কেউ মহান হয়েই জন্ম নেন, কেউবা আজীবন মহত্ত্বের সাধনা করে যান। কিন্তু ‘গ্রেট’ অরবিন্দু ডি সিলভাকে দুই ভাগের কোনটাতেই রাখা যায় না। তিনি খেয়ালী মনে চলতে চলতেই পৌঁছে গিয়েছেন কিংবদন্তির কাতারে; অনেকটা বেলুনের পিছনে ছুটতে ছুটতে শিশুর আইসক্রিম ওয়ালার কাছে পৌঁছে যাওয়ার মতই।
শ্রীলঙ্কার তৎকালীন ক্রিকেটে অরবিন্দু ডি সিলভাকে কোনভাবেই দেশসেরা বলার উপায় নেই। সনাথ জয়াসুরিয়া, অর্জুনা রানাতুঙ্গার তখন লঙ্কান ক্রিকেটের কাণ্ডারি। কিন্তু ডি সিলভা ছিলেন বিশেষ একজন, সেরা না হলেও তাই আলাদাভাবে নজর কাড়তেন এই অলরাউন্ডার।
শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপজয়ী দলের মধ্যে তাঁকেই কেবল স্বাধীন ভাবে খেলতে দিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন রানাতুঙ্গা, তিনি হয়তো জানতেন এই সিলভাকে সীমা রেখায় বাঁধা যাবে না। খেয়ালি মনের মানুষটা নিজের মত করেই খেলেছন ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ। যখন যেভাবে ইচ্ছে হয়েছে সেভাবেই খেলেছেন, সফলতাও এসে ঠেকেছে তাঁর পদতলে।
সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ, ইডেন গার্ডেনে। দর্শকদের চাপ তো আছেই, এক রানে দুই উইকেট হারিয়ে তখন চাপের মাঝে হাবুডুবু খাচ্ছিলো লঙ্কানরা। খানিক পরে তৃতীয় উইকেটেরও পতন ঘটে, কিন্তু অরবিন্দু ডি সিলভার তাতে থোড়াই কেয়ার।
অনিল কুম্বলেকে ডিপ থার্ড ম্যান অঞ্চল দিয়ে চার মেরে শুরু, এরপর ভেঙ্কটেশ প্রসাদকে ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারি – এই ডানহাতি শুধুই বাউন্ডারির ফুল ঝুরি ছিটিয়ে ছিলেন সেদিন।
শেষ পর্যন্ত ৪৭ বলে ৬৬ রান করে থেমেছিলেন এই তিনি। যার মাঝে ৫৬ রানই এসেছে বাউন্ডারি থেকে; আর তাতেই মোমেন্টাম চলে আসে শ্রীলঙ্কার দিকে। দ্বিতীয় ইনিংসে প্রতিপক্ষের এক উইকেট তুলে দলের জয়কে ত্বরান্বিত করেছিলেন ডি সিলভা।
পুরো জীবনে ভারি ব্যাট ব্যবহার না করা এই তারকা বিশ্বকাপের আগে আবদার করেছিলেন একটা ভারি ব্যাটের। বলেছিলেন শচীন মত একটু বেশি ওজনের ব্যাট দিয়ে খেলবেন, অভ্যাস না থাকায় কিছুটা আপত্তির সুর শোনা গিয়েছিল ক্রিকেট বোর্ডের কাছ থেকে। তবে ভারি ব্যাট নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন তিনি। এরপর তো ইতিহাস গড়লেন পাকিস্তানের লাহোরে।
হ্যাঁ, ফাইনালে অরবিন্দু ডি সিলভার অতিমানবীয় পারফরম্যান্স অবশ্য বেশি স্মরণীয়। শিরোপার শেষ লড়াইয়ে গ্লেন ম্যাকগ্রা, শেন ওয়ার্নদের বিপক্ষে ১০৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। বোলিংয়ে রিকি পন্টিং, মার্ক টেইলর আর ইয়ান হিলিকে সাজঘরে পাঠিয়েছেন এই অলরাউন্ডার।
কিন্তু বিশ্ব মঞ্চে লঙ্কান তারকার সেরা পারফরম্যান্স বেছে নিতে হলে প্রায় সবাই-ই সেমিফাইনাল খেলা সেই ‘৬৬’ কেই পছন্দ করবে। ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে, তাঁদেরই লক্ষাধিক দর্শকের গর্জনের বিপরীতে যেভাবে খেলেছেন তিনি সেটি কোন শিল্পী তাঁর শিল্পে ফুটিয়ে তুলতে পারবে না। যে সাহস সেদিন দেখা গিয়েছিল তাঁর ব্যাটে সেটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়েছে নিশ্চয়ই।