বাংলাদেশ ক্রিকেট কি তবে পিছিয়ে যাচ্ছে? টাইগারদের শক্তি কি সময়ের সাথে কমে যাচ্ছে – এসবের উত্তর হ্যাঁ বা না দুটোই আপনি দিতে পারেন, কিন্তু পরিসংখ্যান নেতিবাচক উত্তরই দিবে। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ের দিকে তাকালে ব্যাপারটি স্পষ্ট হবে। কেননা গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ব্যাটিং পারফরম্যান্স ক্রমাগত নিচের দিকে নামছে।
মাশরাফি মর্তুজার সময়ের কথাই ভাবা যাক; ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত। এই মেয়াদে বাংলাদেশ ওয়ানডে দল সবমিলিয়ে ৫৯ ইনিংস ব্যাট করতে নেমেছিল। এর মধ্যে মাত্র সাতবার টাইগাররা অলআউট হয়েছে ২০০ এর কম রানে। শতাংশের হিসেবে সেটি মাত্র ১১.৮৬ ভাগ।
অন্যদিকে ২০১৯ সালের পর থেকে বাংলাদেশ খেলছে তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে। এসময় মাত্র ৩৪ ইনিংস ব্যাটিং করেছে টিম টাইগার্স, অথচ ২০০ এর কম রানে অলআউট হয়েছে ১২ বারই। শতাংশের হিসেব অনুযায়ী যা ৩৫.৩ ভাগ; অর্থাৎ আগের সময়ের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং সামর্থ্য যে কমে এসেছে সেটা স্পষ্ট। তবে এর জন্য শুধু অধিনায়ককে কাঠগড়ায় তোলা পুরোপুরি অযৌক্তিক। মূলত ব্যাটারদের ফর্মে ভাটা দেখা দেয়াতেই এমন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
২০১৫ সালের পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তামিম ইকবাল ছিলেন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে; পাকিস্তান সিরিজ সহ আরো বেশ কয়েকটি প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এই ওপেনার অতিমানবীয় পারফরম্যান্স করেছেন। এছাড়া মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান সবাই ছিলেন ছন্দে। আবার তরুণদের মাঝে সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমানও রানের মাঝে ছিলেন।
কিন্তু ২০১৯ সালের পর থেকে তামিম ইকবাল ছন্দ হারিয়েছেন অনেকখানি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তো ইতোমধ্যে অফ ফর্মের কারণে বাদ পড়েছেন। মুশফিক, সাকিব এখনো পারফর্ম করলেও আগের মত এতটা ধারালো নন। আবার তরুণ শান্ত, হৃদয়ের আবির্ভাব খুব বেশিদিন আগের নয়।
এতকিছুর পরেও অবশ্য এমন ধারাবাহিক ব্যাটিং বিপর্যয় মেনে নেয়ার মত নয়। বাংলাদেশের বোলিং বিভাগ এখন দুর্দান্ত, কিন্তু প্রতিনিয়ত ব্যাটারদের ভুলে বোলাররা ঠিকঠাক সুযোগ পাচ্ছেন না ম্যাচ জেতানোর।
এমন দারুণ একটা বোলিং বিভাগকে কাজে লাগাতে পারলে হয়তো এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপের মত আসরে স্মরণীয় কিছু করা যেত। কিন্তু সেটা আর হচ্ছে কই; এবারের মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে যে ব্যাটিং প্রদর্শনী ছিল টাইগারদের সেটা দেখে হতাশ হননি এমন ভক্ত-সমর্থক বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর এমন পরিস্থিতি থেকে বের হতে না পারলে বিপদের মেঘ আরো ঘনীভূত হবে বাংলার আকাশে।