অ্যারন জোন্সের ক্রিকেটের হাতেখড়ি হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। সেখান থেকেই সম্ভবত আয়ত্ব করেছেন বিশাল সব ছক্কা হাঁকানোর কৌশল। কি এক অভাবনীয় ইনিংস খেলে ফেললেন তিনি নিজের খেলা প্রথম বিশ্বকাপে। ১০টি বিশাল ছক্কায় সাজিয়েছেন নিজের ইনিংস। এমন এক ইনিংসই তো বিনোদনের সর্বোচ্চ খোরাক মেটায়। তবে প্রশ্নও জেগে ওঠে মনে।
বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগের দিন বাংলাদেশ খেলেছে প্রস্তুতি ম্যাচ। সেই ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটারদের হতশ্রী পারফরমেন্স বড্ড পীড়া দিয়েছে টাইগার সমর্থকদের। জোন্সের খেলা ইনিংসটি নিশ্চয়ই বাড়িয়েছে আক্ষেপ। বাংলাদেশী ব্যাটাররা যে ছক্কা হাঁকানোতে পিছিয়ে আছেন যোজন যোজন দূরে।
এক ইনিংসেই জোন্স যেখানে দশটি ছক্কা হাকিয়েছেন, সেখানে বাংলাদেশের স্রেফ তিনজন ব্যাটার দশ বা তার বেশি ছক্কা হাকিয়েছেন নিজেদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারে। ২০০৭ সাল থেকে হওয়া প্রতিটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। তার নামের পাশেই শোভা পাচ্ছে সবচেয়ে বেশি ছক্কা। সংখ্যাটা মোটে ২৩।
এরপরের স্থানে রয়েছেন দেশসেরা ওপেনার খ্যাত তামিম ইকবাল খান। তার হাঁকানো ছক্কার সংখ্যা ১৫টি। সাকিবে ২৩ ছক্কার জন্যে প্রয়োজন হয়েছে ৩৬ ইনিংস। অন্যদিকে তামিম খেলেছেন ২৩টি ইনিংস। তৃতীয় অবস্থানে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তামিমের থেকে তিন ইনিংস বেশি খেলে ছক্কা মারতে পেরেছেন মাত্র ১১টি।
এখানেই মূলত সেই আক্ষেপ নামক তিক্ত অনুভূতি জন্ম নেয়। বাংলাদেশের ব্যাটাররা কেন বড় বড় সব শট খেলতে পারেন না, সে প্রশ্ন নতুন করে উদীত হয়। অভিজ্ঞতা নেহায়েত কম নেই। অন্তত অ্যারন জোন্সের তুলনায় তো বেশিই রয়েছে সকলের। তবে মানসিকতায় বড্ড পিছিয়ে টাইগার ব্যাটাররা।
‘পেশিশক্তি নেই’ এমন এক হীনমন্যতায় ভোগেন বাংলাদেশের প্রতিটা ব্যাটার। তারা ভাবেন স্রেফ পেশির জোরেই বলকে সীমানার বাইরে পাঠানো যায়। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটাররা যে উইকেটের ধরণই ঠিকঠাক বুঝতে পারেননা। কোন বলে হাতখুলে শট চালাতে হবে, সেটাও কোন কোন ক্ষেত্রে আন্দাজ করতে পারেন না। বলের মেরিট বুঝে শট খেলার সক্ষমতাকে চাইলেই প্রশ্ন করা যায়।
এমন হীনমন্য মানসিকতা নিয়ে আর যাই হোক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলা দায়। প্রতিটা মুহূর্তে ভয়ে মুষড়ে যেতে হবে, প্রতিপক্ষকে দানবের সমান সমীহ করতে হবে। নির্ভয়ে একটা ব্যাট চালাতেও দ্বিধা হবে। তাতে করে যুক্তরাষ্ট্র এমন অভাবনীয় ম্যাচে জয় পেলেও বাংলাদেশ পায় না।
এদিক থেকেই ঢের পিছিয়ে বাংলাদেশ। সাহসিকতা, পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকি নেওয়া, বোলার নয় বলের মেরিট বুঝে খেলা, উইকেট যথাযথভাবে পড়তে পারা ও সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা- সর্বক্ষেত্রেই বাংলাদেশী ব্যাটারদের দূর্বলতা দেখা যায় খালি চোখে। আর সেই চোখকে প্রশান্তি দেয় অ্যারন জোন্সরা, সাথে নয়ন জলে ভাসে আক্ষেপের নৌকা।