বিশ্বকাপ ফুটবল: বাংলাদেশের স্বরণীয় পাঁচ

বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাইপর্বে মাঠে নামার আগে মনে পড়ে যায় পেছনের দিনের কথা। দেশের ফুটবলের সোনালী দিনের সময়ে বাংলাদেশ কয়েকটি স্বরণীয় ম্যাচ খেলেছিল। বিশ্বকাপ আর ফুটবল যেমন দেশের জন্য সমার্থক দুটি শব্দ। বাংলাদেশের মতো দেশের কাছে বিশ্বকাপে খেলা যেন স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু। সেই স্বপ্নটা অতীতে যেমন ছোয়া হয়নি ভবিষ্যতেও ছুঁতে পারবে কিনা সেই সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

শেষ তিনটি ম্যাচ বাংলাদেশের মাটিতে খেলার কথা থাকলেও করোনার কারণে কাতারের মাটিতে খেলতে হচ্ছে। বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে শেষের শুরুর যাত্রা। এরপর ভারত ও ওমানের বিপক্ষে বাকি দুটো ম্যাচে ২০২২ বিশ্বকাপের স্বাগতিক কাতারের জসিম বিন হামাদ ষ্টেডিয়ামে।

বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাইপর্বে মাঠে নামার আগে মনে পড়ে যায় পেছনের দিনের কথা। দেশের ফুটবলের সোনালী দিনের সময়ে বাংলাদেশ কয়েকটি স্বরণীয় ম্যাচ খেলেছিল। বিশ্বকাপ আর ফুটবল যেমন দেশের জন্য সমার্থক দুটি শব্দ। বাংলাদেশের মতো দেশের কাছে বিশ্বকাপে খেলা যেন স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু। সেই স্বপ্নটা অতীতে যেমন ছোয়া হয়নি ভবিষ্যতেও ছুঁতে পারবে কিনা সেই সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৮৫ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাইপর্বে খেলা শুরু করে বাংলাদেশ জাতীয় দল। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিটা আসরেরই বাছাইপর্বে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা মাঠে নেমেছে। এশিয়ার ছোট-বড় দেশগুলোর বিপক্ষে খেলে সম্মান বাচাঁনোর পাশাপাশি চমকও দেখিয়েছে। কাতারের মাটিতে খেলার আগে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশের সেরা আর স্বরণীয় পাঁচ ম্যাচের কথা জানবেন পাঠকেরা।

  • প্রতিপক্ষ ইন্দোনেশিয়া, ১৯৮৫ সাল, ঢাকা

নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে সেবারই প্রথম বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে খেলতে নামে বাংলাদেশ। ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে আশীষ ভদ্রের নেতৃত্বে খেলতে নামে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। আগের বছর ১৯৮৫ সালের মার্চ-এপ্রিলে খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাছাইয়ের গ্রুপে বাংলাদেশের সঙ্গী ছিল থাইল্যান্ড, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া। প্রথমবার খেলতে নেমে তিনটি ম্যাচের মধ্যে দুটিতে জয় নিয়ে দর্শকদের উল্লাতে মাতার সুযোগ করে দিয়েছিল।

আশীষ ভদ্র, ইমতিয়াজ সুলতান জনি, শেখ মোহাম্মদ আসলাম, খন্দকার ওয়াসিম ইকবালরা দারুন ফুটবল খেলে দর্শকদের আনন্দের আরেকটা উপলক্ষ্য এনে দিয়েছিল। সে সময় সমান শক্তির দল ছিল থাইল্যান্ড। ১-০ গোলে থাইদের হারিয়ে দুর্দান্ত সূচনা করে। প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত জয়ের পর সে সময়কার ঢাকা জাতীয় ষ্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ম্যাচে ইন্দোনেশিয়াকে ২-১ হারিয়েছিল। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে স্বরণীয় সেই ম্যাচে আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু ফ্রি কিক থেকে র্দুদান্ত গোল করেন। আর সমতায় এগিয়ে যেতে থাকা ম্যাচের জয়সূচক গোলটি করেন কায়সার হামিদ।

  • প্রতিপক্ষ থাইল্যান্ড, ১৯৮৯ সাল, ঢাকা

প্রথম আসরে দুর্দান্ত ফলাফলের পর দ্বিতীয় আসরেও সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখে। দিয়াগো ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ জয়ের আসরে দারুণ খেলার পরের আসরেই কঠিন গ্রুপে পড়ে বাংলাদেশ দল। প্রথম আসরের থাইল্যান্ডই কেবল ছিল। বাকি দুটি দল ছিল এশিয়ার দুই পরাশক্তি চীন ও ইরান। তবে এবার আর নিজেদের মাটিতে নয়, খেলতে হয়েছিল থাইল্যান্ডে। ঘরের মাঠের সুবিধা কাজে লাগিয়ে থাইরা ১-০ গোলে জিতে বাংলাদেশকে চরমভাবে হতাশ করেছিল। সেই দুঃখ ভুলতে থাইল্যান্ডের মতো নিজেদের মাটিকে বেছে নেয় বাংলাদেশ।

ঘরের মাঠে ফিরতি লেগে ৩-১ গোলের দারুণ এক জয় পায় বাংলাদেশ দল। সে সময়কার ঢাকা জাতীয় ষ্টেডিয়ামে মিডফিল্ডার সৈয়দ রুম্মান বিন ওয়ালী সাব্বিরের একটি গোলের কথা অনেকদিন মনে থাকবে মাঠে উপস্থিত দর্শকদের। মধ্যমাঠ থেকে বল নিয়ে চারজন থাই খেলোয়াড়কে কাটিয়ে নিয়ে গোল করেছিলেন বাংলাদেশের ম্যারাডোন খ্যাত এই প্লে মেকার। দলের বাকি দুটো গোল করেছিলেন সত্যজিৎ দাস রুপু ও খন্দকার ওয়াসিম ইকবালের। বাকি দুটি ম্যাচের ফলাফল নিয়ে আর তেমন একটা ভাবনা চিন্তা ছিলনা।

  • প্রতিপক্ষ ইরান, ১৯৮৯ সাল, তেহরান

এশিয়ান ফুটবলে সবসময়ই শক্তিশালী দল হিসেবে পরিচিত ইরান। একাধিকবার বিশ্বকাপে খেলে নিজেদের ফুটবল শক্তিরও জানা দিয়েছে তারা। দেশের মাটিতে নয়, ইরানের মাটিতে নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম সেরা ম্যাচটি খেলেছিল বাংলাদেশ। জিতলেই যে ম্যাচ স্বরণীয় হয়ে থাকবে এমনটি নয়। বিশেষ করে ইরানের আজাদী ষ্টেডিয়ামে ৬০/৭০ হাজার দর্শকের সামনে নিজেদের উজাড় করে দিয়ে খেলেছিল বাংলাদেশ দল।

১৯৯০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের গ্রুপে ফেবারিট হিসেবে বিশ্বকাপের মূলপর্বে যাওয়ার দাবীদার ছিল তারা। নিজেদের মাঠে জিততে মরিয়া ইরান যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে গোল করে জয়ের দেখা পেয়েছিল। ম্যাচটা জিততে না পারলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়নস হওয়াই কঠিন হয়ে যেত ইরানের জন্য। ম্যাচ শেষ হওয়ার অন্তীম মুহুর্তে হজম করা সেই গোল অনেকদিন আফসোস করেছেন খেলোয়াড়রা।

তবে দর্শকদের কাছে বিজয়ী দলের নাম কিন্তু বাংলাদেশ। ডানপ্রান্ত দিয়ে একটি ফ্রি কিক ঠিকঠাক ক্লিয়ার করতে পারেননি কায়সার হামিদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের রক্ষণভাগ। চার ডিফেন্ডারের মাঝখানে হেড দিয়ে বল জালে পাঠিয়েছিলেন ইরানি ফরোয়ার্ড। যদিও এর আগে ঢাকায় প্রথম লেগে বাংলাদেশ হেরেছিল ২-১ গোলের ব্যবধানে। এই ম্যাচেও ভাল ফুটবল খেলেছিল স্বাগকিরা।

  • প্রতিপক্ষ মঙ্গোলিয়া, ২০০১ সাল, দাম্মাম

প্রতিপক্ষ মঙ্গোলিয়া বলেই জয়ের প্রত্যাশা করতেই পারে বাংলাদেশ। কারণ দল হিসেবে এখনো কিছুটা হলেও এগিয়ে রয়েছে পূর্ব এশিয়ার দেশটি থেকে। তবে ২০০২ জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপের প্রথম লেগে ২-২ গোলে ড্র করে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছিল বাংলাদেশ দল। তবে নিজেদের মাটিতে বড় ব্যবধানে জয়েল প্রত্যাশা ছিল। শেষ পর্যন্ত আলফাজ আহমেদ-মতিউর রহমান মুন্না-হাসান আল মামুনদের জয় এসেছিল ৩-০ গোলের বড় ব্যবধানে। এই ম্যাচে নিজেকে আলাদা করে চিনিয়েছিলেন আলফাজ।

মঙ্গোলিয়ার ডি বক্সের বাইরে থেকে চার পাঁচ জনকে কাটিয়ে দুর্দান্ত বল নিয়ে নিয়ন্ত্রন নিয়ে উল্টা ঘুরে দারুণ এক শটে দর্শনীয় প্রথম গোলটি করেছিলেন তিনি। একক প্রচেষ্ঠায় দ্বিতীয় গোলটিও করেছিলেন আলফাজ আহমেদ। আর জয় নিশ্চিত করা তৃতীয় গোলটি আসে রোকনুজ্জামান কাঞ্চনের পা থেকে।

  • প্রতিপক্ষ লেবানন, ২০১১ সাল, ঢাকা

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রথমদিকে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটির জয় যদি হয় দারুণ এক অর্জন তাহলে লেবাননের বিপক্ষেও জয়টিকে সেখানেই রাখতে হবে। কেউ কেউ তো আবার এই জয়টিতে সবার উপরে রাখতে চাইছেন। কারণ শক্তির বিচাঁরে বাংলাদেশ থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে লেবানন। সেই দলকে পরাজিত করাটা অনেক বড় ব্যপার হিসেবে পরিচিত।

নিজেদের মাটিতে ২-০ গোলের জয়টি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের বিচারে সেরাদের সেরা হিসেবে গন্য করা হয়ে থাকে। তবে একটা আক্ষেপও রয়েছে। কারণ প্রথম লেগে লেবাননের মাটিতে ৪-০ গোলের পরাজয় বড় কিছু থেকে বঞ্চিত করেছে বাংলাদেশকে। দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে পারলে জাহিদ হাসান এমিলিরা এশিয়ার সেরা ১৫টি দলের একটি হয়ে যেত। ইতিহাস সৃষ্ট করা সেই ম্যাচের গোল দুটি করেছিলেন মিঠুন চৌধুরী ও জাহিদ হাসান এমিলি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...