অস্ত যাবে আফগান সূর্য

ঠিক যেন এক রুপকথার মত করেই আফগানিস্তান ক্রিকেটের উত্থান। হঠাৎ করেই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত একটা জনপদে খানিকটা বিনোদনের প্রবল ধারা। আফগানিস্তান বাসীদের জন্যে এক চিলতে স্বস্তি আর গর্ব করবার মত জায়গায় পরিণত হয়েছিল ক্রিকেট। তবে সুখের এই ছোট্ট সম্বলটুকুও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে আফগানদের।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) বেশ উদ্বিগ্ন আফগানিস্তানের ক্রিকেট নিয়ে। কেননা দেশটির হয়ে নারী ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করবার মত দল যে নেই। একেবারেই নেই বিষয়টি তেমনও না। রয়েছে, তবে সেই দল আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারছে না। পেছনের কারণ দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি।

দেশের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। অধিকাংশই নারীদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত রক্ষনশীল মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। আর মেয়েদের খেলাধুলাতে নিষেধাজ্ঞা সে সবের একটি। তাইতো চাইলেও আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড নিজেদের নারী দলকে পাঠাতে পারছে না কোন বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে। এতে করে আফগানিস্তানের পূর্ণ সদস্যপদ বাতিল হতে পারে।

আফগানিস্তানই আইসিসির একমাত্র পূর্ণ সদস্য দেশ, যাদের কোন নারী দল নেই বর্তমানে। এমতাবস্থায়, আইসিসির নিয়মানুসারে আফগানিস্তান হয়ত হারাতে পারে নিজেদের টেস্ট স্ট্যাটাস। কেননা, আইসিসির পূর্ণ সদস্য হওয়ার অন্যতম শর্ত, নারী-পুরুষ উভয় দল। কিন্তু রক্ষনশীল সরকার ব্যবস্থায় যেন কোন উপায়ই নেই আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের।

তবে আইসিসির ডেপুটি চেয়ারম্যান ইমরান খাজা হয়ত আফগানিস্তানকে এই শাস্তি না দেওয়ার বিষয়ে জোড় দেবেন। কেননা দেশটির ক্রিকেট বোর্ড যথেষ্ট চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সরকার রীতিমত নাছোড়বান্দা। তবুও ইমরান আফগানিস্তানের সরকার প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনায় বসেছেন এশিয়া ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে। সে আলোচনাগুলো ইতিবাচকই হয়েছে বলা চলে।

দুই গ্রুপ আলোচনা করেছে দেশটির সার্বিক ক্রিকেট পরিস্থিতি নিয়ে। সেই সাথে দেশের অভ্যন্তরে দুই গ্রুপের সহয়তায় মেয়েদের ক্রিকেট উন্নয়ন নিয়েও আলোচনার কথা শোনা গেছে। তবে সরকার প্রধানকে এই বিষয়ে নমনীয় করা বেশ সময় সাপেক্ষ বিষয়। ততদিন অবধি অন্তত নিজেদের পুরুষ ক্রিকেটকে পিছিয়ে যেতে দিতে নারাজ এসিবি।

অন্যদিকে, সরকারের বিরুদ্ধেও বোর্ডের অবস্থান নেওয়ার খুব একটা সুযোগ নেই। কেননা চারিদিক থেকে আসা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মাঝেও বোর্ডকে সহয়তা করছে আফগান সরকার। তবে সরকারের নানাবিধ আচরণে হুমকির মুখে পড়ে গেছে গোটা আফগানিস্তানের ক্রিকেট কাঠামো। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া আফগানিস্তানের সাথে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ বাতিল করেছে। এর আগে এক ম্যাচের টেস্ট সিরিজও বাতিল করেছে দেশটি।

এই সিরিজ হতে পারত আফগানিস্তানের নব উদয়ের গান। কেননা সিরিজটা হওয়ার কথা ছিল রশিদ খানদের দেশের মাটিতে। যদিও পাকিস্তান সেই বাতিলকৃত ওয়ানডে সিরিজের পরিবর্তে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে এসিবি-কে। তবুও রুপকথার মত যাত্রাটা হঠাৎ করেই যেন পেছন দিকে ছুটছে।

তাছাড়া আফগানিস্তান জাতীয় নারী দলে খেলা ক্রিকেটাররা দেশের বাইরে স্থায়ী হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের ভাষ্যমতে, তাঁরা বাইরে থেকেই আফগানিস্তান জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করতে চায়। সেজন্য তাঁরা আইসিসি থেকে শুরু করে বাকি ক্রিকেট বোর্ডের সহয়তাও প্রত্যাশা করছে। তবে এই বিষয়টি বাস্তবায়ন করাটা রীতিমত দিবাস্বপ্ন।

কেননা আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এই দলের স্বীকৃতি দিতে পারবে না। সেক্ষেত্রে আইসিসির দল বলে বিবেচিত হবে আফগান নারীরা। সেটা আইসিসির নিয়ম পরিপন্থী। এমন পরিস্থিতিতে বেশ বেগতিক অবস্থায় দেশটির ক্রিকেট। হয়ত ইতি হতে পারে রুপকথার। অস্ত যেতে পারে আফগান সূর্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link