রাত জাগা গিটারের সুর
শুধু স্কিল, অসাধারণ পাসিং অ্যাবিলিটি, ড্রিবলের উপর নির্ভর করে একে একে ইংল্যান্ড, তুরস্ক, জার্মানি - ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে মাইকেল ওয়েন এগিয়ে গেলেও ঐ যে দাঁত উঁচু রোনালদিহোর ফ্রি-কিক, ঐশ্বরিক ডান পায়ে ওভাবে সোয়ার্ভিংয়ে গোল, ওটাই টার্নিং পয়েন্ট হয়ে গেল টিমটার জেতার ক্ষেত্রে। ‘পারব’ মনোভাবটা ছিটকে বের করার জেদ অন্য সবকিছুর চেয়ে আলাদা। তাই, বারবার পাঁচ বার।
আনন্দবাজারের প্রথম পাতার ডানদিকে একটা ছোট্ট হেডলাইন – ‘অঙ্ক বা ছক নয়, স্বভাব-দক্ষতাই নায়ক’। স্বয়ং চুনী গোস্বামীর লেখা।
আরো পড়ুন
- স্বর্গসুখের সন্ধানে, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে
- ১৯৯২ ও ডেনিস সূর্যোদয়ের গল্প
- ফুটবলের দু:খী রাজকুমার
- ব্রাজিলের আজন্ম আক্ষেপ ‘সুপার মারিও’
- ফুটবলের প্রথম সুপারস্টার
দলটা কার্যত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে উঠেছিল বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্ব টপকে মূলপর্বে। বিশ্ব সেরা ‘নাম্বার নাইন’ রোনালদের তখন একটা হাঁটু বিপর্যস্ত। রিভালদো সেই ফর্মে নেই, যে ফর্মে বার্সাতে মৌসুম কাটিয়েছে। সদ্য আগত এক দাঁত উঁচু পনিটেল, পরবর্তীতে যে জিনিয়াস আখ্যা পাবে! সাম্বা ম্যাজিক শুরুতে দেখাই যায়নি প্রায়।
অপরদিকে মার্সেলো বিয়েলসার কোচিংয়ে আর্জেন্টিনার স্বপ্নের উত্থান। গ্রুপ পর্ব থেকে মূলপর্বে এসেছে স্রেফ এক অসাধারণ ফুটবল খেলে।
আসলে, ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে ভরা দলটি একটা জায়গা খুঁজে বেড়িয়েছিল। নিজেদের মধ্যে যে প্রতিভা, যে দক্ষতা রয়েছে তা বিশ্বের কাছে প্রদর্শনের একটা প্ল্যাটফর্ম, সেটাই বিশ্বকাপে করে দেখাল।
শুধু স্কিল, অসাধারণ পাসিং অ্যাবিলিটি, ড্রিবলের উপর নির্ভর করে একে একে ইংল্যান্ড, তুরস্ক, জার্মানি – ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে মাইকেল ওয়েন এগিয়ে গেলেও ঐ যে দাঁত উঁচু রোনালদিহোর ফ্রি-কিক, ঐশ্বরিক ডান পায়ে ওভাবে সোয়ার্ভিংয়ে গোল, ওটাই টার্নিং পয়েন্ট হয়ে গেল টিমটার জেতার ক্ষেত্রে।
‘পারব’ মনোভাবটা ছিটকে বের করার জেদ অন্য সবকিছুর চেয়ে আলাদা। তাই, বারবার পাঁচ বার।
বিশ্বমঞ্চে ব্রাজিল কখনও প্রেমিক, কখনও তারুণ্যের প্রতীক, কখনও হতাশ, ব্যর্থ মানুষ। তাদেরকে কখনও ভালোবাসা যায়, কখনও ঘৃণায় মুখ ফিরিয়েও নেওয়া যায়, কিন্তু তাদেরকে ইগনোর? নৈব নৈব চ! একটা হাঁটু নিয়ে বিশ্বজয় করা শ্রেষ্ঠ ‘নাম্বার নাইন’ ফাইনালের শেষে গায়ে হলুদ-সবুজ পতাকা লাগিয়ে ঘুরছে, আর পাঁচ বছরের একটা ছেলের ফুটবলের প্রতি ভালবাসা জাগিয়ে দিচ্ছে।
বুঝিয়ে দিচ্ছে ফুটবল শুধু অঙ্কের কাটাছেঁড়া নয়, ছোট্ট স্কোয়্যার পাস, ইনস্টেপ-আউটস্টেপ ড্রিবলের মধ্যে লেগে থাকে ভালবাসার সূক্ষ্ম ছোঁয়া। শিখিয়ে দিচ্ছে লাতিন আমেরিকার টাচ ফুটবল ঘরানা এবং ইউরোপিয়ান ট্যাকটিক্যাল ফুটবল ঘরানার মধ্যে পার্থক্যকে।
লাতিন আমেরিকান ফুটবলের ছোঁয়াকে ভাললাগার অশেষ উপাদান যোগান দিচ্ছে ঐ হলদে জার্সিধারীরা, যাদের পায়ের ড্রিবলে ফুটবল প্রেমিক থেকে জীবনসঙ্গী হয়ে উঠছে।
পারো তো ভালবেসে কাছে টেনে নিও। সাম্বা শুধু একটা ফুটবল ঘরানার দৃষ্টান্ত নয়, সাম্বা কোটি কোটি ব্রাজিল সমর্থকের রাত জাগা গিটারের সুর।