আবেশিত আইপিএল

জীবনের নিষ্ঠুর রূপ দেখেছিলেন ছোটবেলাতেই। ক্রিকেট ক্যারিয়ারেও নানা উত্থান-পতন এসেছে। কিন্তু সীমিত সামর্থ্য নিয়েও নিজের সেরাটা দিয়ে লড়ে গেছেন। আইপিএল ভাগ্য বদলে দিয়েছে তাঁর, নিয়ে এসেছে পাদপ্রদীপের আলোয়। তিনি আবেশ খান, সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতের ভবিষ্যৎ তারকা। 

ইন্দোরের রাস্তায় বন্ধুদের সাথে খেলতে খেলতেই ক্রিকেটের প্রেমে পড়া আবেশের। মধ্যবিত্ত বাবা-মা চাইতেন ছেলে পড়াশোনায় মনোযোগী হোক, কিন্তু আবেশের সব আকর্ষণ যেন বাইশ গজে। এক পর্যায়ে কোচ আমানদ্বীপ পাঠানিয়ার অনুরোধে রাজি হলেন বাবা, স্বপ্নের দুয়ারে যেন দু’পা এগিয়ে গেলেন কিশোর আবেশ। 

এরপর দ্রুত এগিয়ে চলা, রাজ্যের বয়সভিত্তিক দলের ক্যাম্পে জায়গা মিলল। আবেশের স্বপ্নালু চোখে তখন জাতীয় দলের জায়গা পাবার বাসনা। কিন্তু কৈশোর পেরোতেই পরিবারে ধাক্কা, বাবার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেল। হাল ছাড়লেন না আবেশ, বাস ছেড়ে সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেলে প্রতিদিন পাড়ি দিতেন ত্রিশ কিমি রাস্তা। 

পরিশ্রমের সুফল মিলতে লাগল দ্রুতই, ছোটদের বিশ্বকাপগামী দলে জায়গা করে নিলেন দ্রুতই। বাংলাদেশের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজে মাত্র চার দিয়ে শিকার করলেন চার উইকেট। যদিও বিশ্বকাপে মাত্র দুই ম্যাচেই মাঠে নামার সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁর। 

বিশ্বকাপ শেষেই যেন মুদ্রার উল্টোপিঠ দেখতে হলো আবেশের। সতীর্থ ঈশান কিষাণ, ঋষভ পান্ত, সরফরাজ খানদের নিয়ে আইপিএল নিলামে যখন অর্থের ছড়াছড়ি, সেখানে আভেশের দিকে যেন কারোরই নজর নেই। উল্টো তাঁকে আবারো পাঠিয়ে দেয়া হলো অনুর্ধব-১৯ দলে। 

কঠোর পরিশ্রমে নিজের বোলিংয়ে উন্নতি আনলেন আবেশ, আয়ত্ত্ব করলেন ইয়র্কারের রহস্য। পরের বিশ্বকাপটা পুরোটা আভেশময়, ছয় ম্যাচে শিকার করলেন ১২ উইকেট। যদিও ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে সন্তুষ্ট থাকতে হলো রানার্স আপ হয়েই। 

এরপরই আইপিএলে তাঁকে দলে ভেড়ায় দিল্লী ক্যাপিটালস। প্রথম মৌসুমে সবাই ভেবেছিলেন এনরিচ নর্কে, কাগিসো রাবাদা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন কিংবা আক্সার প্যাটেলদের ভিড়ে একাদশে সুযোগ মিলবে না তাঁর। কিন্তু ক্রমেই আপন আলোয় উদ্ভাসিত হতে শুরু করেন এই তারকা, বনে যান দিল্লির প্রধান উইকেট শিকারি। ডেথ ওভারে তাঁর দুধর্ষ ইয়র্কারের জবাব ছিল না প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের কাছে। ১৬ ম্যাচে মাত্র ১৮ গড়ে শিকার করেন ২৪ উইকেট। 

একসময় আইপিএলে তাঁকে কিনতে আগ্রহ দেখায়নি কোনো দলই। অথচ ২০২২ আইপিএল নিলামে তাঁকে দলে ভেড়াতে রীতিমতো হুড়োহুড়ি লেগে গিয়েছিল দলগুলোর মাঝে, শেষ পর্যন্ত ১০.৭৫ কোটির বিশাল অংকের বিনিময়ে তাঁকে দলে ভেড়ায় লখনৌ সুপার জায়ান্টস। প্রথম মৌসুমেই দলটির আস্থার প্রতিদান দেন দারুণ বল করে। ফর্মটা টেনে এনেছেন এবারের মৌসুমেও, রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচেই মাত্র ২৫ রানে তুলে নেন তিন উইকেট। 

ব্যাটিং ব্যর্থতায় এদিন মাত্র ১৫৪ রানেই গুটিয়ে যায় লখনৌ। এবারের আইপিএলে এত কম রান লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে জিততে পারেনি কোনো দলই। কিন্তু বল হাতেই আভেশ একাই যেন এই লক্ষ্যকেই পাহাড়সম বানিয়ে তোলেন প্রতিপক্ষের জন্য। শিমরন হেটমায়ার, দেবদূত পাড্ডিকাল কিংবা ধুরব জুরলকে সাজঘরে পাঠিয়ে একাই গুঁড়িয়ে দেন রাজস্থানের মিডল অর্ডার। তাঁর মাপা লাইন লেংথের কোনো জবাব ছিল না সঞ্জু স্যামসনের দলের কাছে। 

ইতোমধ্যেই জাতীয় দলে অভিষেক ঘটলেও থিতু হতে পারেননি আভেশ। তবে আইপিএলের বাকি সময়টা ফর্ম রাখতে পারলে সেই পথটাও খুব দূরের নয় এই পেসারের জন্য।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link