শাক দিয়ে কি মাছ ঢাকা যায়?

প্রথম দুই ম্যাচ জিতে ইতোমধ্যেই সিরিজ নিশ্চিত বাংলাদেশের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা তাই শুধুই নিয়ম রক্ষার। নিয়ম রক্ষার বলা হচ্ছে এ কারণে যে ম্যাচটি ওয়ানডে সুপার লিগেরও অংশ ছিল না। ফলে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এই ম্যাচটি হতে পারতো নিজেদের বেঞ্চ ঝালিয়ে নেবার বড় সুযোগ। যেকোন দলই স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করলে সেটাই করবে। এমনকি অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গও এমন আশ্বাসই দিয়েছিলেন। তাহলে কোন অদৃশ্য শক্তি তাঁদেরকে সিদ্ধান্ত বদলে চাপ প্রয়োগ করলো?

তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচের একাদশ দেখলে আপনার মনে সেই সন্দেহ ডানা বেধে বসবেই। কেননা এখানে আপনি কোচ ও অধিনায়কের কথার কোন মিল পাবেন না। একাদশে পরিবর্তন এসেছে মাত্র একটি। স্পিনিং উইকেটে শরিফুলকে বাদ দিয়ে খেলানো হচ্ছে একজন বাড়তি স্পিনারকে। ফলে শেষ ওয়ানডেতে সুযোগ পেয়েছেন তাইজুল ইসলাম।

যদিও বাংলাদেশের বোলিং লাইন আপ ওয়ানডে ফরম্যাটে বেশ শক্তিশালি। পেসাররা দারুন ছন্দে আছেন। আবার সাকিব-মিরাজের স্পিনিং জুটিও অনবদ্য। এছাড়া ব্যাকআপ স্পিনার হিসেবে নাসুম আহমেদ তো নিজেকে প্রমাণ করলেনই। তবে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের কিছু জায়গা এখনো নড়বরে।

যদি স্কোয়াডে খুব বেশি অপশনও ছিল না। ওয়ানডে সিরিজে ম্যাচ খেলেননি এমন ব্যাটসম্যান শুধু এনামুল হক বিজয়। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেটে লিগে রানের বন্যা ভাসিয়ে জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন। কোনরকম প্রসেস না মেনেই তাঁকে টেস্ট খেলানো হয়েছে। তবে বিজইয়ের সুযোগটা পাওয়ার কথা ওয়ানডেতে, যেই ফরম্যাটে পারফর্ম করেই তিনি সুযোগটা পেয়েছেন। অথচ একটা ম্যাচেও নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগটা বিজয় পেলেন না।

এটা ঠিক যে বিজয়ের ওয়ানডে একাদশে জায়গা পাওয়াটা কঠিন। কেননা বাংলাদেশের ওপেনিং পজিশন নিয়ে এই মুহূর্তে কোন প্রশ্ন নেই। একপ্রান্তে ওপেন করছেন অধিনায়ক নিজেই। আরেক প্রান্তে আছেন লিটন দাস। ফলে ওপেনার বিজয়ের কোন প্রয়োজন একাদশে নেই। সেজন্যই প্রথম দুই ম্যাচে তিনি না খেলায় প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগ ছিল না। তবে আজকের ম্যাচে বিজয়কে পরীক্ষা করে নেয়াটাই ছিল স্বাভাবিক পক্রিয়া।

এমনকি ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেছিলেন,“এখন আমাদের সময় এসেছে বেঞ্চ স্ট্রেংথ দেখে নেওয়ার। সাধারণত যখন পয়েন্টসের ব্যাপার থাকে, তখন সুযোগ থাকে না। কিন্তু এরকম সিরিজে যদি ২-০তে এগিয়ে যান, তখন যারা খেলেনি বা যাদেরকে নিয়ে আমরা অনেক দিন ধরে ঘুরছি, তাদের সুযোগ দেওয়া উচিত। এটির জন্য আমারও এক-দুই ম্যাচ মিস করতে হলে, ইটস ফাইন। কোনো সমস্যা নেই।”

 

আবার হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গও গলা মিলিয়েছিলেন একই সুরে। তিনি বলেছিলেন,” এখানে সুযোগ আছে পরখ করার। কারণ ২০২৩ বিশ্বকাপে তাকিয়ে কিছু ক্রিকেটারকে দেখে নেওয়ার ব্যাপার আছে।”

তবে একদিন পরের আবার পাল্টে গিয়েছিল হেডকোচের সুর। গতকাল ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ব্যাপারটি একটু ট্রিকি (অন্যদের সুযোগ দেওয়া)। বিজয়কে খেলাতে পারলে ভালো লাগবে আমার। তবে তাতে আরেকজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান বেড়ে যাবে। আমাদের এখানে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান প্রয়োজন। তাই ব্যাটিং লাইন আপে খুব বেশি পরিবর্তন সম্ভবত হবে না।”

এত দ্রুত হেড কোচের ভাবনার এই পরিবর্তনই সন্দেহটা আরো প্রবল করে। পিছনে অন্য কিছু নেই তো? যাতে অধিনায়ক ও হেড কোচের চাওয়াইয় কোন কাজ হলো না। প্রশ্ন উঠতে পারে যারা দেশের ক্রিকেটটা নিয়ন্ত্রণ করেন তাঁদের নিয়ে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে অসহায় ভাবে হেরেছে বাংলাদেশ। এছাড়া টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের বিশ্বকাপ কদিন পরে হলেও বাংলাদেশের অবস্থা এখনো নাজেহাল। এমনকি প্রশ্ন  আছে অধিনায়ককে নিয়েও। তাহলে কী এসব ব্যর্থতা ঢাকতেই শেষ ম্যাচটাও জিততেই চায় বিসিবি? কিন্তু সাপ দিয়ে কী আর মাছ ঢাকা যায়?

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link