বাবর আজম ও ফ্যাভ ফোর/ফাইভ বিতর্ক

বিগত কয়েকদিনে বাবর আজমকে নিয়ে বেশ শোরগোল হয়েছে। বিশেষ করে ফ্যাভ ফোরে তার সংযুক্তি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে।

আলোচনার সুযোগ অবশ্য বাবর করে দিয়েছেন নিজের পারফরম্যান্স দিয়েই। বরাবরই লিমিটেড ওভারে অসাধারন খেলা বাবর বেশ কিছুদিন ধরে নিয়মিত রান করেছেন টেস্ট ক্রিকেটেও! অস্ট্রেলিয়া সফরে ধারাবাহিকভাবে রান করে আলোচনার আগুনে ঘি ঢেলেছেন! পারদ আরও চড়েছে যখন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে রান পেয়ে যান অনায়াস ভঙ্গিতে!

প্রশ্ন উঠে যায়, বাবর কি তাহলে ফ্যাভ ফোর/ফাইভে জয়েন করার জন্য তৈরি?

ইংলিশ সয়েলে লাল ডিউকের বিপরীতে রান করাটা আলাদা মর্যাদা বহন করে। ব্যাটসম্যানের অমরত্ব নিশ্চিত করার অন্যতম পরিক্ষার জায়গা এটা। ভিরাট কোহলি যখন বিশ্বের সব জায়গায় রানের পাহাড়ে চড়েছিলেন, তখনও বিশেষজ্ঞরা খুঁত হিসেবে সামনে এনেছিলেন ইংলিশ সয়েলের ব্যর্থতা! বিরাট সেই প্রশ্নকে মাটিচাপা দিয়েছিলেন পরের ইংলিশ সফরে।

বল এখানে ফনা তোলা সাপের মতই ব্যাটের পাশ কাটিয়ে কিপারের গ্লাভসে জমা হয়। সারি সারি ফিল্ডার স্লিপ কর্ডনে অপেক্ষা করে ব্যাটে হালকা চুমু খেয়ে ঘরে ফিরে আসা বলকে হাতের তালুতে আলিঙ্গন করাতে! সুইং, জিপ, রিভার্সের পসরা সাজিয়ে বোলাররা এখানে শিল্পের প্রদর্শন দেখায় অবলীলায়! এখানে টেস্ট ক্রিকেট পূর্নতা পায়, এখানে এভারেজ ব্যাটসম্যানও দৃঢ়তার আগুনে পুড়ে খাঁটি হয়! এখানে গুড হয়ে ওঠে গ্রেট, গ্রেট হয়ে যায় এভারেজ!

তাহলে কেমন গেল বাবর আজমের ইংলিশ সফরের টেস্ট? প্রথম ইনিংস বাদ দিলে সে এখন পর্যন্ত ব্যর্থ! সুযোগ এখনও একটা রয়েছে, তবুও কি সেটা যথেষ্ট?

ক্যারিয়ারে মাত্র সামান্য কয়েকটা টেস্ট খেলেই ফ্যাভ ফোরে তাঁর সংযুক্তি নিয়ে কথা হয়! কৃতিত্ব অবশ্যই তার, কারণ সে বাধ্য করেছে! হয়ত একদিন সে অবশ্যই বিরাট কোহলি, স্টিভেন স্মিথ, কেন উইলিয়ামসন, জো রুটদের কাতারে আসার যোগ্যতাকে পার্ফরম্যান্স দিয়ে জাস্টিফাই করবে। তবে সেটা এখনই নয়! বাবরকে অপেক্ষা করতে হবে, প্রমাণের বেশ কিছু জায়গা এখনও বাকি!

ভুলে গেলে চলবে না, রুট, স্মিথ, কোহলি, উইলিয়ামসনরা গণ্ডায় গণ্ডায় টেস্ট খেলেছেন, নিজেদের প্রমাণ করেছেন বছরের পর বছর, সেটেল হয়েছেন ফ্যাভ ফোরের আসনে! একদিন বা এক সিরিজের রান দিয়ে নয়, সিরিজের পর সিরিজ, বছরের পর বছর শিরোনাম হয়েছেন খেলার পাতায়! তাইতো, রুটের ধারাবাহিক কিছু ব্যর্থতাতেও আসনচ্যুতি হয় না, কারণ রুট নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বহু সাধনায়!

বাবরকেও এই ধাপগুলো পার করতে হবে। তার ক্লাস, প্যাশন এবং হার্ডওয়ার্ক নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। সন্দেহ নেই তাঁর ফ্যাভ ফাইভে প্রবেশ নিয়েও! তবে সময়কেও সুযোগ দিতে হবে ক্ষন নির্ধারনের, বাবরকেও অপেক্ষা করতে হবে, সেই সাথে অপেক্ষা করতে হবে আমাদেরও!

অপেক্ষার এই প্রহরই কোন বাবর ভক্তের ক্রিকেট দেখার কারন হয়ে রয়ে যাবে, অনিশ্চয়তার এই পেণ্ডুলাম দুলবে ক্রিকেট ঘড়ির কাটা হয়ে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link