জয় দিয়ে উজবেকিস্তান যেতে চায় মেয়েরা

দীর্ঘ আড়াই বছর পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার উত্তাপটা বেশ ভালই টের পেয়েছে বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা। প্রথম ম্যাচেই তারা নেপাল জাতীয় দলের কাছে হেরেছে ১-২ গোলের ব্যবধানে। এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে খেলতে যাবার আগে শেষ ম্যাচে আজ একই প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হবে সাবিনা খাতুনের দল।

বিকাল সোয়া পাঁচটায় জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামছে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের পরও তাই হাল না ছেড়ে এশিয়া সেরা আসরের প্রস্তুতিটা যাতে ভাল হয় সেদিকেই লক্ষ্য রাখছেন টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্যরা। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন শীষ্যদের সেবাবেই তালিম দিয়েছেন।

দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামায় কিছুটা জড়তা কাজ করছিল, সেটি প্রথম ম্যাচে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকেই। আর নেপাল শক্তিতে বাংলাদেশের চেয়ে খুব একটা এগিয়ে নেই। ২০২২ সালের মেয়েদের এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের গুরুত্বপূর্ণ দুটি ম্যাচের আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে বর্তমানে হিমালয় কণ্যা দেশটিতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দল। প্রথম ম্যাচে নেপালের কাছে পরাজিত হলেও শেষ ম্যাচটা জিতে উজবেকিস্তানের বিমানে চড়তে চায় মেয়েরা।

এই নেপালের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বাংলাদেশ নারী জাতীয় দল সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাঠে নেমেছিল ২০১৯ সালের মার্চ মাসে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালের সে ম্যাচে ভারতের কাছে ৪-০ গোলে হেরে দীর্ঘ সময়েল জন্য বিরতিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ইরান ও জর্ডানের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ম্যাচ খেলার ঘাটতি মেটাতেই নেপাল পাঠানো হয়েছে দলকে।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনর (বাফুফে) খরচও হয়েছে দ্বিগুনেরও বেশি। মূলত দীর্ঘ দিন ধরে আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলায় মানসিক অবস্থার পাশাপাশি পারফরম্যান্সের দিক দিয়েও বেশ পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। যে কারণেই নেপালের সাথে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচের আয়োজন করে ফুটবল ফেডারেশনের নারী উইং।

দলের সহকারী কোচ মাহবুবুুর রহমান লিটু বলেছেন, ‘অনেকদিন পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলায় কিছুটা জটিলতা কাজ করেছে মেয়েদের মধ্যে। এছাড়া জড়তা কাটিয়ে মেয়েরা আজকে নতুন করে আরো উদ্যমী ও শক্তিশালী হয়ে ভালো ফলাফল করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। দলের সবাই সুস্থ আছে এবং যে কোনো সময় ও পরিস্থিতিতে খেলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। মেয়েদের সেভাবেই খেলার জন্য তৈরি করা হয়েছে।’

এছাড়া প্রথম ম্যাচের ভুল-ত্রুটি গুলো দ্বিতীয় ম্যাচে আর করতে চায় না মেয়েরা। এ ম্যাচে আরও ভাল ফুটবল খেলার কথা জানিয়েছেন ফুটবলার মিসরাত জাহান মৌসুমী, ‘প্রথম ম্যাচে পরাজয়েল পর আজকের ম্যাচে ভাল খেলাটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ম্যাচে আমাদের যে ভুলত্রুটিগুলো হয়েছে, কোচ সেগুলো ধরে ধরে শুধরে দিচ্ছেন অনুশীলনের মাধ্যমে। এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের প্রস্তুতির জন্য আমাদের এই ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দিয়েছে ফুটবল ফেডারেশন। উজবেকিস্তান যাওয়ার আগে আমরা নিজেদের আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করে তুলছি। আশা করি নেপালের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ দল ভালো খেলতে পারবে।’

২০২২ নারী এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের খেলায় আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর জর্ডান এবং ২২ সেপ্টেম্বর ইরানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে চ্যাম্পিয়ন হলেই কেবল মূল পর্বে উঠতে পারবে বাংলার মেয়েরা।

এদিকে নেপালি ফুটবল কন্যাদের সঙ্গে কখনোই পেরে ওঠেননি সাবিনারা। হোক তা আন্তর্জাতিক কিংবা প্রীতি ম্যাচে। নেপালের বিপক্ষে খেলা এ পর্যন্ত সাত ম্যাচের একটিতেও জয় নেই বাংলাদেশের মেয়েদের। ছয়টিতে জিতে নিজেদের আধিপত্য বেশ ভালভাবেই প্রমাণ রেখেছে নেপাল।

মাত্র একটি ম্যাচ ড্র হয়। কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত প্রথম ম্যাচের শেষদিকে তহুরা খাতুন এক গোল করে মান বাঁচালেও ম্যাচ বাচাঁতে পারেননি। সেদিন প্রথম ম্যাচের ভুল শুধরে ভাগ্য বদলের আশায় আজ মাঠে নামবেন সাবিনারা। ম্যাচের আগেরদিন সকালে জিম ও স্ট্রেচিং করেছেন সানজিদা খাতুন, শামসুন্নাহার, তহুরা খাতুনরা। এরপর বিকালে অনুশীলন করেন।

মেয়েদের উপর আস্থা না হারিয়ে পাশে থাকার কথা জানিয়ে কোচ গোলাম রব্বানি ছোটন বলেন, ‘একটা ম্যাচ দেখেই সবকিছু বিবেচনা করা ঠিক হবেনা। আমরা প্রথম ম্যাচের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে মাঠে নামবে মেয়েরা। আশা করি দ্বিতীয় ম্যাচে ইতিবাচক কিছু দেখতে পাবেন আপনারা।’

নেপালের বিপক্ষে যদিও এখনো জয়শূন্য মেয়েদের জাতীয় দল। বিষয়টি মেয়েদেরকে ঠিকঠাক বোঝানো হয়েছে। এখন সেটাই মাঠে প্রয়োগের পালা। প্রতিপক্ষ ভেন্যুতে শেষ ম্যাচের পারফরম্যান্স দেখেই উজবেকিস্তানে দল কেমন করতে পারে সেটার আগাম ধারনা নেওয়া যাবে। নেপালের পর সেখানেও যে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বে হবে মেয়েদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link