আচ্ছা, আমাদের দেশের এক ছেলে যে ইংল্যান্ড ক্লাব ফুটবলে কোচিং করান এই খবর কি জানতেন? অনেকেই হয়ত জানতেন। তবে দৃঢ় বিশ্বাস অধিকাংশেরই জানা ছিল না এ তথ্য। হ্যাঁ, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আনোয়ার উদ্দিন ফুটবল কোচিং করান ইংল্যান্ডের মাটিতে।
শুধু যে তিনি কোচ হিসেবেই দায়িত্বরত রয়েছেন তা নয়। তিনি খেলেছেন ইংল্যান্ডের ক্লাব পর্যায়ের ফুটবলও। তবে তিনি সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় এসেছেন ‘এমবিই’ সম্মাননা জিতে। এর পূর্ণরুপ ‘মেম্বার অব দ্য মোস্ট এক্সিলেন্ট অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার’। এই সম্মানে তিনি ভূষিত হয়েছেন ফুটবলে তাঁর অবদানের জন্য।
মূলত ব্রিটেনের রাণী এলিজাবেথের জন্মদিনে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। আনোয়ার উদ্দিন বাংলাদেশি তো বটেই প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত হিসেবে এই সম্মাননায় ভূষিত হলেন। আনোয়ার উদ্দিনের বাবা বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের। তবে আনোয়ার উদ্দিনের বেড়ে ওঠার পুরোটা সময় জুড়েই রয়েছে লন্ডনের পূর্বাঞ্চল। সেখানেই তাঁর শৈশব, কৈশোর কাটে ফুটবল খেলে।
ক্রমাগত ফুটবলের সাথের সখ্যতা বাড়তে থাকে আনোয়ারের। তিনি ছিলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলা দল ওয়েস্ট হামের যুব দলে। তাদের হয়েই ১৯৯৯ সালে তিনি জিতেছিলেন যুব এফএ কাপ। এমন কি বিজয়ী সে দলের অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। ভাবুন আমাদের এই বাংলাদেশেরই তো ছেলে তিনি। সে কিনা ইংল্যান্ডের ফুটবলের শিরোপা জেতার পথ প্রদর্শক।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আরও অনেক খেলোয়াড় খেলছেন বর্তমানে ইংল্যান্ডের ফুটবলে। তবে আনোয়ার উদ্দিন ছিলেন প্রথম লাল-সবুজের প্রতিনিধি। এরপর লেস্টার সিটির হামজা চৌধুরী অন্যতম। তিনি রীতিমত প্রিমিয়ার লিগ জেতা দলের হয়ে মাঠ নামছেন নিয়ম করে। তাঁর পাশাপাশি এই বাঙলার মুখ আরও একবার উজ্জ্বল করলেন আনোয়ার উদ্দিন। তিনি ওয়েস্ট হাম যুব অ্যাকাডেমি ছেড়ে ইংল্যান্ডের ভিন্ন স্তরের ফুটবলে অংশ নিয়েছেন।
পরবর্তীতে রক্ষণ ভাগের খেলোয়াড় আনোয়ার নিজেকে কোচিং পেশায় নিযুক্ত করেন। রপ্ত করেন ফুটবল ট্রেনিংয়ের সকল খুঁটিনাটি। এরপর থেকেই ক্লাব পর্যায়ে তিনি কোচিং করানো শুরু করেন। গুঞ্জন ছিল তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে ইংল্যান্ড সি দলের। তবে সেখানটায় হিসেবে খাতায় নিশ্চয়ই গড়মিল হয়েছিল খানিকটা।
তবে তাই বলে ফুটবলের জন্য কাজ করা তিনি থামিয়ে দেননি। তিনি নিজে একটি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেন। ‘ফ্যান্স ফর ডাইভারসিটি’। এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে তিনি সবার জন্য ফুটবল এমন একটি বার্তাই যেন পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন ইংল্যান্ডের আপামর জনতার মাঝে। ভিন্ন মতাদর্শ অথবা চিন্তা ধারার মানুষ থেকে শুরু করে শ্রেণি বিভাজন ভুলিয়ে ফুটবল উপভোগ করার বার্তা দিয়ে থাকেন আনোয়ার ও তাঁর সঙ্গীরা।
তাছাড়া আরও ভিন্নধর্মী সব সামাজিক আন্দোলনের সাথে তিনি সম্পৃক্ত রয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে বর্ণবাদ বিরোধী বেশ কিছু আন্দোলন। ফুটবল থেকে বর্ণবাদ দূর করতেও তিনি সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। এক এশিয়ান হওয়ার দরুণ নিশ্চয়ই তিনি জীবনের চলার পথে বহুবার বর্ণবাদের স্বীকার হয়েছেন। ফুটবল মাঠও নিশ্চয়ই এর বাইরে নয়।
ফুটবলের মত একটা নান্দনিক ও আবেগী খেলার সাথে বর্ণবাদ কোন অংশেই সমীচীন নয়। সে বার্তাই পুরো ইংল্যান্ডের ফুটবল পাড়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা করেন আনোয়ার উদ্দিন। ফুটবলের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত হিসেবেই তিনি এই কাজগুলো করে যাচ্ছেন। অবশেষে সে কাজে স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মানীয় পুরষ্কার জিতলেন তিনি।
ফুটবল থেকে আনোয়ার সহ মাত্র চারজন এমবিই সম্মানে ভূষিত হন। তাদের মধ্যে জেমস মিলনার, গ্যারেথ বেলদের মত তারকা ফুটবলাররাও রয়েছেন। তবে রাণীর জন্মদিনে দেওয়া এই সম্মাননায় ভূষিত হওয়া প্রচণ্ড গর্বের। তার থেকেও বড় বিষয় একজন বাংলাদেশি ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে তিনি সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি যেন এই বাংলারই প্রতিনিধি, তিনি এই বাংলারই মুখ।