জেমি কক্স, অমল মজুমদার কিংবা ফরহাদ হোসেন। তিনটি দেশ, তিনটি আক্ষেপ। আক্ষেপ পূর্ণতা না পাওয়ার। ঘরোয়া ক্রিকেটে বিস্তর রান করেও জাতীয় দলের দরজা কখনও খুলেনি তাঁদের জন্য। কিন্তু, তারপরও কি জেমি কক্স বা অমল মজুমদারদের কাতারে নিজেকে ভাবতে পারবেন ফরহাদ?
২০০৮-৯ থেকে ২০১১-১২ মৌসুম – টানা চারবার জাতীয় ক্রিকেট লিগ জিতে রাজশাহী বিভাগ। তখন দলের ব্যাটিংয়ের অন্যতম শক্তির জায়গা ছিলেন এই ফরহাদ।
জাতীয় দলের খুব কাছাকাছি একবার এসেছিলেন ফরহাদ। ২০১২ সালে। কিন্তু, ‘এ’ দলের হয়ে দু’টি বাজে ম্যাচের পরই তাঁর জন্য জাতীয় দলে ঢোকার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে, এটা সত্যি যে স্লিপে তাঁর মত তুখোড় ফিল্ডার এখনো আসেনি বাংলাদেশ ক্রিকেটে।
প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে ১৬১ টি ম্যাচে নয় হাজারের ওপর রান করেও ফরহাদের ভাগ্য কখনওই জাতীয় দল পর্যন্ত পৌঁছায়নি। তার এই গল্পটা অনেকটা জেমি কক্স বা অমল মজুমদারের সাথে মিলে যায়।
জেমি কক্স ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার শেফিল্ড শিল্ডের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৮ হাজারের ওপর রান, ৫১ টা সেঞ্চুরি। তারপরও কালজয়ী সেই অস্ট্রেলিয়া দলে তাঁর জায়গা হয় কি করে!
না হলেও পরবর্তীতে খোদ ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) কোচ বনে গিয়েছিলেন তিনি। পরে একবার বলেছিলেন, ‘আমাকে এক যুগ ধরে নির্বাচকরা হতাশ করেছে। আমি মনে করি, সেই ঘটনাই আমাকে নির্বাচক হিসেবে সবচেয়ে শক্ত করেছে।’ হ্যাঁ, অস্ট্রেলিয়া দলে না খেলেও অস্ট্রেলিয়ার দল নির্বাচন করা সম্ভব!
এবার অমল। তাঁর নামটা তো চলে গেছে ইতিহাসের পাতায়। তাঁর সমসাময়িক ব্যাটাররা হলেন খোদ ভারতীয় ক্রিকেটের ফ্যাবুলাস ফোর – শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলি ও ভিভিএস লক্ষ্মণ।
একটা গল্প না বললেই নয়, শচীন আর বিনোদ কাম্বলি যখন স্কুল ক্রিকেটে ৬৬৪ রানের পাহাড়সমান রানের জুটি গড়েন, তখন ড্রেসিংরুমে ব্যাট-প্যাড পরে এক ছোকড়া বসে ছিলেন, অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি হলেন এই অমল মজুমদার। কখনোই তাঁর অপেক্ষার প্রহরটা শেষ হয় নি, সেটা রঞ্জি ট্রফিতে সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করার পরও।
অমলের জীবন শেষ হয়ে যায়নি। তিনি দিব্যি এখন কোচিং করাচ্ছেন। আইপিএলে কাজ করছেন। ধারাভাষ্য দিচ্ছেন। কিন্তু, ফরহাদের জীবন কি ক্রিকেট থেকে জীবনশক্তি খুঁজে নিতে পারবে? বাংলাদেশের ক্রিকেট কাঠামো কি সেই নিশ্চয়তা তাঁকে দেয়? প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট বা ক্রিকেটের মান যেমন, খেলোয়াড়দের ভবিষ্যৎও যেন তেমনই!