উল্টে গেলো, পাল্টে গেলো

নিজেদের ঘরের মাটিতে টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাও উপমহাদেশের একটা দলের বিপক্ষে। পেসারদের নিয়েই সাজানোর কথা প্রোটিয়াদের আক্রমণভাগ। তবে শোনা যাচ্ছে, উইকেট থেকে নাকি স্পিনাররাও সহায়তা পেতে পারেন। এই শোনা কথাকে সমর্থন করে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই স্পিনার নিয়ে মাঠে নামা। নিজেদের শক্তি থেকে সরে এসে স্পিনারদের নিয়ে পরিকল্পনা সাজিয়েছে প্রোটিয়ারা। বলা ভালো বাংলাদেশ বাধ্য করেছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নতুন করে পরিকল্পনা সাঁজাতে।

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বিশ্বসেরা দলগুলো গিয়েও খাবি খায়। ওরকম একটা কন্ডিশনে প্রোটিয়া পেসাররা রীতিমত ভয়ংকর হয়ে উঠেন। টিকে থাকাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের জন্য তো দক্ষিণ আফ্রিকা সফর মানেই এক দুর্বিষহ স্মৃতি। আর টেস্ট ক্রিকেটে তো বাংলাদেশের অবস্থা আরো নাজেহাল।

তবে গত তিন মাসে বাংলাদেশ দল নিজেদের গল্পটা নতুন করে লিখেছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুইতে টেস্ট জয়। নড়েচড়ে বসে ক্রিকেট দুনিয়া। নিউজিল্যান্ডের কঠিন কন্ডিশনে এমন এক টেস্ট জয় বাংলাদেশকেও আত্মবিশ্বাস জোগায়। তবুও অনেকেই জয়টাকে স্রেফ একটা মিরাকেল বলেই ভেবে নিতে চাচ্ছিলেন। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয় সত্যিই সবকিছু ওলট পালট করে দিল।

পুরো ক্রিকেট দুনিয়া বাংলাদেশকে কে নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। তবে কপালে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজটা সবচেয়ে বেশি পড়েছিল প্রোটিয়াদের। কেননা বাংলাদেশের সাথে তাঁদের টেস্ট সিরিজও খেলতে হবে। খুব সম্ভবত এই প্রথম বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে গিয়ে তাঁদের বুকে কাপন ধরালো। তাও মাঠের ক্রিকেটটা শুরু হবার আগেই।

দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলিং কন্ডিশনে বাংলাদেশ নিজেদের পেসারদের উপর ভরসা রেখেছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা সেই সাহস দেখাতে পারেনি। প্রথম টেস্ট শুরু হবার আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল উইকেট একটু ধীর হতে পারে। এমনকি স্পিন ধরলেও অবাক হবার কিছু থাকবেনা। বাতাসে উড়তে থাকা সেই কথার সত্যতা পাওয়া গেল দক্ষিণ আফ্রিকার একাদশ দেখে।

ডারবানে প্রথম টেস্টে প্রোটিয়ারা নেমেছে পুরোদস্তুর দুইজন স্পিনার নিয়ে। অভিজ্ঞ কেশব মহারাজের সাথে মাঠে নেমেছেন ডানহাতি স্পিনার সিমন হারমের। একাদশ থেকেই প্রোটিয়াদের পরিকল্পনা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। নিজেদের ঘরের মাটিতে নিজেদের শক্তির উপর আস্থা না রেখে স্পিনারদের নিয়ে সাজানো হয়েছে বোলিং আক্রমণ।

যদিও বাংলাদেশ তাঁদের তিন পেসার এবং এক স্পিনার নিয়েই মাঠে নেমেছে। স্পিনার হিসেবে বাংলাদেশের একাদশে আছেন শুধু মেহেদী হাসান মিরাজ। তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেনদের কাঁধে চড়েই এবার দক্ষিণ আফ্রিকা জয় করতে চায় বাংলাদেশ। যদিও দুর্বলতার কারণে প্রথম টেস্টটা খেলা হচ্ছেনা আরেক গুরুত্বপূর্ণ পেসার শরিফুল ইসলামের। তাঁর জায়গায় মাঠে নেমেছেন খালেদ আহমেদ।

সবমিলিয়ে যেই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এসে উপমহাদেশের দলগুলো খাবি খায় প্রোটিয়া পেস আক্রমণ সামলাতে। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা মাঠে সেই পেসারদের চোখে চোখ রেখে লড়াই করার সাহসটা দেখিয়েছে ওয়ানডে সিরিজে। বাংলাদেশের ক্রিকেট রীতিমত নতুন করে পরিকল্পনা সাঁজাতে বাধ্য করেছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। তাইতো টেস্ট সিরিজে প্রোটিয়াদের এই স্পিন নির্ভরতা।

তবে প্রোটিয়াদের এই পরিকল্পনায় বাংলাদেশের ভয়েরে জায়গাও আছে। উইকেট যদি স্পিনারদের বেশিই সহায়তা করে তাহলে স্পিনার সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ। কেননা দলে সাকিব আল হাসানও নেই। সবমিলিয়ে মাঠের ক্রিকেটে কে জিতবে সেটা সময়ই বলে দিবে তবে মাঠে নামার আগেই বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে একবার হারিয়ে দিয়েছে।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Share via
Copy link