হৃষিকেশ কানিতকার, দ্য পাকিস্তান লাভ অ্যাফেয়ার

হৃষিকেশ কানিতকার - নামটা বললেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে ফর্সা রঙের কটা চোখের এক সুদর্শন যুবক, যিনি অনেক আশা জাগিয়ে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করেও বেশিদিন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারেন নি। অবাক করার বিষয় হলো প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তাঁর ৫২ গড়ে ১০ হাজারের উপরে রান আছে! কিন্তু টেস্ট বা ওয়ানডে-তে তাঁর গড় ২০ পেরোয়নি।

হৃষিকেশ কানিতকার – নামটা বললেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে ফর্সা রঙের কটা চোখের এক সুদর্শন যুবক, যিনি অনেক আশা জাগিয়ে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করেও বেশিদিন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারেন নি। অবাক করার বিষয় হলো প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তাঁর ৫২ গড়ে ১০ হাজারের উপরে রান আছে! কিন্তু টেস্ট বা ওয়ানডে-তে তাঁর গড় ২০ পেরোয়নি।

সর্বোচ্চ রান বা ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হওয়া নয়, ক্রিকেট ভক্তরা তাঁকে মনে রেখেছেন ঢাকায় অনুষ্ঠিত ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপে প্রায়ান্ধকার পরিবেশে সাকলাইন মুশতাকের ফুলটস মিড্ উইকেটে হাঁকিয়ে তাঁর ভারতকে এক অসাধারণ জয় এনে দেওয়ার জন্য। অনেকেই হয়তো ভুলে গিয়েছেন কানিতকরের ওয়ানডে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ স্কোর ৫৭ এসেছিলো অজিত আগারকারের অভিষেক ম্যাচে। ১৯৯৮ সালের পেপসি ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে।

যদিও সেই ম্যাচে অজয় জাদেজা সেঞ্চুরি করেন এবং শচীন টেন্ডুলকার ৩২ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হয়ে যান মাত্র ৮ রান করেও। সেই ম্যাচটি ছিল লাল বল ও সাদা জামা পরে খেলা ওয়ানডে, যা এর পরে আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যায় (২০০০ সালের জিম্বাবুয়ে বনাম ভারত সিরিজ লাল বলের ক্রিকেটে শেষ ওয়ানডে সিরিজ)।

কানিতকার মাত্র ৩৪ টি ওয়ানডে খেলে দল থেকে বাদ পড়লেও, এর মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে উপহার দিয়েছেন বেশ কিছু অদ্ভুত ক্যামিও পারফরম্যান্স। তার একটা আগেই বলেছি, ইনডিপেনডেন্স কাপ জয়ের উইনিং স্ট্রোক। আরেকটির ব্যাপারে আজকে বলবো, একটু পুরোনো দিনের ক্রিকেটপ্রেমীদের হয়তো মনে থাকবে ঘটনাটা।

৯৯-২০০০ সালে ভারত অস্ট্রেলিয়া সফরে যায়, সেখানে কানিতকার দু’টো টেস্ট খেলে ৭৪ রান করেন ১৮.৫ গড়ে; স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে ভবিষ্যতে আর টেস্ট ক্রিকেটের জন্যে বিবেচনা করা হয়নি। কিন্তু এই টেস্ট সিরিজের পরে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ হয়, যাতে ভারত ফাইনালেও উঠতে পারেনি। গোটা টুর্নামেন্টে মাত্র একটি ম্যাচ জেতে ভারত, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, সৌরভ গাঙ্গুলির অনবদ্য ১৪১ রানে ভর করে। সেই ম্যাচে কানিতকার এক অদ্ভুত কাণ্ড করেন।

আপনারা অনেকেই জানেন অস্ট্রেলিয়ার মাঠগুলো আগে অনেক বড় আয়তনের হতো। মেলবোর্নের মাঠে দৌড়ে চার রান নেওয়ার দৃশ্য বছর দশ পনেরো আগেও দেখা গিয়েছে। এই ম্যাচটি ছিল অ্যাডিলেডে। সেই সময়ে বড় মাঠ হিসেবে অ্যাডিলেডও কম যেত না। বিশেষ করে বাউন্ডারি রোপ কন্সেপ্টটা ছিল না অনেক মাঠেই; মেলবোর্নের গাটার বা অ্যাডিলেডের ফেন্স এগুলোকেই বাউন্ডারি ধরা হতো।

বিশেষ নিয়ম ছিল যে ছয় মারতে হলে বল গ্যালারিতে ফেলতে হবে। কোনো ফিল্ডার যদি বেসবলের মতো ফেনসে পিঠ ঠেঁকিয়ে ক্যাচ ধরেন, তাহলে সেটা আউট হবে, এখনকার মতো বাউন্ডারি রোপে পা ঠেঁকে গেলেই ছয় এমন নিয়ম ছিলো না সেই টুর্নামেন্টে। পাকিস্তান দল যথারীতি এই নিয়ম জানতো না, ( ঠিক যেভাবে ২০০৭ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বোল আউট এর নিয়ম না জেনে তাঁরা আগে থেকে প্রাকটিস না করে স্পিন ও সুইং বোলিং করে ভারতের কাছে হেরে যায়)।

ভারতের ২৬৭ তাড়া করে একসময় যখন ২ উইকেট হারানোর পর ইজাজ আহমেদের সঙ্গে সেট হয়ে জুটি বাঁধছেন ইনজামাম, তখন ১৫ ওভারের মাথায় প্রসাদের একটা শর্ট বল পুল করেন ইঞ্জি এবং বলটা টাইমিংয়ের সামান্য গন্ডগোলে উঠে যায়।

তাতেও বলটা হয়তো ছয় হয়েই যেত কিন্তু কানিতকার প্রথমে মাথার উপর দিয়ে উড়ে বেরিয়ে যাওয়া ক্যাচটা ধরতে গিয়ে ফস্কালেও দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় একদম মাঠের ধারে ফেনসে পা ও কোমর ঠেঁকিয়ে ব্যালান্স করে এক হাতে প্রায় গ্যালারির ১ ফুট ভিতর থেকে ক্যাচটা ধরে ফেলেন, ইঞ্জিকে ফিরতে হয়। ভারত বেশ বড় ব্যবধানে ম্যাচটা জিতে নেয়। পরে পাকিস্তানের তরফে অভিযোগ করা হয় এই ক্যাচ নিয়ে। তাঁদেরকে জানানো হয় যে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে এইভাবে ক্যাচ ধরা বৈধ।

যদিও এর কিছু বছর পর থেকেই আস্তে আস্তে মাঠের দৈর্ঘ্য প্রস্থ ছোট করে দেওয়া হতে থাকে। আন্তর্জাতিক ম্যাচে এরকম ক্যাচ আর দেখা যায় না, ভবিষ্যতেও দেখা যাবার সুযোগ কম। নিজের স্বল্প দৈর্ঘের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে হৃষিকেশ কানিতকার এরকমই এক রেকর্ডের সাথে নিজের নাম জড়িয়ে রেখেছেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...