দরজায় কড়া নাড়ছে এশিয়া কাপ। আর কয়েকটা দিন পরেই শুরু হবে এশিয়া মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। এশিয়া কাপের সর্বশেষ চার আসরে তিনবার ফাইনাল খেলা বাংলাদেশের জন্য এই টুর্নামেন্ট একটু বেশিই বিশেষ। কিন্তু এবারের আসরে খেলা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হবে বলেই বোধহয় বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখার কোন সুযোগ নেই।
সাম্প্রতিক ফর্ম কিংবা অতীত পরিসংখ্যান – কোন বিবেচনাতেই ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে বাংলাদেশ উপরের সারির দল নয়। তবু মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট সামনে রেখে টাইগার স্কোয়াডে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। একটা এশিয়া কাপ দিয়েই বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলকে বদলে দিতে চাচ্ছেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। কিন্তু, সেটা কি আদৌ সম্ভব?
আসন্ন এশিয়া কাপে যদিও বাংলাদেশ শিরোপার দৌড়ে ফেভারিট নয়, তবু ভক্ত-সমর্থকদের আশা-আকাঙ্ক্ষায় ভাঁটা পড়েনি। প্রত্যাশার এই টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে বাংলাদেশ স্কোয়াডের কিছু শক্তিমত্তা এবং দুর্বলতা দেখে নেয়া যাক।
অবশ্য বিশ ওভারের ফরম্যাটে শক্তির জায়গার চেয়ে দুর্বলতা-ই বেশি বাংলাদেশের। আর সবচেয়ে বেশি ঘাটতি ব্যাটিং বিভাগে। এক্ষেত্রে সবার আগে বলা যায় টপ অর্ডারের কথা। তামিম ইকবালের অবসরের পর লিটন দাসের উপর টপ অর্ডার সামলানোর মূল দায়িত্ব এসেছে। কিন্তু এই ইনফর্ম ব্যাটসম্যানের ইনজুরিতে কপালে ভাঁজ পড়েছে নির্বাচকদের।
এশিয়া কাপের জন্য ঘোষিত দলে মাত্র দুইজন স্পেশালিষ্ট ওপেনার ছিলেন শুরুতে। এদের মধ্যে এনামুল হক বিজয় এখনো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বলার মত কিছু করতে পারেননি, অন্যদিকে পারভেজ ইমনের সম্বল মাত্র এক ম্যাচের অভিজ্ঞতা। একপ্রকার বাধ্য হয়েই ওপেনিংয়ে সাকিব-মুশফিককে বাজিয়ে দেখতে চায় ম্যানেজম্যান্ট। যদিও, শেষ অবধি স্কোয়াডে মোহাম্মদ নাঈম শেখকে যোগ করা হয়েছে – যার টি-টোয়েন্টি ইনটেন্ট যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ। তাই টপ অর্ডার নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা থাকছেই।
নড়বড়ে টপ অর্ডার একমাত্র সমস্যা নয়, সমস্যা রয়েছে ব্যাটিং অ্যাপ্রোচেও। পাওয়ার প্লে কাজে না লাগানোর পুরোনো ভুল এখনো শুধরে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। মহাদেশীয় মঞ্চেও একই ভুল হবে না সেটির নিশ্চয়তা কই।
আবার টপ অর্ডারের দুরাবস্থা সামাল দেয়ার মত মিডল অর্ডার নেই বাংলাদেশের। উইকেট হয়তো ধরে রাখতে পারেন আফিফ-রিয়াদরা; কিন্তু টি-টোয়েন্টির সাথে মানানসই স্ট্রাইক রেটে রান তুলতে প্রায় ব্যর্থ হন। তাই অধিকাংশ ইনিংসের মাঝের ওভারগুলোতে ইকোনমি থাকে ছয় বা তারও কম।
অন্যদিকে বিশ্বমানের ফিনিশারের জন্য বাংলাদেশের হাপিত্যেশ বহুদিনের। তারপরও মন্দের ভাল হিসেবে যাদের উপর ভরসা রাখা হয়েছিল সেই সোহান-রাব্বিরা এখন চোটাক্রান্ত। সবমিলিয়ে ব্যাটিং নিয়েই দুশ্চিন্তাটা বেশি।
তবে ব্যাটিং লাইনআপে এত এত দুর্বলতার মাঝে একটা স্বস্তির জায়গা আছে বাংলাদেশের জন্য, সেটা অভিজ্ঞতা। সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ তিনজন-ই লম্বা সময় ধরে টি-টোয়েন্টি খেলছেন। ৯৯ ম্যাচ খেলেছেন সাকিব, আর বাকি দুইজন ইতোমধ্যে পেরিয়ে গিয়েছেন শততম ম্যাচের মাইলফলক।
এছাড়া আফিফ হোসেন ধ্রুব গত তিন বছর থেকে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলে অটো চয়েজ। আবার দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে দলে ফেরা সাব্বির রহমান তো একসময় দেশের সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটার ছিলেন। বলাই যায়, এশিয়ান মঞ্চে অভিজ্ঞতার অভাব হবে না বাংলাদেশের, এবার সেই অভিজ্ঞতা মাঠে কাজে লাগাতে পারলেই হয়।
ব্যাটিংয়ের তুলনায় বোলিংয়ে কিছুটা ভাল অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। আরব আমিরাতের তুলনামূলক স্লো উইকেটে মুস্তাফিজ, সাইফরা হতে পারেন ব্যাটারদের মাথা ব্যাথার কারন। আবার তাসকিন কিংবা ইবাদত বাইশ গজে তুলতে পারেন গতির ঝড়। যদিও তরুণ হাসান মাহমুদ ইনজুরির কারনে ছিটকে না পড়লে আরো বৈচিত্র্যময় পেস আক্রমণ নিয়েই খেলতে পারতো টিম টাইগার্স।
অবশ্য সাকিব আল হাসানের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং বাংলাদেশকে বাড়তি সুবিধা দিবে। রান আটকানো কিংবা উইকেট তোলা দুই কাজেই দক্ষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী সাকিব। অবশ্য অন্য দুই নিয়মিত স্পিনার নাসুম আহমেদ এবং শেখ মেহেদী হাসানের অ্যাওয়ে পারফরম্যান্স বেশ হতাশাজনক। দুইজনেই গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রান বিলিয়েছেন দুই হাতে। যদিও দুইজনের মাঝে শেখ মেহেদী কিছুটা ভাল অবস্থায় রয়েছেন।
তবে বোলিং অপশন নিয়ে বাংলাদেশের চিন্তা বোধহয় একটু কম। তার কারণ দলে রয়েছে বেশ কয়েকজন অলরাউন্ডার। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেনরা তো পরীক্ষিত পার্ট-টাইম বোলার। এছাড়া আফিফ হোসেনও ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি পার্ট-টাইম বোলারের ভূমিকায় কার্যকরী। সর্বোপরি, সাকিব, সাইফ, মেহেদী, মিরাজ, মোসাদ্দেকদের মত অলরাউন্ডাররা ভারসামপূর্ণ একাদশ সাজাতে সাহায্য করবে নির্বাচকদের।
সবকিছুর উর্ধ্বে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা সাকিব আল হাসানের ক্ষুরধার ক্যাপ্টেন্সি। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের হাতে নেতৃত্বভার ওঠার পরেই নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বাংলাদেশের দর্শকরা। ক্যাপ্টেন সাকিব নিজেও বেশ আত্মবিশ্বাসী। তাঁর ক্রিকেটীয় মেধা বিশ্বের যে-কারো জন্য ঈর্ষণীয়; তাই অধিনায়ক সাকিব সামনে থেকে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন সেটা আশা করাই যায়।
৩০ আগস্ট আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের এশিয়া কাপ মিশন। কাগজে-কলমের হিসেবে টাইগারদের পিছিয়ে থাকাটা স্পষ্ট; মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে এই ঘাটতি পূরণ করতে পারে কি না – সেটিই এখন দেখার বিষয়।