নামের সাথে ‘টেন্ডুলকার’ শব্দটা থাকার মানে তিনি রোজ টের পান হাড়ে হাড়ে। নেপোটিজম, বাবার নাম ভাঙিয়ে খাওয়া – এসব কথা তাঁকে রোজ শুনতে হয় স্যোশাল মিডিয়ায়। তিনি জানতেন – একদমই কিছু না করতে পারলে হাজারো ট্রল এসে তাঁর বুকে বিঁধবে তীরের মত।
অর্জুন প্রস্তুত ছিলেন। তিনি শচীন নন, তবে, তিনিও লড়াকু। বাবার মত না হোক, নিজের লড়াইটা তিনি লড়লেন। আইপিএলে নিজের আগমনী বার্তার জানান দিলেন অর্জুন টেন্ডুলকার। তিনি শচীন হতে পারবেন না, অর্জুনই হতে হবে।
অভিষেক ম্যাচে দুই ওভারের বেশি বল করার সুযোগ মেলেনি, ছিলেন উইকেট শূন্য। চারিদিকে নেপোটিজমের গুঞ্জনটা যেন বেড়েছিল সেদিনের পর। তবে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে ম্যাচ নির্ধারণী শেষ ওভারে বলটা তাঁর হাতেই তুলে দিলেন মুম্বাই অধিনায়ক রোহিত শর্মা। মাঠের বাইরের নানা গুঞ্জন এবং শেষ ওভারের চাপ যেন দুরন্ত সব ইয়র্কারেই উড়িয়ে দিলেন জুনিয়র টেন্ডুলকার।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে দুই ওভারে ১৭ রান দিয়ে উইকেট শূন্য ছিলেন। ফলে তাঁর প্রতিভা এবং সামর্থ্য নিয়ে সন্দিহান ছিলেন অনেকেই। হায়দ্রাবাদের বিপক্ষেও প্রথম দুই ওভারে প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। শেষ ওভারে যখন তাই রোহিত শর্মা ভরসা রাখলেন অর্জুনের উপর, ভ্রু কুঁচকে উঠেছিল স্টেডিয়ামভর্তি দর্শকের। শেষ ওভারে ২০ রান তাড়া করে ম্যাচ জেতা তো আজকের দিনে হরহামেশাই হয়!
অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান কি দারুণভাবেই না দিলেই অর্জুন টেন্ডুলকার। ছোটবেলা থেকেই পাহাড়সম চাপ নিয়ে বাইশ গজে পা রেখেছেন। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স তাঁকে নিলাম থেকে দলে ভেড়ানোর পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। বিখ্যাত বাবার নামের চাপ তো বটেই, শেষ ওভারে বল করাটাও কি কম চাপের!
ওভারের প্রতিটি বলেই নিজের সেরা অস্ত্র ইয়র্কারের জন্য ছুটেছেন এই বাঁ-হাতি পেসার। তাতে ঝুঁকি ছিল বটে, কিন্তু এদিন শেষ হাসি হেসেছেন অর্জুনই। তাঁর ওয়াইড ইয়র্কারের কোনো জবাব ছিল না আব্দুল সামাদ, ভুবনেশ্বর কুমারদের কাছে। চতুর্থ বলে তো আইপিএল ক্যারিয়ারে নিজের প্রথম উইকেট শিকারের পাশাপাশি দলকে এনে দিয়েছেন ১৪ রানের জয়। মাঝের দুটো লো ফুলটস বাদ দিলে বিশ্বমানের ডেথ বোলিংই করেছেন এই তারকা পেসার।
তাঁর রান আপ কিংবা বোলিং অ্যাকশন, দুটো নিয়েই সমালোচনা বিস্তর। বলের গতিও ঘুরে ফিরে থাকে ১৩০-১৩৫ কিমির মাঝেই। কিন্তু অর্জুন নিজের সীমাবদ্ধতা জানতেন, ফলে অতিরিক্ত কিছুই করতে যাননি। সঠিক লাইন-লেংথে বল রেখেছেন, ব্যাটারদের জায়গা দেননি মেরে খেলার। তাতেই বাজিমাত ২৩ বছর বয়সী এই তরুণের।
মুম্বাইয়ের প্রথম পছন্দের বোলার তিনি নন। জাসপ্রিত বুমরাহ কিংবা জোফ্রা আর্চাররা ফিরলেই হয়তো বেঞ্চে বসতে হবে তাঁকে। কিন্তু সীমিত সুযোগেই যেন অর্জুন টেন্ডুলকার জানান দিলেন নিজের আগমণের। পাহড়সম চাপ নিয়ে শেষ ওভারে টানা ইয়র্কার দিয়ে যাওয়া সাধারণ কারো কাজ নয় মোটেই। এদিনের ফর্মটা ধরে রাখতে পারলে অর্জুনের সমালোচক থেকে ভক্ত বনে যাওয়া সমর্থকের অভাব হবে না নিশ্চিতভাবেই।
বিখ্যাত বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করা মোটেই সহজ কিছু নয়। স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের ছেলে তো নিজের নামটাই বদলে ফেলেছিলেন। রোহান গাভাস্কার, লিয়াম বোথাম কিংবা মালি রিচার্ডসরা হাল ছেড়ে দিয়েছেন বহু আগেই। তবে শেষ ওভারের চাপটা জয় করে অর্জুন বুঝিয়ে দিলেন হারিয়ে যেতে আসেননি তিনি। বাবার পরিচয় নয়, বরং বাইশ গজে তিনি রাজত্ব করতে চান আপন মহিমায়।