অবশেষে শাপমোচন, সেই ১৯৯৩ সালে ‘বাতিগোল’ খ্যাত গ্যাব্রিয়েল বাতিস্ততার নৈপুণ্যে কোপার শিরোপা ঘরে তুলেছিল আর্জেন্টিনা। টানা সাত ফাইনাল হারার পর অবশেষে ফাঁড়া কাটালো তারা। ডি মারিয়ার একমাত্র গোলে ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোপার শিরোপা জিতলো লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।
লিওনেল মেসির অভিষেকের পর থেকেই ফাইনাল হেরে যাচ্ছিল আলবিসেলেস্তেরা। পেলে-ম্যারাডোনাদের পাশে বসতে জাদুকরের প্রয়োজন ছিল কেবল জাতীয় দলের হয়ে একটি শিরোপা। দলের অংশ হয়েই দেখেছিলেন ২০০৭ কোপার ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে অসহায় আত্নসমর্পণ।
এরপর অতিরিক্ত সময়ে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছেন মারিও গোৎজে। চিলির সোনালি প্রজন্মের কাছে হেরেছেন টানা দুবার। দারুণ ফুটবল খেলে ফাইনালে উঠলেও বারবার হেরে যাচ্ছিলেন ফাইনালেই। অবশেষে কাটালেন গেঁরো, এবারের টুর্নামেন্টেও দলকে টেনেছেন একাই।
এমনকি আসসের সর্বোচ্চ গোল আর অ্যাসিস্ট দুটোই তার দখলে। ভালো খেলার সুবাদেই কিনা ফুটবল বিধাতা এবার আর উপেক্ষা করতে পারেননি, জাতীয় দলের হয়ে আক্ষেপ মিটলো তার। জাতীয় দলের হয়ে শিরোপার আক্ষেপ কি কেবল মেসির। ডি মারিয়ার কি কোনো অংশে কম!
আর্জেন্টিনা আর ডি মারিয়ার দুর্ভাগ্য যেন এগিয়েছে সমান্তরালে। আগের তিনটি ফাইনালের একটিতেও ছিলেন না এই উইংগার। সবগুলো হারই তাকে দেখতে হয়েছে বেঞ্চে বসে। ২০১৪ বিশ্বকাপে অনবদ্য খেলে ফাইনালের ঠিক আগমুহূর্তে ইনজুরিতে পড়ে যান। ব্যথানাশক ইঞ্জেকশন নিয়ে খেলতে চাইলেও ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের বিরোধীতায় খেলতে পারেননি।
সমর্থকরা এখনো বিশ্বাস করেন সেদিন ডি মারিয়া থাকলে ফলাফল অন্যরকম হলেও পারতো। পরের দুটো টাইব্রেকার হারও দেখতে হয়েছে বেঞ্চে বসে। এবারো পুরো টুর্নামেন্টে তাকে বদলি হিসেবেই ব্যবহার করেছেন কোচ স্কালোনি। এদিনই প্রথমাবারের মতো নামিয়েছিলেন প্রথম একাদশে। তাতেই বাজিমাত, কোচের আশার প্রতিদান দিয়ে শিরোপা এনে দিয়েছেন দলকে।
কাটিয়েছেন মেসির শিরোপা খরা, এনে দিয়েছেন অমরত্ব। তার পাশাপাশি পুরো টুর্নামেন্টেই দারুণ খেলেছেন রদ্রিগো ডি পল। দারুণ খেলার সুবাদেই কয়েকদিন আগেই তাঁকে দলে ভিড়িয়েছে স্প্যানিশ জায়ান্ট অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। দারুণ ফুটবল খেলে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন ৩৫ মিলিয়ন তার পিছনে ব্যয় করে ভুল করেনি তারা।
স্প্যানিশদের পায়ের জাদুতে মুগ্ধ করার আগে নিজেকে জানান দিয়ে রাখলেন এ টুর্নামেন্টেই। ফাইনালের ডি মারিয়ার গোলের উৎস তিনিই, ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডারের মাঝে দিয়ে যেভাবে পাসটা বাড়ালেন সেটা চোখে লেগে থাকার মতো।
নেইমার আরো একবার হয়ে রইলেন ট্র্যাজিক হিরো। গতবারের কোপাজয়ী ব্রাজিল দলে ছিলেন না ইনজুরির জন্য। তাকে ছাড়াই দলকে জিতিয়েছিলেন হেসুস-এভারটনরা। এবার নেইমার ফেরাতে আরো শক্তিশালী ভাবা হচ্ছিল ব্রাজিলকে। কিন্তু পুরো আসরজুড়ে ভালো খেললেও হতাশ করলেন ফাইনালে, ডুবালেন দলকে।
নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘরের মাঠে শিরোপা হারালো সেলেসাওরা। আর তাতে খলনায়ক হয়েই রইলেন এই তারকা, ম্যাচশেষে ভেঙে পড়েন কান্নায়।
লিওনেল মেসির অমরত্বের পথে একটাই বাঁধা ছিল, সেটা জাতীয় দলের হয়ে শিরোপা জয়। সেটাও জিতে সমালোচকদের সব জবাব দিয়ে দিলেন ফুটবল জাদুকর।
কাঁদলেন নেইমারও। আবার জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানালেন লিওনেল মেসিকেও, প্রিয় বন্ধুকে। এটাই তো ফুটবলের সৌন্দর্য্য, এখানেই তো আলাদা ফুটবল।