গতির ঝলক দেখিয়েই ক্যারিয়ার শুরু। আর সেই গতিতেই নজরকেঁড়েছিলেন সবার। আর গতিই তাঁকে টেনে এনেছিলো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় আসর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল)। বলছিলাম দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার আনরিচ নর্কের কথা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই গতির কারণে নাম কামিয়েছেন বেশ অল্প সময়েই।
গেলো আসরের আইপিএলে সুযোগ পান দিল্লী ক্যাপিটালসের হয়ে খেলার। আর সেখানে তারই স্বদেশী কাগিসো রাবাদার সাথে জুটি বেঁধে আক্রমণ করেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের। দিল্লী ক্যাপিটালসের পেস বিভাগের মূল নেতৃত্বের ভারটাই ছিলো রাবাদা-নর্কের কাঁধে। দিল্লির পেস বিভাগের অন্যতম সেরা অস্ত্র নর্কে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাপিয়ে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ করেছেন আইপিএলেও!
গেলো আসরে আরব আমিরাতে ১৬ ম্যাচে ৮.৩৯ ইকোনমিতে ২২ উইকেট শিকার করেন নর্কে। নিজের অভিষেক আসরেই ছিলেন চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। এরপর চলতি বছর আইপিএলের প্রথম হাফে এখন পর্যন্ত ২ ম্যাচে ৮ ওভার বোলিং করে ৪ এর কম ইকোনমিতে মাত্র ৩০ রানের বিনিময়ে শিকার করেছেন চার উইকেট! এমনকি চলতি আসরে সর্বোচ্চ গতির বোলিং তালিকার প্রথম আটটিই নর্কের দখলে! নর্কের অগ্নিঝরা বোলিংয়ে দিশেহারা প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা।
চলতি আইপিএলে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৫১.৭১ গতিতে বল করেছেন নর্কে। এছাড়া ১৫১.৩৭, ১৫০.৮৩, ১৫০.২১, ১৪৯.৯৭, ১৪৯.২৯, ১৪৯.১৫ এবং ১৪৮.৭৬ গতিতেও বল করেছেন তিনি! সর্বোচ্চ গতির বোলিংয়ে একক রাজত্ব করছেন এই প্রোটিয়া পেসার। দিল্লী ক্যাপিটালসে তাঁরই সতীর্থ রাবাদার সঙ্গে জুটি গড়ে মাত দিচ্ছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের। এই আট সর্বোচ্চ গতির বলের সাতটিই করেছেন সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে।
ওই ম্যাচে ৪ ওভার বোলিং করে মাত্র ১২ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট শিকার করেন তিনি। পরের ম্যাচেই রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রানের বিনিময়ে নেন ২ উইকেট। শুধু গতিই নয়, ইকোনমির দিক থেকেও চলতি আসরের আইপিএলের দ্বিতীয় অংশে এখন পর্যন্ত সেরা ইকোনমি রেট নর্কের।
গেলো আইপিএলে নজরকাঁড়া পারফরম্যান্সের পরেও চলতি আসরের প্রথম ভাগে এক ম্যাচেও দলে সুযোগ পাননি নর্কে। করোনা পজিটিভের ভুল তথ্যে আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। এরপর দলে অ্যাভেইলেবল হওয়ার পরেও জায়গা করতে পারেননি মূল একাদশে। স্টিভ স্মিথ, ক্রিস ওকস, শিমরন হেটমায়ার, কাগিসো রাবাদা ও মার্কাস স্টোয়েনিসদের ভীড়ে প্রথম অংশের সাত ম্যাচের একটিতেও একাদশে জায়গা হয়নি নর্কের।
দ্বিতীয় অংশে আরব আমিরাতে সুযোগ পেয়েই প্রথম দুই ম্যাচেই করলেন বাজিমাৎ। আবারো গতির ঝরে ২২ গজে মাত দিচ্ছেন ব্যাটসম্যানদের। প্রথম দুই ম্যাচেই নাকানিচুবানি খাইয়েছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের। গেলো বছর আইপিএলের ফাইনাল খেলা দিল্লি ক্যাপিটালস চলতি আসরে অবস্থান করছেন পয়েন্টস টেবিলের টপে। কাগিসো রাবাদা ও এনরিচ নর্কের বোলিং দাপটে গেলো দুই আসর ধরেই বেশ দারুন ফর্মে আছে দিল্লী।
এই মরুর বুকেই আর কিছুদিন পর পর্দা উঠবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসর। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে কাগিসো রাবাদার সাথে মাঠ মাতাবেন নর্কে। সাম্প্রতিক ফর্ম, গতি আর লাইন-লেংথ বিবেচনায় নিলে বিশ্বকাপের মঞ্চে তিনি যে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের জন্য আতংকে রূপ নিবেন সেটা বলাই যায়।
তবে, আপাতত আইপিএলের বাকি ম্যাচগুলোতে নিজের সেরাটা দিয়ে বিশ্বকাপের আগে পূর্ণ প্রস্তুতিটাই নিতে চাইবেন নর্কে। অবশ্য বিশ্বকাপে রাবাদা, নর্কের বোলিং পারফরম্যান্সই অনেকটা নির্ধারণ করবে দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থান।