তামিম ইকবাল অবসর নিলেন, অবসর ভেঙে ফিরলেন। বৈপরীত্বে পূর্ণ এ দুই ঘটনার ব্যবধানটা মাত্র ১ দিনের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে আবার লাল-সবুজ জার্সি গায়ে বাইশ গজে দেখা যাবে বাঁহাতি এ ওপেনারকে। অবসর ভেঙে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার ঘটনা নতুন নয়। তেমনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ফেরার ঘটনাটা নতুন কিছু নয়।
তামিম ইকবালের আগেও আরো দুই ক্রিকেটার অবসর নিয়েও পরবর্তীতে অবসর ভেঙে বাইশ গজে ফিরেছিলেন। আর এখানেই মাঠের বাইরের ঘটনায় শেখ হাসিনার নাম জড়িয়েছে দুই সাবেক পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী জেনারেল জিয়া-উল-হক ও বেনজির ভুট্টোর সাথে।
পাকিস্তানের ১৯৯২ বিশ্বকাপজয়ী দলটার অধিনায়ক ছিলেন ইমরান খান। তবে ঐ বিশ্বকাপের পাঁচ বছর আগে ১৯৮৭ সালে অবসর নিয়েছিলেন বিশ্বকাপজয়ী এ নেতা। মূলত ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে বিশ্বকাপের পরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন ইমরান।
তবে ইমরানের সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি পাকিস্তানের জনগণ। সে সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জেনারেল জিয়াউল হক। ইমরানের অবসর ঘোষণার পরই তিনি তাঁকে আবারো বাইশ গজে ফিরতে অনুরোধ করেন।
দেশ প্রধানের সেই অনুরোধ ফেলতে পারেননি ইমরান। তাই ১৯৮৮ সালের জানুয়ারিতে অবসর ভেঙে আবারো মাঠে ফেরেন তিনি। এরপর তো ইতিহাস। আগের বিশ্বকাপের ব্যর্থতা ভুলে ১৯৯২ বিশ্বকাপে পাকিস্তান শিরোপা জেতে ইমরান খানের নেতৃত্বে।
ক্রিকেটের ‘বড়ে মিয়া’ খ্যাত জাভেদ মিয়াঁদাদও একবার দিয়েছিলেন অবসরের ঘোষণা। তবে ফিরে এসেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভূট্টোর অনুরোধে। ১৯৯২ এর বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রান এসেছিল জাভেদ মিয়াঁদাদের ব্যাট থেকেই। নামে পাশে ঐ টুর্নামেন্টে যোগ করেছিলেন ৬ টা ফিফটি।
তবে পিঠের ইনজুরির কারণে ঐ বিশ্বকাপের পরই টেস্টকে বিদায় বলেন তিনি। ওয়ানডেটা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে শরীর আর সাই দিচ্ছিল না। তাই ১৯৯৬ বিশ্বকাপের আগেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেন তিনি। কিন্তু সে যাত্রায় বাঁধ সাধলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো।
তাঁর অনুরোধে দশ দিনের মাথায় অবসর ভেঙে ফিরে আসলেন জাভেদ মিয়াঁদাদ। আর এসেই গড়লেন অনন্য এক ইতিহাস। ১৯৯৬ বিশ্বকাপ খেলার মধ্য দিয়ে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ছয় বিশ্বকাপে খেলার কীর্তি গড়েন জাভেদ মিয়াঁদাদ।
ইমরান খান অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন। এরপর বীরের বেশে বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন। জাভেদ মিয়াঁদাদ অবসর ভেঙে ফিরে নাম লিখিয়েছিলেন অনন্য এক রেকর্ডে। প্রধানমন্ত্রীর ডাকে তামিম ইকবালও ফিরছেন।
তামিম কি পারবেন একজন ইমরান খান কিংবা জাভেদ মিয়াঁদাদের মতো গল্প লিখতে? যে গল্পে ব্যক্তিগত অর্জনের সিঁড়ি বেঁয়ে থাকবে দল হিসেবে চূড়ায় যাওয়ার গল্প। তামিম পারবেন কি পারবেন না, তা আপাতত ‘অপেক্ষা’ নামক শব্দেই চোখ রাখা যাক।