খেলাধুলার জগৎটাই এমন। এখানে প্রতিটা দিন সমান যায় না। খারাপ দিন আসে। ভাল দিন আসে। কখনও কখনও এমন ভাল দিনও আসে – যেদিন বিগত দিনের সকল গ্লানি মুছে যায়।
এবার মূল কথায় আসি। একটা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই মুহূর্তে সবচেয়ে সমালোচিত ব্যাটিং জুটি কোনটি? উত্তরে অবশ্যই বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের নাম আসবে।
আবার ঘুরিয়ে যদি, প্রশ্নটা এভাবে করা হয় – এই মুহূর্তে টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে আলোচিত বা প্রশংসিত ব্যাটিং জুটি কোনটি। সেখানেও আসবে বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের নাম।,
সর্বশেষ এশিয়া কাপে পাকিস্তানি এই দুই ব্যাটারের ব্যাটিংয়ের ধরণ যথেষ্ট সমালোচিত হয়েছে। এর মধ্যে বাবর আজম রানই পাচ্ছিলেন না। অন্যদিকে, রিজওয়ান রান পেলেও মন ভরাতে পারছিলেন না। পাকিস্তানকে জেতাতে পারছিলেন না। স্ট্রাইক রেট ইস্যুতে দু’জনের ব্যাটিংই হচ্ছিল সমালোচিত।
তবে, এবার যেন সকল সমালোচনার জবাব এক ম্যাচেই দিয়ে ফেললেন দুই ব্যাটার। করাচিতে সফরকারী ইংল্যান্ড দল ২০০ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল পাকিস্তানের সামনে। সেই লক্ষ্যে তিন বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছালো পাকিস্তান দল। সৌজন্যে সেই দুই আলোচিত ও সমালোচিত ব্যাটার – বাবর ও রিজওয়ান। ২০৩ রানের অবিচ্ছেদ্য এক জুটি গড়ে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে জিতিয়েছেন তাঁরা।
৬৬ বলে ১১০ রান করেছেন বাবর। অন্যদিকে রিজওয়ান ৫১ বলে করেছেন ৮৮ রান। দু’জনে মিলে হাকিয়েছেন নয়টি ছক্কা ও ১৬ টি চার। বাবরের স্ট্রাইক রেট ১৬৬.৬৭ আর রিজওয়ানের ১৭২.৫৫। মানে জবাবটা এর চেয়ে ভাল ভাবে দেওয়া কোনো ভাবেই সম্ভব ছিল না। বিরক্তিকর থেকে হঠাৎই তাঁরা চিত্তাকর্ষক। পৃথিবীর রংটা মুহূর্তের মধ্যেই পাল্টে গেল তাঁদের।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের এটা দ্বিতীয়বারের মত ১০ উইকেটের জয় । প্রথমটি ছিলো গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে, ভারতের বিপক্ষে। সেবারও শেস পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন বাব ও রিজওয়ান। এবারও ঠিক সেই একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। মঞ্চটা একটু ছোট হলেও, এবারে তাঁরা ছিলেন আরো বেশি দানবীয়।
পরিসংখ্যান বলছে, বেশ বড় ব্যবধানে এগিয়ে থেকে টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে সবচেয়ে সফল জুটি এই বাবর ও রিজওয়ান। তাঁরা সাতবার শতরানের জুটি গড়েছেন। দ্বিতীয় স্থানে আছেন ভারতের লোকেশ রাহুল ও রোহিত শর্মা। তাঁরা দু’জনে মিলে পাঁচটি সেঞ্চুরির জুটি গড়েছেন। চারটি করে সেঞ্চুরির জুটিতে নাম আছে শিখর ধাওয়ান-রোহিত শর্মা, অ্যারন ফিঞ্চ-ডেভিড ওয়ার্নার ও মার্টিন গাপটিল-কেন উইলিয়ামসনের।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে খুব দারুণ ভাবে ম্যাচের মোমেন্টামটা নিজেদের পক্ষে আনতে পেরেছেন এই দু’জন। বাবর সেঞ্চুরি করলেও স্ট্রাইক রেটে তাঁর চেয়ে এগিয়ে আবার রিজওয়ান। ফলে, কাউকে কারো চেয়ে এগিয়ে বা পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। পাল্লা দিয়ে চলেছে দু’জনের উইলো। সেই উইলোতে ভর করে জিতেছে পাকিস্তান, ফিরেছে সিরিজের সমতায়। কানায় কানায় পূর্ণ করাচি স্টেডিয়ামের দর্শকদের জন্য রীতিমত ‘পয়সা উসুল’ একটা ম্যাচ।