বাংলাদেশ ও ডেডলাইন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপ তো খুব বেশি দূরে নেই। ইতোমধ্যেই বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে মৃদু সুবাস। এক এক করে প্রতিটা দলই নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করে ফেলছে। তবে এদিকটায় খানিকটা কালক্ষেপনই করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। অথৈ সাগরে পড়ে থাকা টাইগারদের এখনও যেন সেরা দল নির্বাচণ করাও সবচেয়ে কঠিন কাজ।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটা বাংলাদেশ দল ঠিক এখনও রপ্ত করতে পারেনি। এশিয়া কাপের ভরাডুবির পর দল নির্বাচণে আরও বেশি সতর্ক হতেই হচ্ছে নির্বাচকদের। নানান রকমের গুঞ্জন তো হোম অব ক্রিকেটের আকাশে বাতাসে। সে সব গুঞ্জনই যেন আরও বেশি আগ্রহ বাড়াচ্ছে। তবে পূর্ণাঙ্গ দল পেতে হয়ত আরও দুই একদিন অপেক্ষা করতে হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট সমর্থকদের।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হয়ে গেছে ক্যাম্প। সেখানে তিনদিন খেলোয়াড়দের ম্যাচ পরিস্থিতির প্রস্তুতি চলবে। ঠিক এরপরই হয়ত আসতে চলেছে বাংলাদেশের স্কোয়াড। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলতে চলে গিয়েছেন ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। তিনি ছাড়া দলের বাকিরা প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। সাকিব আল হাসানের দলে থাকা যেমন শতভাগ নিশ্চিত তেমনি নিশ্চিত আরও বেশ কিছু খেলোয়াড়ের দলে থাকা।

সেদিক বিবচেনায় সবার আগেই থাকবে লিটন কুমার দাসের নাম। ইনজুরির কারণে তিনি ছিলেন না এশিয়া কাপের ম্যাচে। তিনি ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরছেন। তবে তাক ঘিরেও দানা বেঁধেছে নতুন গুঞ্জন। তাঁকে হয়ত দেখা যেতে পারে অন্য রোলে। সম্ভবত চার নম্বর পজিশনের জন্যে তাঁকে বিবেচনা করছে টিম ম্যানেজমেন্ট। মুশফিকুর রহিম টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন।

তাই শূন্যস্থান পূরণের জন্যে হয়ত লিটনকে দেখা যেতে পারে চার নম্বরে। অন্যদিকে সবচেয়ে বড় গুঞ্জনের আনাগোনা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ঘিরে। নির্বাচকদের পরিকল্পনায় নেই রিয়াদ। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার একটা লম্বা সময় ধরে নেই ফর্মে। তাঁর ফর্মে ফেরার আভাসও মিলছে না সহসাই। তাই তাঁকে দলে রাখতে চাননা নির্বাচকরা। তবে ভিন্ন মত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের। তিনি চলে চাইছেন এই অভিজ্ঞ ক্যাম্পেনারকে।

ধরেই নেওয়া যাক তিনি থাকছেন দলে। তাহলে খুব সম্ভবত ছয়-সাত নম্বরে দেখা যেতে পারে তাঁকে। সেদিক বিবেচনায় ইয়াসির আলী চৌধুরি ও নুরুল হাসান সোহানদের একাদশে জায়গা হবার সুযোগ যেকোন একজনের মিলবে না। তবে তাঁরা তিনজনই দলে থাকছেন সেটা সুনিশ্চিত। অন্যদিকে, আফিফ হোসেন ধ্রুব পরীক্ষিত পারফরমার। তিনিও চড়ে বসবেন অস্ট্রেলিয়ার বিমানে।

বাংলাদেশের মূল সমস্যার জায়গাটা আসলে ওপেনিং পজিশনে। সেখানে আশান্বরুপ ফলাফলের দেখাই মিলছে না। মেক শিফট ওপেনার হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাব্বির রহমান রুম্মানের জুটির উপর ভরসা করতে পারে নির্বাচকরা। বাড়তি ওপেনার হিসেবে অবশ্য পরিকল্পনায় রয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

সৌম্য সরকারের নামও বেশ প্রবল। তবে নাঈম শেখের সম্ভাবনাটা বড্ড ক্ষীন। এশিয়া কাপের মঞ্চেও তো তিনি ছিলেন ব্যর্থ। তরুণ পারভেজ হোসেন ইমন নিজেকে এখনও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মেলে ধরার সুযোগ পাননি। তবুও তিনিও থাকছেন প্রাথমিক ছকে।

স্পিন ডিপার্টমেন্টে নাসুম হোসেনের দলে থাকাটা একপ্রকার অবধারিত। সেই সাথে স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে শেখ মেহেদি হাসানের অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলতে যাওয়ার সম্ভাবনাও বেশ প্রবল। অজিদের বাইশ গজ এবং কন্ডিশন সবই পেস বান্ধব। সেদিক থেকে বাংলাদেশ বাড়তি পেসার নিশ্চয়ই নিয়ে যেতে চাইবে। মুস্তাফিজুর রহমানের সাথে তাসকিন আহমেদ থাকছেন দলে সে নিয়ে বিবাদের সুযোগ নেই।

পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে হয়ত দলে থাকতে পারেন সাইফউদ্দিন। নির্বাচকদের দ্বন্দের সৃষ্টি হতে পারে শরিফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদকে নিয়ে। এই দুইজন বোলারের কাকে ঠিক দলে রাখা যাবে তা নিয়ে বিস্তর আলাপ হয়ত করতে হতে পারে নির্বাচকদের। তবে হাসান মাহমুদ বেশ ইনজুরি প্রবণ আর তাছাড়া বা-হাতি পেসার বাড়তি সুবিধা আদায় করতে পারবে। সেদিক বিবেচনায় শরিফুল ইসলাম খানিকটা এগিয়ে থাকবেন।

তাঁদের সাথে হয়ত এবাদত হোসেনও নিজেকে আবিষ্কার করতে পারেন অস্ট্রেলিয়াগামী বিমানে। তবে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হয়ত হবে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন দেশে ফেরা মাত্র। কেননা তিনি দল নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেন, সে তো রীতিমত ওপেন সিক্রেট। তাছাড়া দলের নতুন কোচ খেলোয়াড়দের পরখ করবার সুযোগটা হাতছাড়াও করতে চাইছেন না। বাংলাদেশ দলের চমকের সম্ভাবনা কম। তবে এদের মধ্য থেকেই ১৫ জন যাবেন বিশ্বকাপ মিশনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link