টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দলটা খারাপ না। এই কথাটা যদি বলি তাহলে কী আপনি হাসবেন? আচ্ছা, ছবিতে এই তিন ব্যাটসম্যানকে একটু দেখুন তো। ব্যাটিং লাইন আপে লিটন, রাব্বি ও সোহান ভিন্ন তিনটি পজিশনে খেলেন। এই তিনজনই যদি বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি লাইন আপে যুক্ত হন তাহলে কী বাংলাদেশ সত্যিই খুব খারাপ দল।
তারপরও প্রশ্ন থাকতে পারে। এই তিনজনই তো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে খেলেছেন। কিন্তু তাতেও তো আহামরি কোন সাফল্য পাওয়া যায়নি কখনো। এই কথাও সত্য। কিন্তু এই তিনজনকে কিংবা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের যে রিসোর্স সেটা কী বাংলাদেশ কখনো ঠিক করে ব্যবহার করেছে। নাকি একটা সহজ, গা বাঁচানো পথ ধরে খেলে গিয়েছে।
বাংলাদেশ গত কয়েক মাসে নতুন ব্র্যান্ডের ক্রিকেট কথাটাকে একেবারে হাস্যরসে পরিণত করেছে। তবুও আমি এখনো এই শব্দ যুগলে বিশ্বাস করি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের কিছু ক্রিকেটারের উপর ভরসা রাখলে সাফল্য পাওয়া সম্ভব। রাতারাতি পরিবর্তন না হলেও অন্তত একটা পক্রিয়ার শুরু হবে। পাওয়ার হিটিং ব্যাপারটাকে এখন স্রেফ গা বাঁচানোর একটা মন্ত্র মনে হয়।
উপমহাদেশের দেশগুলোর দিকে যদি তাকাই তাহলে কোন দলেই আসলে তেমন পাওয়ার হিটার নেই। হ্যাঁ, প্রত্যেকটা দলেই দুই একজন আছেন যারা বড় শট খেলতে পারেন। বাংলাদেশেও একেবারে নেই সেটা বলা যাবে না। প্রায় একই রকম দৈহিক গঠন নিয়ে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা পারলেও আমাদেরই কেন রাসেল, পোলার্ড হতে হবে?
আমাদের লিটন দাস, ইয়াসির আলি রাব্বি, নুরুল হাসান সোহানরা কেন পারবেন না। বাংলাদেশ আসলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কখনো এই ক্রিকেটারদের উপর আস্থাটাই রাখতে পারেনি। বাংলাদেশ সব সময় একটা সহজ পথে হেঁটেছে। যেখানে সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কিংবা মুশফিকদের।
শুধু লিটন, রাব্বি বা সোহান কেন, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সম্পদ আফিফকেই ব্যবহার করছে না। আফিফ বাইশ গজে একটু সময় পেলে আস্তে আস্তে কীভাবে প্রতিপক্ষের উপর চেপে বসতে পারেন সেটা কারোই অজানা নয়। তবুও দিনের পর দিন তাঁকে ছয়-সাতে স্লগার বানিয়ে খেলানো হয়েছে।
এশিয়া কাপে যাওয়ার আগে টিম ডিরেক্টর স্বয়ং জানালেন আফিফ এবার উপরে খেলবে। সরাসরি বললে চারে খেলবে। অথচ এশিয়া কাপের দুই ম্যাচেও আফিফকে চারে দেখা গেল না। দিনের পর দিন ধীরগতির ইনিংস খেলতে থাকা মুশফিকুর রহিমকে চারে খেলানো হলো। এবার মুশফিকুর রহিম অবসর নিয়েছেন। এবার তো বাংলাদেশ আফিফকে চারে খেলাবে নাকি এখন আবার এই পজিশনের জন্য নতুন কাউকে খোঁজা হবে?
লিটন দাস এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে ইনফর্ম ব্যাটসম্যান। ফলে ওপেনিং পজিশনে তিনি থাকা মানে একপ্রান্ত থেকে রান আসার একটা আস্থা পাওয়া যায়। আরেক প্রান্তে বাংলাদেশ মেকশিফট ওপেনার ব্যবহার করতে পারে। তিন ও চার নাম্বার পজিশনে ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় সাকিব বা আফিফ নামতে পারেন।
পাঁচ নম্বরে ইয়াসির রাব্বি এখন বাংলাদেশের সেরা সম্পদ। রাব্বি প্রয়োজনে ইনিংস ধরে খেলতে পারেন। আবার শেষ দিকে দ্রুত ব্যাট চালাতেও পারেন। এরপর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকর স্লগার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করছেন। ফলে ছয়-সাতে সোহান, মোসাদ্দেক আসতে পারেন।
বাংলাদেশ মূলত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পিছিয়ে যেত ব্যাটিং ইনটেন্টের কারণে। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপে কয়েকজন ব্যাটসম্যান থাকতো যারা ভীষণ ধীরগতির ইনিংস খেলে দলের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করতো। রিয়াদ, মুশফিক কিংবা নাঈম শেখদের এই রান দলের যতটা না উপকারে আসতো তারচেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিই হতো।
তবে উপরের ব্যাটিং লাইন আপটার কেউই আসলে ধীরগতির ইনিংস খেলেন না। লিটন, রাব্বি, আফিফ, সোহানরা হয়তো কোনদিন পারবেন, কোনদিন পারবেন না। তবে প্রতিদিনই ম্যাচ জেতার জন্য চেষ্টা করবেন। টি-টোয়েন্টি সুলভ ব্যাটিংটাই করবেন। নিজের জায়গা বাঁচানোর জন্য একশো স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করার অভ্যাস তাঁদের নেই।
কিন্তু বাংলাদেশ দিনের পর দিন এই ফরম্যাটে অভিজ্ঞতা খুঁজে গিয়েছে। এই ফরম্যাটে অভিজ্ঞতা কী আসলেই খুব প্রয়োজন। এই অভিজ্ঞদের নিয়েই তো বাংলাদেশ ব্যর্থতার চূড়ান্ত দেখলো। এই ফরম্যাটে আসলে ইনিংস ধরে খেলার মত ব্যাটসম্যান খুব একটা প্রয়োজন হয় না।
উদাহরণ হিসেবে গতকাল আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ম্যাচটা দেখা যেতে পারে। শারজাহ’র উইকেটে আফগানিস্তান শ্রীলঙ্কাকে ১৭৬ রানের বিশাল টার্গেট দিল। আফগানদের রশিদ খান, মুজিবুর রহমানের মত বোলার ছিল। তবুও শ্রীলঙ্কা ম্যাচটা জিতে এসেছে। অথচ এই রেকর্ড করা রান তাড়ায় কোন লংকান ব্যাটারের একটা অর্ধশতকও নেই। সর্বোচ্চ ৩৬ রান এসেছে কুশল মেন্ডিসের ব্যাট থেকে। তবুও শ্রীলঙ্কা ম্যাচ জিতেছে কেননা তাঁদের চারজন ব্যাটসম্যানই দেড়শোর বেশি স্ট্রাইক রেট নিয়ে ব্যাটিং করেছেন। খুব বড় না কিন্তু কার্যকর ইনিংস খেলেছেন। আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আপনার কাছে এটাই চায়।
লিটন, রাব্বি, মোসাদ্দেকরাও এই ধাঁচেরই ব্যাটসম্যান। শুধু তাঁদেরকে সঠিক জায়গাটায় খেলাতে হবে। আর এই ফরম্যাটে প্রতিদিন ভালো করা যাবে না এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। দুই ম্যাচ খারাপ খেললেই দল থেকে বাদ দেয়া যাবে না। ভরসা রাখতে হবে, সাহস জোগাতে হবে। আর ক্রিকেটারদের মধ্যে বিশ্বাসটা ছড়িতে দিতে হবে যে তারাও ভালো টি-টোয়েন্টি দল হয়ে উঠতে পারে।