রানিং বিটুইন দ্যা উইকেটে তো সেরা ছিলেনই, ওই সময়ের সেরা ফিল্ডার হিসেবেও বিবেচনা করা হয় সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার সৈয়দ আবিদ আলীকে। ডাইনামিক, অ্যাথলেটিক আর এনারজেটিক – তিনে মিলে রানিং বিটুইন দ্যা উইকেট আর ফিল্ডিংয়ে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বসেরাদের কাতারে। যেমন ছিলো ফিটনেস, তেমনি পারতেন দ্রুত গতিতে দৌঁড়াতে। তাঁর এনার্জি লেভেল এতোটাই উপরে ছিলো যে সিঙ্গেলকে ডাবলস আর ডাবলসকে ত্রিপলে রুপান্তর করাটা তিনি যেনো অভ্যাসে পরিণত করেছিলেন!
মিডিয়াম পেস বোলিংয়ের সাথে ব্যাট হাতে ক্লিন হিট করতে তিনি ছিলেন পারদর্শী। ওয়ার্ল্ডক্লাস ফিটনেস, স্ট্যামিনা সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন ভারতের জন্য পরিপূর্ণ এক প্যাকেজ। বলা হয়ে থাকে, কয়েক দশক পরে জন্মালে হয়তো তিনিই হতেন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের জন্য পারফেক্ট প্যাকেজ।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২১২ ম্যাচে ব্যাট হাতে ২৯.৩০ গড়ে ৮৭৩২ রান, আছে ১৩ সেঞ্চুরি। বল হাতে ১৪ গড়ে শিকার করেছেন ৩৯৭ উইকেট, আছে ১৪ ফাইফর। পার্ট টাইম উইকেটরক্ষক হিসেবেও দারুণ পারফরম করেছেন আবিদ। উইকেটের পেছনে ১৯০ ক্যাচের সাথে করেছেন পাঁচ স্টাম্পিংও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৯ টেস্টে নিয়েছেন ৪৭ উইকেট, লোয়ার ডাউন দ্যা অর্ডারে ব্যাট করে নিজের সংগ্রহে নিয়েছেন ২০ গড়ে ১০১৮ রান। ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে ৩১ গড়ে ৯৩ রান আর বল হাতে শিকার করেন ৭ উইকেট।
ছেলেবেলা থেকেই ক্যাচ ধরতে আর রান আটকাতে পছন্দ করতেন আবিদ। প্রতিদিন হায়দ্রাবাদের ফতেহ ময়দানে গিয়ে হেভি রোলারের উপর জোরে বল মারতেন। সেই বল যেখানেই যেতো দৌড়ে যেয়ে ক্যাচ ধরতেন আবিদ। তাঁর দর্শনতত্ত্বটাই ছিলো ভিন্ন! তিনি মনে করতেন, ‘ফিল্ডিং হল এমন একটি আর্ট যা একজন উপভোগ করে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য।’
স্কুলে থাকাকালীন স্কুল টুর্নামেন্টে সুযোগ পান হায়দ্রাবাদ স্কুলের হয়ে খেলার। ওই টুর্নামেন্টে কেরালার বিপক্ষে ৮২ রান করেন এবং ম্যাচে বেস্ট ফিল্ডারের পুরষ্কার পান তিনি। জুনিয়র লেভেলে নজরকাঁড়া পারফরম্যান্স করে পরবর্তীতে দল পান রঞ্জি ট্রফিতে। হায়দ্রাবাদের হয়ে আন্ধ্রার বিপক্ষে ১৯৬৫ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মেইডেন সেঞ্চুরি করেন তিনি।
রঞ্জি ট্রফিতে দল পাবার এক মৌসুমের মধ্যে ৪৮.৪১ গড়ে ৫৮১ রান করেব আবিদ। ২ সেঞ্চুরির সাথে বল হাতেও শিকার করেন ২৭ উইকেট। হায়দ্রাবাদের হয়ে এখন পর্যন্ত এটিই অন্যতম সেরা অলরাউন্ড পারফরম্যান্স! যেকোনো পজিশনে সুযোগ পেলেই ব্যাট হাতে যেমন রান করছিলেন; বল হাতে ছিলে অসাধারণ।
১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর। অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাদা পোশাকে অভিষিক্ত হন আবিদ। আর অভিষেকেই প্রথম ইনিংসে ৫৫ রানে ৬ উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়েন তিনি। একমাত্র পেসার হিসেবে ভারতের হয়ে টেস্ট অভিষেকে এক ইনিংসে ৬ উইকেট শিকার করেন আবিদ। একই সাথে তিনি একমাত্র ভারতীয় ক্রিকেটার যিনি টেস্ট অভিষেকে ব্যাট হাতে ফিফটি আর বল হাতে পাঁচ উইকেট শিকার করেন।
ভারতের প্রথম ওভারসিস টেস্ট সিরিজ জয়েও বড় অবদান রাখেন আবিদ। ডানেডিনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে দেশের বাইরে প্রথম সিরিজ জয়ে ভারতকে সাহায্য করেন আবিদ। ওই বছর আবিদ ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন। পরের ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ইংল্যান্ড সফরেও বেশ নজরকাঁড়া পারফরম্যান্স করেন আবিদ।
ব্যাট-বল দুটোতেই সমানতালে পারফরম করেছিলেন তিনি। ভারতের প্রথম তিন ওভারসিস সিরিজ জয়ে দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন আবিদ! তাঁর ধারাবাহিক পারফরম্যান্স তাঁকে জায়গা করে দেয় ১৯৭৪ সালের ইংল্যান্ড সফরে। ওই সিরিজেই ওয়ানডেতে অভিষিক্ত হন আবিদ!
ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে এক ইনিংসে বল হাতে ৭০ রানে ৪ উইকেটের পাশাপাশি ব্যাট হাতে করেছিলেন ৭১ রান! দলের বিপর্যয়ে ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন আবিদ। পরবর্তীতেতে ঘরের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও জায়গা পান তিনি।
এরপর ১৯৭৫ সালে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসরে দলে সুযোগ পান আবিদ। ইংল্যাডের বিপক্ষে ২২ রানে ২ উইকেট ও ইস্ট আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৫ রানে ২ উইকেট শিকার শিকার করেন তিনি। এছাড়া পুরো টুর্নামেন্টে এক ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭০ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন আবিদ।
এরপর জাতীয় দল থেকে ছিটকে গেলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে তখনো নিয়মিত খেলছিলেন তিনি। ব্যাট এবং বল হাতে তখনো ছিলেন দুর্দান্ত। ক্যারিয়ারের শেষদিকে হায়দ্রাবাদের হয়ে অধিনায়কত্বও করেন তিনি। এক ম্যাচে হায়দ্রাবাদ তখন ফলোয়ানে পড়ে হায়দ্রাবাদের সামনে তখন হার চোখ রাঙাচ্ছিলো!
সেখান থেকে আবিদ আলীর ৫৯ রানের দায়িত্বশীল ইনিংসে ম্যাচ বাঁচায় হায়দ্রাবাদ। ওই ম্যাচের পরই ১৯৭৯ সালে তিনি ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। টেস্টে ২৯ ম্যাচে সুযোগ পেলেও ওয়ানডেতে খেলেছিলেন মোটে ৫ ম্যাচ! তবে, বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসরে খেলতে পারাটা তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন।
ফিল্ডিং, ব্যাটিং, বোলিং, রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে ধূর্ততা – সব মিলিয়ে আবিদ আলী ছিলেন সেসময় অন্যতম সেরা এক অলরাউন্ডার।