সাজিদ খান, দুবাইয়ের শ্রমিক থেকে ইংল্যান্ডের ত্রাস

জীবন কখনো যদি আপনাকে ছুঁড়ে ফেলে কোন অতল গভীরে, তাহলে সাজিদ খানের দিকে তাকাবেন। কিভাবে তরতর করে উঠে আসতে হয় আলোর দিকে জেনে ফেলবেন নিমিষেই, আর জানবেন কি করে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হয়। সাজিদদের জন্যই আসলে ক্রিকেট মোর দ্যান অ্যা গেম।

কতটা পথ পেরুলে তবে পথিক বলা যায়? দশ, বিশ বা একশ কিলোমিটার নাকি এক আলোকবর্ষ? সাজিদ খান কি তাহলে আপনি পথিক বলবেন? না, তিনি গড়পড়তা কোন ফিতায় মাপা দূরত্ব পাড়ি দেননি। তিনি পাড়ি দিয়েছেন জীবনের নিষ্ঠুর বাস্তবতাকে; তিনি পার হয়ে এসেছেন অন্ধকারতম দিনকে।

অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়েছিলেন এই পাক স্পিনার, সেই দু:খ কাউকে আলাদা করে বলতে হবে না আর। বাবা হারা সংসারের হাল ধরতে তাঁর ভাই বনে গিয়েছিলেন রিকশাচালক; এতেও হয়নি, বাধ্য হয়ে তাঁকে কাজ নিতে হয়েছে একটা ক্রিকেট মাঠে। ক্রিকেটারদের ব্যাট, ব্যাটে গ্রিপ ঠিক করে দিতেন তিনি।

এরপরই এই মানুষটা ক্রিকেটাঙ্গনে ঢুকে গিয়েছেন ভাববেন না। পরিবারের দায়িত্ব নিতে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন প্রবাসে, অবশেষে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চাকরি পান তিনি। ক্রিকেটের সাথে আনুষ্ঠানিক সম্পর্কের শুরু সেখানেই, সপ্তাহে পাঁচদিন কাজ করে বাকি দু’দিন ব্যাট বল নিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যেত তাঁকে।

ছেলের স্বপ্নের কথা জানতে পারেন মা; তাই সাহস দেন দেশে ফিরে আসতে। মায়ের অনুপ্রেরণায় ফিরে আসেন সাজিদ, ট্রায়ালও দিয়েছিলেন কয়েকবার। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি; তবে এত এতও ত্যাগ স্বীকার করার পর তাঁকে ভাগ্য আর নিরাশ করতে চায়নি। সাবেক পেসার ইমরান খানের নজরে আসেন তিনি, ইমরান খানের সুবাদে তাঁর অভিষেক হয় পেশওয়ার দলে।

সামর্থ্য আর সম্ভাবনার মিশেলে জাতীয় দলের নির্বাচকদের মনোযোগ জিতে নেন এই ডানহাতি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে সুযোগ পান টেস্ট দলে, তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজের ধ্বংসাত্মক রূপ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন তিনি – এক ইনিংসে আট উইকেট আর ম্যাচে বারো উইকেট নিয়ে একাই টাইগারদের হারিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

আর এখন অপ্রতিরোধ্য ইংল্যান্ডকে মুলতানের পিচে নাকানিচুবানি খাইয়ে ছেড়েছেন এই তারকা। গত প্রায় দশ মাস জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন তিনি, অথচ পারফরম্যান্স দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই।

জীবন কখনো যদি আপনাকে ছুঁড়ে ফেলে কোন অতল গভীরে, তাহলে সাজিদ খানের দিকে তাকাবেন। কিভাবে তরতর করে উঠে আসতে হয় আলোর দিকে জেনে ফেলবেন নিমিষেই, আর জানবেন কি করে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হয়। সাজিদদের জন্যই আসলে ক্রিকেট মোর দ্যান অ্যা গেম।

Share via
Copy link