পরিকল্পনাহীনতা থেকে পরিত্রানের উপায় কি!

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বা আরো স্পষ্ট ভাবে বললে ৫০ ওভারের ম্যাচে ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে ভারতীয় দলের পরিকল্পনার অভাবের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। যে পরিকল্পনা করে এগোনো হয়নি, তবে সেটা এখন অতীতে। এখন প্রশ্ন এমতাবস্থায় পরিত্রানের উপায় কি?

কোভিড-১৯ হঠাৎ করে এমন একটা পরিস্থিতির দাঁড় করিয়েছে যে হঠাৎ করে আমরা পরবর্তী বিশ্বকাপ থেকে আড়াই বছর দূরে। কিন্তু এখনো টিম ম্যানেজমেন্ট জানে না যে ৪ বা ৫ নম্বরের স্থায়ী সমাধান কি? বা ধোনির অবর্তমানে ফিনিশারের দায়িত্ব কে পালন করবে?

শেষ ২০ বছরে একদিনের ম্যাচে ভারতীয় দল এমন কোনো ম্যাচ খেলেনি যেখানে ৪ বা ৫ বা ৬ নম্বরে দ্রাবিড় বা যুবরাজ বা ধোনির মধ্যে কেউ নেই। এই নামগুলোই বলে দেয় যে শেষ ২০ বছরে কতটা শক্তিশালী ছিল এই জায়গাটা। আরও যদি পেছনে যাই তো দেখতে পাবো যে এই জায়গাটা সামলাত মহম্মদ আজহারউদ্দিন নামের এক ব্যাটসম্যান।

আজ ধোনির অবর্তমানে সেই জায়গার দায়িত্বটা যখন হঠাৎ করে কে এল রাহুল, শ্রেয়াস আইয়ার বা মানিশ পান্ডের উপর পড়ছে তখন তো সাময়িক ভাবে একটু অসুবিধে হবেই। এরা প্রত্যেকেই যথেষ্ট প্রতিভাধর, কিন্ত প্রয়োগ করার নূন্যতম সময় সুযোগ এবং পরিসর দিতে হবে। আর এখানেই তৈরি হচ্ছে সমস্যা। এদের মধ্যে রাহুল ইতিমধ্যেই তার পারফরম্যান্স এর জন্য অনেকটা এগিয়ে। কিন্তু সেও উপরের দিকে ব্যাট করতে বেশি স্বচ্ছন্দ। ওদিকে শিখর ধাওয়ান জীবনে কোনদিন নীচে খেলেননি আর রোহিত শর্মাকে নিচের থেকে উপরে অনেক বেশি সফল, এটা প্রমাণিত সত্য। তাহলে উপায়?

আমার মনে হয় এই জায়গাতেই এই মুহূর্তে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যান তথা দলের অধিনায়ককে দায়িত্ব নিতে হবে। এটা শুনে কোহলি ভক্তরা হয়তো রে রে করে ছুটে আসবে, কিন্ত এই মুহূর্তে এর থেকে সেরা সমাধান নেই। শুরুতে রোহিত-শিখর, তিনে কে এল রাহুল, চারে কোহলি, পাঁচে আইয়ার/ মানিশ আর ছয়ে পান্ডিয়া বা অন্য কেউ।

হ্যাঁ, এতে হয়তো কোহলির ব্যক্তিগত রেকর্ডগুলো একটু হলেও কম হতে পারে কিন্তু আখেরে দলের লাভ অনেক দিক থেকে। প্রথমত দলের ব্যাটিং অর্ডারের মাথা ভারি ভাব টা কমবে। দ্বিতীয়ত, কোহলির ফিনিশিং ক্ষমতা নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয় আর একটা ভালই শুরুর পরে কোহলি যদি ৫০ ওভার পর্যন্ত ক্রিজে থাকে দলের ইনিংসটাও একটা সঠিক দিশা পাবে, সঙ্গে কোহলি থাকলে আইয়ার পান্ডিয়ারা অনেক ভাল ভাবে ইনিংসটা শেষ করতে পারবে। আর বর্তমান পরিস্থিতি তে কোনো কঠিন ম্যাচ বের করতে হলে রোহিত কোহলির একজনকে ৫০ ওভারের কোনো না কোনো সময়ে ক্রিজে থাকতে হবে।

অতীতে কিন্তু আমরা দেখেছি, বীরেন্দ্র শেবাগ আসার পরে শেবাগকে মিডল অর্ডার থেকে উপরে পাঠিয়ে দলের স্বার্থে শচীন-সৌরভের মধ্যে একজন পর্যায়ক্রমে পছন্দের ওপেনিং স্লট ছেড়ে নীচে নেমে ব্যাটিং করেছে দলের ভারসাম্য বজায় রাখতে। বিরাটেরও সময় হয়েছে সেটা করার।

শুধু তাই নয়, একদিনের ক্রিকেটে এই জায়গা টায় ব্যাট করার জন্য একটু অভিজ্ঞতার দরকার হয়, যেটার বর্তমান দলে একটু অভাব। শচীন যখন একদম শুরুতে এই পজিশনে ব্যাট করত তখন পেছনে একজন অভিজ্ঞ কপিল ছিল গাইড করার জন্য। ১৯৯/০০ একদিনের ক্রিকেটে দ্রাবিড়ের সেরা সময়। কিন্তু তাও পরের বছর থেকে নিজের পছন্দের ৩ নম্বর থেকে নেমে গিয়ে উঠতি যুবরাজ- কাইফকে সঙ্গে নিয়ে বহু ম্যাচ বের করে দিয়েছে।

এটা কখনোই বলছি না যে এটা দীর্ঘকালীন সমাধান, কিন্তু ধোনির অনুপস্থিতিতে যতক্ষন না লোয়ার মিডল অর্ডার আরো অভিজ্ঞ হচ্ছে বা ম্যাচের পর ম্যাচ বের করে নেওয়ার মতো পরিণত হচ্ছে ততক্ষন অবধি এটাই একমাত্র সমাধান।

জানি রোজ প্রতিপক্ষ ৩৯০ তুলবে না বা বিপক্ষ ৩৯০ তুললে ব্যাটসম্যানদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কিন্তু আজকের ওডিআই মানেই ৩০০ বা ৩২০’র মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে। আর সেটার জন্য ব্যাটিং গভীরতা ভীষণ প্রয়োজন, সেই সঙ্গে প্রয়োজন পুরো ইনিংস জুড়ে অভিজ্ঞতার স্পর্শ। এটা বুঝে অধিনায়ক মহাশয় যদি তাঁর পূর্ববসূরী অধিনায়কদের মতো নিজের স্বার্থতাগ করতে পারেন তো অধিনায়ক হিসেবে অনেক গৌরবজ্জ্বল কেরিয়ার নিয়ে তিনি শেষ করতে পারবেন। এখন প্রশ্ন একটাই, তিনি কাকে প্রাধান্য দেবেন? ব্যাটসম্যান কোহলি নাকি অধিনায়ক কোহলি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link