ফুটবল কুটনীতিতে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ!

শুরুতে কাতার এরপর সৌদি আরব, দুটি দেশে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে খেলার আগে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার পরিকল্পনা থাকলেও তা ভেস্তে গেছে। অথচ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হিসেবে কোন দলই যে বসে নেই। সেখানে অনেকটাই উল্টোরথে রয়েছে লাল সবুজ পতাকাধারীরা।

সে কারণেই বঙ্গবন্ধু জাতীয় ষ্টেডিয়ামে নিয়মিত অনুশীলন শেষে জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া অনেকটা ক্ষোভের সাথেই নিজেদের পরিকল্পনার নানা অসঙ্গতির কথা তুলে ধরেন। এ সময় তাকে ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা যায়। কারণ কাতার বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপে বাছাইপর্বের জন্য এখন তিনটি ম্যাচ খেলার বাকি রয়েছে।

প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারত, ওমান আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে জুন মাসেই খেলতে হবে বাংলাদেশকে। যদিও ফুটবল কুটনীতির প্রথম ব্যর্থতা শুরু হয়েছে আরো আগেই। বাছাইপর্বের অবশিষ্ট তিনটি ম্যাচের ভেন্যু ছিল বাংলাদেশ। সে কারণে কিছু পয়েন্ট নামের সাথে যোগ হওয়ার একটা প্রত্যাশা ছিল।

কিন্তু, দেশের কাউকেই রাজি করাতে পারেনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রা সংস্থাটি অনেকটা বাধ্য হয়েই কাতারে ম্যাচ তিনটি খেলতে যেতে হচ্ছে। নিজেদের মাটিতে বাকি ম্যাচগুলো খেলতে না পারা যদি হয় প্রথম ব্যর্থতা তাহলে দ্বিতীয় ব্যর্থতা হলো বাছাইপর্বের বাকি ম্যাচগুলো খেলার আগে বড় কোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে না পারা।

আর ২৮ মে কাতারের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার আগের দিন ২৭ মে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেডের বিপক্ষে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কাতারে গিয়ে যে বেশিকিছু করার কোন সুযোগ পাবেনা সেটি অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক কোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ না পেলে অন্যরা কিন্তু বসে নেই।

তিন প্রতিপক্ষের মধ্যে ওমান ও আফগানিস্তান গত ২৫ মে থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে। দুটি দলেরই ২৯ মে বাকি দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে। ওমান ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে আর আফগানিস্তান খেলবে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে। আফগানরা ইন্দোনেশিয়াকে ৩-২ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশকে একটা বার্তা এরই মধ্যে দিয়ে রেখেছে।

সংযুক্ত আর আমিরাতের দুবাইয়ে প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর একটা সময় ৩-০ গোলে এগিয়ে গেলেও পরে দুই গোল হজম করে আফগানিস্তান। ৩ জুন প্রথম ম্যাচেই এই দলটির মোকাবেলা করবে বাংলাদেশ। প্রথম লেগে ১-০ গোলে পরাজিত হয়েছিল বাংলাদেশ। ৭ জুন দ্বিতীয় ম্যাচে দোহায় ভারতের বিপক্ষে খেলার পর ১৫ জুন খেলবে ভারতের বিপক্ষে।

অথচ যে ধরনের অনুশীলন আর প্রস্তুতি প্রয়োজন তা কি নিতে পেরেছে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা? মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহেই কাতারে যাওয়ার কথা ছিল আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নিতে। কিন্তু সেটি বাংলাদেশ না পারলেও ভারত কিন্তু পেরেছে। গত ১৯ মে ভারত কাতারে পৌছে দিন সাতেক পর অনুশীলনও শুরু করে দিয়েছে।

তারাও বেশ কয়েকটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বলে জানা গেছে। যে নেপালের বিপক্ষে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেছিল জামাল ভুইয়ার সেই নেপালও কিন্তু বসে নেই। তারাও বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে মাঠে নামার আগে ২৯ মে খেলবে ইরাকের বিপক্ষে। দেশের বাইরের দলের বিপক্ষে খেললে নিজেদের ভুলগুলো সহজেই ফুটে ওঠে।

দু:খজনকভাবে হলেও বলতে হচ্ছে, বাংলাদেশ সেই সুযোগই পাচ্ছেনা। এর আগে গেল ডিসেম্বরে অনেকটা কম প্রস্তুতি নিয়ে এই কাতারেই বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সে সময় বাফুফে সমালোচনার মুখে পড়েছিল। সে সময় কাতারের প্রস্তাবে রাজি হওয়ার পেছনে যুক্তি ধরা হয়েছিল, আধুনিক আর আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে বলেই বাংলাদেশ সেখানে গিয়েছিল।

অথচ, ছয় মাস পরই কাতার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশকে সেই সুযোগ দেয়নি। দেশটির কাছে একরকম প্রত্যাখাত হওয়ার পর চেষ্টা ছিল সৌদি আরবে গিয়ে ম্যাচ খেলার। দেশটির দাম্মামে খেলার সবকিছু চুড়ান্ত থাকার পর কোয়ারেন্টাইন সংক্রান্ত কাগজপত্র না আসায় শেষমুহুর্তে যাত্রা বাতিল করতে হয়।

এখানে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ছিল, সৌদিতে কয় দিনের কোয়ারেন্টিন আর কোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলবে তার কিছুই নাকি বাফুফে জানেনা। ধারনা করা হচ্ছে, করোনা ভাইরাসের কারণে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে বাংলাদেশ অনেকটা বাধ্য হয়েই পিছু হটে। যদিও বাফুফে থেকে কোন কিছুই পরিস্কার করা হয়নি।

তবে, একটা বিষয় কিন্তু ঠিকই পরিস্কার হয়ে গেছে, পরপর কাতার ও সৌদি আরবে গিয়ে ক্যাম্প করে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা বাতিল হয়ে যাওয়ার কারণে প্রশ্ন উঠেছে বাফুফের কুটনীতি নিয়ে। বিদেশি ফেডারেশনগুলোর সাথে বাফুফের যোগাযোগ আর সম্পর্ক যে খুব একটা ভাল অবস্থায় নেই সেটিও পরিস্কার হয়ে গেছে। নয়তো নেপালের মতো দল প্রতিপক্ষ পায় আর বাংলাদেশ জাতীয় দলকে খেলতে হচ্ছে শেখ জামালের মতো দলের বিপক্ষে।

কুটনৈতিক ব্যর্থতাকে এখানে বড় করে দেখা হচ্ছে। প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে না পেরে সরাসরি বাফুফের উপর দোষ না চাপিয়ে সমালোচনা করেছেন অধিনায়ক জামাল ভুইয়া, ’বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে এখনো যারা প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়েছেন তারা সবাই আলাদা পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। আমরা তো মাত্র পরিকল্পনা করেছি। সেখানে আমাদের প্রতিপক্ষ দলগুলো নিয়মিতই অনুশীলন ম্যাচ খেলছে বড় দলের বিপক্ষে’।

শুধু অধিনায়ক কেন কোচ জেমি ডে’ও হতাশা লুকাতে পারেননি। খেলোয়াড়দের হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটিয়েও বড় কোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে না পারায় হতাশ হয়েছেন এই ইংলিশম্যান। হতাশা নিয়ে জেমি বলেন, ’ফুটবলাররা প্রস্তুতি নিয়েও শুরুতে কাতার ও পরে সৌদি আরবে যেতে না পারায় খুব কষ্ট পেয়েছেন। এটা সবার জন্যই হতাশার, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। দুটি দেশের যে কোন একটিতে প্রস্তুতি নিতে পারলে কাতারে গিয়ে ভাল করার সুযোগ থাকত।’

জাতীয় দলের আগে বাফুফের কুটনৈতিক ব্যর্থতা প্রতীয়মান হয়েছে এএফসি কাপে। নতুন করে সূচি করা হলেও আবাহনীকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। অথচ এই সময়ে বাফুফের পক্ষ থেকে একাধিকবার মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। আবাহনী বাংলাদেশ ও মালদ্বীপে খেলার চেষ্টা করেও পারেনি। বাংলাদেশি ক্লাবগুলোর কোন অনুরোধই রাখেনি এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link