র চোট নিয়ে মাঠের বাইরে যেতে চান। শুধুমাত্র ব্র্যাডম্যান ক্রিজে রয়েছেন বলে লারউডকে যেতে দেন নি জার্ডিন। অর্থাৎ ব্র্যাডম্যানকেও খুব সামান্য হলেও কি মানসিক ভাবে দুর্বল করে দিয়েছিলো লারউড এর নিছক উপস্থিতি? জানি না।

যেটা জানি, তা হলো ডনের ব্যাটিং গড় সেই সিরিজে স্ট্রাটোস্ফিয়ার থেকে পৃথিবীতে এসে দাঁড়ায়। অস্ট্রেলিয়ার সমর্থক কুল অবশ্য এডিলেড টেস্টের পর লারউড নিয়ে রাগ পুষে রাখেননি। হয়তো উপলব্ধি করেছিলেন, জার্ডিনের মস্তিষ্কপ্রসূত বডিলাইন নামক অট্টালিকার, লারউড নিছক প্রধান রাজমিস্ত্রী ।এমনকি সিডনিতে নৈশপ্রহরী হিসাবে ৯৮ করে আউট হবার পর, সিডনি জনতা তাঁকে তালিতে তালিতে অভিবাদন জানায়।

বডিলাইন সিরিজের পর অবশ্য লারউড আর কখনো টেস্ট খেলতে পারেননি। বডিলাইন সিরিজের পর এম.সি.সি. স্পিরিট অফ ক্রিকেটের অজুহাতে লারউডকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলেন। লারউড সটান মানা করে দেন। কারণ তিনি এই স্ট্রাটেজি নিজে বানান নি। যিনি বানিয়েছেন তিনি এর পরেও বহাল তবিয়তে ইংল্যান্ডের অধিনায়কত্ব করে গেছেন। অত:পর আর টেস্ট খেলা হয়নি লারউড এর। বোধহয় ইংরেজ ক্রিকেটে ঢুকে থাকা দীর্ঘদিনের ‘বর্ণাশ্রম’ প্রথাই এর জন্যে দায়ি। কয়লা খনির শ্রমিক ও ব্যারিস্টারের ছেলের মধ্যে ফারাক তো রাখতেই হবে!

১৯৩২-৩৩ বডিলাইন সিরিজ পরবর্তী লারউড আর টেস্ট না খেললেও, ১৯৩৮ সাল অব্দি, প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলে গেছেন। মহাযুদ্ধ উত্তর লারউড খেলা ছেড়ে ব্যবসাপত্তরে মন দেন। ইংল্যান্ডের সমুদ্রের ধারে অবস্থিত ব্ল্যাকপুল শহরে তিনি একটি মিষ্টির দোকান দেন। ৫০০০ পাউন্ডের বিনিময়ে বিচ থেকে মাত্র দশ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত সেই দোকানটি লারউড কিনে নেন।

মিষ্টি, টফি ইত্যাদি ছাড়াও বেচতেন কিছু প্রাপ্তবয়স্ক জিনিস। যেমন তামাক, সিগারেট ইত্যাদি। এমনিতে একেবারেই প্রচারবিমুখ ছিলেন লারউড। তাই লোকে দেখে চিনে ফেলবে, এই ভয়ে কাউন্টারে বসতেন না। তবুও ভাগ্য ভালো হলে মাঝে সাঝে দেখা মিলতে পারতো তাঁর।

১৯৫০ সালে ফিঙ্গেলটন তাঁকে অস্ট্রেলিয়া আসার অনুরোধ করেন। তৎকালীন ব্রিটেনের বহু রণক্লান্ত পরিবারের মতো অতঃপর তিনিও অস্ট্রেলিয়া পারি দেন। বডিলাইন অবশ্য তখনও তাঁর পিছন ছাড়ে নি। ১৮ বছর আগে যে জাহাজ তাঁকে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যায়, এবারেও সেই একই জাহাজ তাঁকে সপরিবারে অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে দেয়। জাহাজটির নাম ‘orontes’।

অস্ট্রেলিয়া গিয়ে প্রথম কয়েকদিন লারউড একটি হোটেলে ছিলেন। পরে তিনি আবিষ্কার করবেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রব সিফলি তাঁর অর্ধেক বিল মেটাচ্ছিলেন। একটি নরম পানীয়ের ফ্যাক্টরিতে লারউড এরপর চাকরি নেন। অস্ট্রেলিয়ায় চরম জনপ্রিয় হয়েছিলেন লারউড। নিজের খেলার অনেক স্মারক তিনি নিজেই জমিয়ে রাখতেন। কোনো গুণমুগ্ধ ভক্ত বা সাংবাদিক এলেই সেসবের ডালি খুলে বসে পড়তেন।

এটাই আশ্চর্য্যের, যে লারউড কর্তৃক করা বডিলাইন বোলিং একসময় জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে গোটা অস্ট্রেলিয় সমাজের কাছে বিবমিষা উদ্রেককারী ছিল, পরবর্তীতে সেই তারাই লারউডকে আপন করে নেয়। অস্ট্রেলিয়দের সংস্কৃতিটাই অবশ্য এরকম। মাঠের ভিতর তুমি শত্রু। কিন্তু মাঠের বাইরে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। তোমার সাথে মাঠে মারামারি করেও, রাতে একই পাবে বসে বিয়ার পান করা যেতে পারে।

লারউড বিয়ে করেছিলেন ১৯২৭ সালে। তাঁদের দাম্পত্য প্রায় ৭০ বছরের কাছাকাছি সময় বজায় ছিল। শেষ জীবনে লারউড প্রায় দৃষ্টিশক্তি লুপ্ত হয়ে যান। তবুও কখনও কোনো সাংবাদিককে ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে শোনা যায় না। আমাদের বাংলারই দুই সাংবাদিক তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। গৌতম ভট্টাচার্য তাঁর ‘সচ’ বইতে লারউড নিয়ে একটি দারুন ঘটনা জানিয়েছেন। লারউড তাঁকে সাক্ষাৎকারের সময় দিয়েছেন কিছুটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও।

সম্ভবত ভগ্নপ্রায় স্বাস্থ্য তার প্রধান কারণ। গৌতম বডিলাইন সিরিজ নিয়ে প্রচুর পড়াশুনা করে গেছেন। যদি সাক্ষাৎকার দেবার আগে কিছু অদ্ভুত প্রশ্ন করে বসেন? কিন্তু গৌতম সিডনিতে লারউড এর বাড়ি পৌঁছে আশ্চর্য্য হয়ে গেলেন। লারউড এর প্রথম প্রশ্ন, ‘তোমাদের ওই নতুন ছেলেটাকে সবাই ডনের সমান বলছে। ও কি সত্যিই অত ভালো?’ অর্থাৎ বিপক্ষ খেলোয়াড়ের প্রতি অসম্ভব শ্রদ্ধা। হতেই পারে, মাঠে ডনের মুন্ডু ওড়ানোর কথা ভাবতেন। কিন্তু একটি বারের জন্যেও ডনের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে প্রশ্ন নেই তাঁর মনে।

লারউড ঠিক কতটা অমায়িক ছিলেন তার বেশ কয়েকটি গল্প আছে। একবার ইংল্যান্ডের একটি মাঠে পয়সা দিয়ে টিকিট কেটে মাঠে এসেছেন। হাটন তাঁকে দেখে বললেন, ‘প্রেসিডেন্ট বক্সে এসে বসো।’ লারউড জবাব দেন, ‘এখানে ঠিকই আছি।’ কাউন্টি ক্লাবের সেক্রেটারি এই কথা জানতে পেরে, লারউডকে বলেন, ‘আপনি আর যাই করুন। এই মাঠে আর কখনও টিকিট কেটে ঢুকবেন না। আপনি আমাদের যা দিয়েছেন, তাতে এ অসম্মান আপনাকে মানায় না।’

ইংরেজরা বহু পরে লারউড কে মান্যতা দিয়েছেন। এমবিই, এমসিসি’র আজীবন সদস্যপদ প্রদান করেছে তাঁকে। অস্ট্রেলিয়রাও কার্পণ্য করেনি। লারউডকে মন উজাড় করে সম্মান জানিয়েছে। এসসিজি. তাঁকে আজীবন সদস্যপদ দিয়েছে। শঙ্করীপ্রসাদ লারউডকে নিয়ে লিখতে গিয়ে লিখেছেন, ‘ডন যদি নায়ক হন, তবে সমসাময়িক প্রতিনায়ক লারউড।’

বহু প্রতক্ষ্যদর্শী লারউডকে সর্বকালের সবচেয়ে জোরে বোলার আখ্যা দিয়েছেন। একশো মাইল প্রতি ঘন্টাতেও নাকি তিনি বল করতেন। ‘স্পিরিট অব ক্রিকেট’ নিয়ে অনেকেরই অনেক রকম মত। তৎকালীন সময়ে তাঁকে ‘রাক্ষস’ জাতীয় বিশেষণেও ভূষিত করা হয়। কিন্তু তাতে লারউড এর মহানতা কিছুমাত্র খর্ব হয় না। ২১ টেস্টে ৭৮ উইকেট, কখনোই লারউডকে প্রমান করে না। তাই পৃথিবীর সর্বকালের অন্যতম দ্রুতগতির বোলারের প্রতিভা বিশ্বমঞ্চে পরিণতি পায় নি। এবং তার অন্যতম কারণ ‘স্পিরিট অফ ক্রিকেট’ নামক কচকচি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...