যে রেকর্ডে তুলনা অর্থহীন

মোহালি টেস্ট এক অবিস্মরণীয় টেস্ট হয়ে রইলো। অন্তত ভারতের টেস্ট ক্রিকেটের প্রেক্ষাপট থেকে। রবীন্দ্র জাদেজার ১৭৫ রানে অপরাজিত এক ইনিংস। সেই সাথে ম্যাচে নয় উইকেট। এই দুই রেকর্ডের পাশাপাশি এই মোহালি টেস্ট আরো একটি রেকর্ডের সাক্ষী হয়ে রইলো এক ইনিংসে টানা তিনটি শতকের জুঁটি গড়া ষষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে নিজের নামটি লিখিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা।

না এখানেই শেষ না। মোহালি টেস্ট আরো একটি রেকর্ডের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছে। এই টেস্টেই ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার কপিল দেবকে ছাড়িয়ে গেছেন আরেক কিংবদন্তি রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ভারতের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি এখন অশ্বিন। একটা দীর্ঘ সময় যে জায়গাটা ধরে রেখছিলেন বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক কপিল দেব। তবে তাই বলে তাঁকে কপিল দেবের সাথে তুলনা করা চলে না।

২০২১ সালটা অশ্বিনের জন্যে কেটেছে এক স্বপ্নের মতো। এই পুরো একটা বছরে তিনি খেলেছেন মোটে নয়টি টেস্ট। তবে সে নয় টেস্টেই ক্যারিয়ারের উজ্জ্বলতম সময় হিসেবে ধরে নিতে পারেন তিনি। ২০২১ সালে তাঁর ঝুলিতে যুক্ত হয়েছিলো ৫৪টি টেস্ট উইকেট। লাল বলের ঘূর্ণিতে তিনি তিনবার এক ইনিংসে নিয়েছেন পাঁচ কিংবা তাঁর বেশি উইকেট। এই পরিসংখ্যানটাই তাঁকে খানিকটা এগিয়ে দিয়েছে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হওয়ার পথে।

বর্তমানে তাঁর ঝুলিতে উইকেট সংখ্যা ৪৩৬। মাত্র ৮৫ ম্যাচে এমন কীর্তি গড়েছেন তিনি। ২৪.২৬ তাঁর বোলিং গড়। নিঃসন্দেহে এই পরিসংখ্যানে বেশ পরিবর্তন আসবে সময়ের সাথে। কপিল দেব তাঁর ক্যারিয়ারে ৪৩৫টি উইকেট নিতে সময় নিয়েছেন ১৩১টি ম্যাচ। এত দীর্ঘ সময় ব্যয়ে হয়ত অনেকে বলে দিতে পারেন যে অশ্বিন তবে সেরা। কিন্তু আসলেই কি তাই। ভারতের ক্রিকেটের ইতিহাসে কি অশ্বিন কপিল দেবের থেকেও সেরা একজন বোলার?

ভিন্ন মত থাকতে পারে অবশ্যই। তবে একটু পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে হয়ত কপিল দেব আর অশ্বিনের তুলনা করা চলে না । কপিল দেব ক্রিকেট খেলেছেন গত শতাব্দীর ৭০-৯০ দশকে। সে সময়ে ভারতের মতো এক দলে পেস বোলার হওয়ার স্বপ্ন দেখাটাও ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ। এমন এক সময়ে কপিল দেব বেছে নিয়েছিলেন পেস বোলিং-কে। তাছাড়া অশ্বিন একজন স্পিনার। উপমহাদেশের উইকেট চিরকাল স্পিনারদের পক্ষে কথা বলেছে, তাঁদেরকে সহয়তা করেছে।

ব্যতিক্রম ছিলোনা কপিল দেবে আমলেও। সে সময়ে স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পেতেন পিচ থেকে। আবার দল হিসেবেও ততটা শক্তিশালী কোন দল ছিলো না। সে সময়ের কপিল দেব ছিলেন ভারতের অন্যতম সেরা পারফর্মারদের একজন। শুধু বল হাতে না ব্যাট হাতেও। তিনি দারুণ সব ইনিংস খেলেছেন সে আমলেই। তাছাড়া প্রযুক্তির এত উন্নতির পরও ভারতের হয়ে ১০০টি টেস্ট খেলা পেস বোলারদের সংখ্যা মোটে দুই।

যদি কিছু মুহূর্তের জন্যে কপিল দেবকে একজন পেস বোলার বিবেচনা করে নেওয়া যায় তবে তাঁর মানের এবং ধারাবাহিকতার একজন পেসার এখন অবধি তৈরি করতে পারেনি ভারত। দ্বিতীয় পেসার হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলা ইশান্ত শর্মার উইকেট সংখ্যা কেবল ৩১১। কপিল দেব থেকে এখনও বহু পিছিয়ে রয়েছেন ইশান্ত। আবার এ কথাও সত্য ব্যাটার কপিল দেবও ভারতকে বহু ম্যাচ জিতিয়েছেন।

৩১.০৫ ব্যাটিং গড় তাঁর। অন্যদিকে যদি আবার অশ্বিনকে ব্যাটার হিসেবে বিবেচনা করা হয় তবে তাঁর গড়ও কপিল দেবের থেকে খুব বেশি দূরত্বে নেই। ২৭.১৪ গড় অশ্বিনের। সুতরাং বিরুপ পরিস্থিতি সামলেও কপিল দেব ভারতের হয়ে পারফর্ম করে গেছেন। তাঁর সমপর্যায় তো দূরে থাক তাঁর কাছাকাছি মানের একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয়েছে ভারত।

অতএব শুধুমাত্র উইকেট বিচারে কে ভারতের টেস্ট ইতিহাসের সেরা বোলার সে আলোচনা করা অর্থহীন। তাঁর দুইজনই নিজ নিজ জায়গায় অন্যতম সেরা। আর কপিল দেব ও অশ্বিনের মধ্যকার তুলনাও অযৌক্তিক। তবে এক আলোচনায় তুলনার বিষয় হতে পারেন অশ্বিন। অবশ্য সে আলোচনার উদ্ভব হবে যদি অনিল কুম্বলের উইকেট শিকারের রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলতে পারেন অশ্বিন। তবে রাস্তাটা বহুদূর। বয়স আর ফিটনেস মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে নিশ্চয়ই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link