ইউরোপে ডি মারিয়ার ‘শেষের কবিতা’!

সময় কখনো থেমে থাকে না, এমনকি তার জন্যও না—যার পায়ের স্পর্শে জন্ম হয়েছিল একটা ফুটবলের কবিতা। রোজারিও থেকে যে যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ডি মারিয়ার, সেটার শেষ যাত্রাটা আবারও রোজারিওর পথেই।

সময় কখনো থেমে থাকে না, এমনকি তার জন্যও না—যার পায়ের স্পর্শে জন্ম হয়েছিল একটা ফুটবলের কবিতা। রোজারিও থেকে যে যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ডি মারিয়ার, সেটার শেষ যাত্রাটা আবারও রোজারিওর পথেই।

১৮ বছর আগে যে ছেলেটা পর্তুগালের লিসবনে বেনফিকার জার্সি গায়ে প্রথম ইউরোপের ঘ্রাণ পেয়েছিল, সেই ছেলেটাই আজ চোখের জলে বিদায় জানাল ইউরোপকে।

আনহেল ডি মারিয়া—ফুটবলের এমন এক নাম, যিনি ছিলেন আলোচনার বাইরের নায়ক, কিন্তু মাঠের প্রতিটা কোণ কিংবা শিরোপার গল্পে যার ছিল নিঃশব্দ ছায়া। ২০২৫ সালের ক্লাব বিশ্বকাপ দিয়ে শেষবার ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের মঞ্চে দেখা গেল তাকে। আর পড়ে রইলো রেখে যাওয়া একগাদা স্মৃতি।

রিয়াল মাদ্রিদের সেই “লা ডেসিমা”, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এক ঝলক, পিএসজিতে ঝলমলে খেলা, জুভেন্টাসে পরিণত হওয়া—সব শেষে আবার সেই প্রথম ভালোবাসা, বেনফিকায় ফিরে গিয়ে শেষবারের মতো ইউরোপের সূর্যের আলো গায়ে মাখা।

৭০০-এর বেশি ম্যাচ, তিন ভিন্ন দেশের ঘরোয়া লিগে চ্যাম্পিয়ন, ৩০টির বেশি ইউরোপিয়ান ট্রফি, ১টি চ্যাম্পিয়নস লিগ, এবং অগণিত ক্লাব কিংবদন্তির পাশে নিজের নাম খোদাই করে রাখা—ডি মারিয়া সংখ্যায় বড় নন, তবে অনুভবে বিশাল।

তাঁর খেলার মধ্যে ছিল না আলাদা প্রদর্শনী বা সোশ্যাল মিডিয়ার গ্ল্যামার। ছিল নিঃশব্দ কিছু পাস, ছিল পরিপূর্ণ দায়বদ্ধতা, আর ছিল দলের জন্য নিঃস্বার্থ আত্মদান। ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল, ১১ বছরের খরা কাটিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসের সেই কাঙ্ক্ষিত ‘লা ডেসিমা’—যেখানে গোল না করেও ম্যাচসেরা হয়ে প্রমাণ করেছিলেন, নায়কত্ব মানে গোল করা নয়, ম্যাচটাকে নিজের করে নেওয়া।

যে কোনো দলের জন্য ডি মারিয়া এক আশীর্বাদের নাম। সিনের পার্শচরিত্র হলেও যার শক্তিশালী অভিনয় সভ আলো কেড়ে নিতে বাধ্য হয়। চেলসির বিপক্ষে শেষ গোলটা করলেন, হেরে গিয়েও সবটা নিজের করে নিলেন। নিজে কাঁদলেন, সবাইকে কাঁদিয়ে নীরবে হয়তো বলে গেলেন, ‘এখানে আমার সময় ফুরিয়েছে।’

বয়সটা বেড়েছে, পা জোড়া আগের মতো দৌড়তে চায় না। অনেক হলো, এবার এই প্রতিযোগিতার ফুটবলটাকে তুলে রাখতে হয়। তবে চাইলেই তো আর সব ছেড়ে যাওয়া যায় না। পুরোনো অভ্যাসের নেশা কি আর চাইলেই ছাড়া যায়!

গন্তব্যটা এবার তাই যেখান থেকে শুরু হয়েছিল, গন্তব্যটা রোজারিও সেন্ট্রাল। কয়লার আগুনে পুড়ে সোনার খনি হওয়া ডি মারিয়া নিজের প্রিয় জায়গায় এসেই ফুটবল জার্নির ইতি টানতে চান।

আমরা কেবল এখন অপেক্ষা করতে পারি, একেবারে শেষ হওয়ার অপেক্ষা। ইউরোপের গতি মেশানো পুরোনো ভিডিও ঘেঁটে অনেকেই হয়তো দেখবে—ডি মারিয়ার ডান প্রান্ত দিয়ে ছুটে চলা, বাঁ পায়ের কাট ব্যাক, গোলের পর চোখ উঁচিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানানো সেই চেনা ভঙ্গিমা।

লেখক পরিচিতি

প্রত্যয় হক কাব্য

স্বপ্ন লেখার কি-বোর্ড

Share via
Copy link