অপেক্ষাকৃত খর্বশক্তির দল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বাংলাদেশের লড়াইটা কেবলই ক্রিকেটীয় স্কিলের লড়াই নয়। উইকেট, টুর্নামেন্ট পরিস্থিতি এবং নিজেদের সাম্প্রতিক ফর্ম মিলিয়ে বাংলাদেশের জন্য পাহাড় প্রমাণ চাপের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজেদের সাথে নিজেদের লড়াই ছিল বটে।
তবে, একজনের জন্য এই লড়াই ছিলো ব্যক্তিগত মর্যাদা রক্ষার লড়াই, তিনি সাকিব আল হাসান। তিন ঘন্টার স্নায়ুক্ষয়ী লড়াই শেষে জিতলেন সাকিব আর বাংলাদেশই। সাকিবের ব্যাটিং, মুস্তাফিজ-রিশাদের বোলিং আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে সেইন্ট ভিন্সটাউনে বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসকে হারিয়েছে ২৫ রানের ব্যবধানে।
এই জয়ের মাধ্যমে কার্যত বাংলাদেশ সুপার এইটে এক পা দিয়ে রাখলো। বল হাতে কোন উইকেট না পেলেও, ব্যাট হাতে অপরাজিত ৬৪ রান এবং নিজের স্পেলের শেষ দুই ওভারে মাত্র ১০ রান দিয়ে আয়ারল্যান্ডের উপরে চাপ তৈরির পুরস্কার হিসেবে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন সাকিব আল হাসান।
এই ম্যাচে ম্যাচ সেরা হওয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান মোট ৪৫ বার ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতলেন। তার সামনে এখন কেবল কেবল শচীন টেন্ডুলকার, বিরাট কোহলি, সনাথ জয়াসুরিয়া, জ্যাক ক্যালিস, কুমার সাঙ্গাকারা ও রিকি পন্টিংয়ের মত ছয়টি ওজনদার নাম।
ব্যাটিংয়ে যেমন দায়িত্বশীল, নির্ভার মেজাজের সাকিবের দেখা মিলেছে, পুরষ্কার বিতরণী মঞ্চেও ছিলো তেমন সাকিবের উপস্থিতি। সাকিব অকপটে স্বীকার করেছেন, সেইন্ট ভিন্সটাউনের উইকেটে ১৫৯ রান অনেক বড় কোন স্কোর নয়। বাংলাদেশ ম্যাচে জয়লাভ করেছে বোলারদের অবিশ্বাস্য বোলিংয়ের কল্যাণে।
ফিজ ও রিশাদের বোলিংকেও আলাদাভাবে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন এই প্রিমিয়ার অলরাউন্ডার। তিনি বলেন, ‘১৫৯ রান এই উইকেটে উইনিং স্কোর নয়, তবে চ্যালেঞ্জ জানানোর মত স্কোর। সেখান থেকেই বোলাররা, বিশেষত ফিজ এবং রিশাদ খেলাটি নেদারল্যান্ডসের হাতের নাগালের বাইরে নিয়ে গিয়েছেন।’
নিজের ব্যাটিং নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন সাকিব। তবে সবথেকে বেশি সন্তুষ্ট হয়েছেন দলের প্রয়োজনে অবদান রাখতে পেরে। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও সাকিবের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করতে ভুল করেন নি। শান্ত বলেন, ‘সাকিব কিছুদিন থেকে ব্যাটিং নিয়ে বিপাকে থাকলেও, আজ তিনি তার স্কিল এবং কোয়ালিটি দেখিয়েছেন।’
অবশ্য ব্যতিক্রম ছিলেন না নেদারল্যান্ডসের অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসও। ম্যাচে বাংলাদেশের আধিপত্য মেনে নিয়েই বাংলাদেশের প্রশংসা করেন তিনি। স্কট বলেন, ‘বাংলাদেশ তিন বিভাগেই (ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং) আমাদের থেকে এগিয়ে ছিলো। ম্যাচ জয়ের কৃতিত্ব তাদের প্রাপ্য।’
১৭ জুন গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও নেপাল। ‘সুপার এইট’-এর লড়াইয়ের মহাগুরুত্বপূর্ণ সেই লড়াইয়ের আগে সুখবরই পেয়েছে বাংলাদেশ। ম্যাচের আগে ‘নেক ব্রেইস’নিয়ে সাকিবকে অনুশীলন করতে দেখা গেলেও, সাকিব নিশ্চিত করেছেন, তিনি ইনজুরি কোন কারণে ‘নেক ব্রেইস’ ব্যবহার করছেন না, ব্যাটিংয়ের সময় মাথার অবস্থান স্থির রাখতেই আশ্রয় নিয়েছেন এই ভিন্ন ধরনের অনুশীলনের।