শ্রীলঙ্কলার কলম্বো ওভালে চির অমলিন আশরাফুল-সাকিব

শ্রীলঙ্কার পি সারা ওভালের অনর্স বোর্ডে নাম আছে বহু মহারথীদের। সেসব নামের ভীরে রয়েছেন দু'জন বাংলাদেশি ক্রিকেটারও।

শ্রীলঙ্কার কলম্বো ওভাল, এখন অবশ্য পরিচিত পি সারা ওভাল নামে। আন্তর্জাতিক এই ভেন্যুতে হয়েছে বেশ কয়েকটি ম্যাচ। স্বাভাবিকভাবেই তাই শতক হাঁকানো কিংবা পাঁচ উইকেট পাওয়া ক্রিকেটারদের নাম তোলা হয়েছে স্টেডিয়ামে থাকা ‘অনর্স বোর্ড’-এ। সেই বোর্ডে নাম আছে বহু মহারথীদের নাম। সেসব নামের ভীরে রয়েছে দু’জন বাংলাদেশি ক্রিকেটারও। বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুই ‘পোস্টার বয়’ একজন মোহাম্মদ আশরাফুল, আরেকজন সাকিব আল হাসান।

মোহাম্মদ আশরাফুল এই পি সারা ওভালে টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন মোট দুইবার। এর মধ্যে ২০০৭ সালের টেস্ট ম্যাচটি তাকে স্থান করে দিয়েছে কলম্বো ওভালের স্মৃতির পাতায়। সেই ম্যাচে তিনি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। আশরাফুলের টেস্ট ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরি আছে মোট ছয়টি। এর মধ্যে একটি এসেছে শ্রীলঙ্কার এই স্টেডিয়ামে। কিন্তু আর বাকি পাঁচটা সেঞ্চুরির চাইতে এখানে হাঁকানো সেঞ্চুরি হতেই পারে খানিকটা স্পেশাল।

কেননা সেই টেস্ট ম্যাচটিতে প্রথম ইনিংসে আশরাফুল শূন্যরানে ফিরেছিলেন প্যাভিলিয়নে। তিনি ছাড়াও শাহরিয়ার নাফিস ও মাশরাফি বিন মর্তুজা ফিরেছিলেন খালি হাতে। এমনকি রানের সংখ্যাকে দুই অংকের ঘরে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন স্রেফ রাজিন সালেহ। মাত্র ৬২ রানেই অলআউট হয় বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কা স্কোরবোর্ডে তুলে ফেলে ৪৫১ রান। বাংলাদেশের সামনে তখন ইনিংস ব্যবধানে হারার শঙ্কা। সেই শঙ্কার মেঘ সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন আশরাফুল। তার সেই ইচ্ছে শক্তিতে তিনি বলীয়ান ছিলেন বাংলাদেশের শেষ ব্যাটার আউট হওয়ার পরও।

সাথে লম্বা সময়ের জন্যে মুশফিকুর রহিমকে পেয়েছিলেন। দুই জনে মিলে ১৯১ রানে জুটি গড়েন। তবে তাতে কাজের কাজটি কিছু হয়নি শেষ অবধি। ম্যাচ হেরে বাংলাদেশ ছেড়েছিল পি সারা ওভাল। ১২৯ রান অপরাজিত ছিলেন আশরাফুল।

আশরাফুলের সেঞ্চুরি বৃথা গেলেও সাকিব আল হাসানের সেঞ্চুরি বৃথা যায়নি। তার কল্যাণে প্রায় এক দশক পর পি সারা ওভালে জয়ের দেখা পেয়েছিল বাংলাদেশ দল। ২০১৭ সালের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত হওয়া সেবারের টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি আয়োজিত হয়েছিল এই পি সারা ওভালে।

প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কা অলআউট হয় ৩৮৮ রানে। সে সংগ্রহ টপকে যাওয়ার মিশনে নামে বাংলাদেশ। সারথি সেবার সাকিব আল হাসান। ১১৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। সেই ইনিংসের কল্যাণে বাংলাদেশ স্কোরবর্ডে তোলে ৪৬৭ রান। তাকে অবশ্য সহয়তা করেছেন বাকিরাও। সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিমের পর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও অর্ধশত করেছিলেন সেই টেস্ট ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে।

এরপর সাকিব আল হাসান চার উইকেট শিকার করে স্বল্প লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই আটকে ফেলতে সহয়তা করেছিলেন। টেস্টের প্রথম ইনিংসেও তার ঝুলিতে ছিল দুইটি উইকেট। ১৯১ রানের টার্গেট বাংলাদেশ উৎরে যায় চার উইকেট বাকি থাকতে। সাকিবের কল্যাণে পি সারা ওভালের দশ বছর আগের আক্ষেপ ঘোচানো পেরেছিল বাংলাদেশ দল। এমনকি সেটিই ছিল এই ভেন্যুতে বাংলাদেশের চার টেস্ট ম্যাচের মধ্যে একমাত্র জয়।

তবে সেই ম্যাচে ঘটেছিল এক মজার ঘটনা। ব্যাটে বলে দারুণ পারফরম করা সত্ত্বেও সাকিব আল হাসানের কপালে জোটেনি ম্যাচ সেরার পুরষ্কার। সেই ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন তামিম ইকবাল খান। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ৪৯ রান করেছিলেন তামিম। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে তার ৮২ রানের কল্যাণেই মূলত টাইগারদের জয়ের পথটা হয়েছিল পরিষ্কার।

সেকারণেই ম্যাচ সেরার পুরষ্কারটা তামিমের হাতেই উঠেছিল। যদিও সেই টেস্ট সিরিজের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে সাকিবই নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেসব ছাপিয়ে বিদেশের কোন এক রেকর্ড বোর্ডে বাংলাদেশি দুইজন ক্রিকেটারের নাম নিঃসন্দেহে গর্বের।

Share via
Copy link