ইংলিশ ক্রিকেটে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের কদর

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সূচির বাইরে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে এখন খেলা নেই বললেই চলে। ঘরোয়া লিগ ক্রিকেটারদের জন্য সময়টা তাই একরকম অবসর কাটানোর মতোই। তবে এই অবসর সময় কাটানোর জন্য অনেক ক্রিকেটারই এখন বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।

কেউ ইংল্যান্ডে যাচ্ছেন, কেউবা আবার যুক্তরাষ্ট্রে। ভ্রমণ, ছুটির পাশাপাশি সেখানে তাঁরা আবার ক্রিকেটও খেলছেন। বছরের এ সময়টাতেই চলে কাউন্টি ক্রিকেটের মাইনর লিগ। আর এ সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন এক সময়কার জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা।

এই যেমন ইমরুল কায়েস খেলছেন ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লিগ ডিভিশন ওয়ানে। এ ছাড়া সাব্বির রহমান, শামসুর রহমান, জহুরুল ইসলাম অমি, জুনায়েদ সিদ্দিকী, এনামুল হক জুনিয়র খেলছেন ডিভিশন টুতে। অবশ্য ইংল্যান্ডে এ টুর্নামেন্টগুলো অপেশাদার লিগ বলেই বিবেচিত হয়। তবে সেখানে প্রতিদলে একজন বিদেশির সঙ্গে দুইজন পেশাদার ক্রিকেটার খেলানোর সুযোগ রয়েছে। মূলত কাউন্টি বা মাইনর কাউন্টির নিচের ধাপ এটি।

ইংল্যান্ড প্রিমিয়ার লিগের এপিং ক্রিকেট ক্লাবে খেলেন ইমরুল কায়েস। জাতীয় দলের বাইরে থাকলেও এ ওপেনার ঘরোয়া ক্রিকেটে পরিচিত এক নাম। তারপরও পেশাদার ক্রিকেটার হয়েও কেন অপেশাদার লিগে খেলছেন? ইমরুল কায়েস অবশ্য টুর্নামেন্টটিকে নিজের প্র্যাকটিসের দারুণ এক সুযোগ বলেই আখ্যায়িত করেছেন।

তাঁর মতে, ‘দেশে এখন খেলা নেই। তাই প্র্যাকটিসের সুযোগটাও কমে গেছে। তাই এ লিগ খেলা। আর এখানে খেলে নিজের প্রস্তুতি যেমন হচ্ছে, তেমনি আয় রোজগারও হচ্ছে। তাছাড়া পরিবার নিয়ে ইংল্যান্ডে ছুটি কাটানোও যাচ্ছে। সব মিলিয়ে সময়টা ভালই যাচ্ছে।’

এ দিকে গত বছর থেকেই পরিবার নিয়ে ইংল্যান্ডে থাকছেন বাঁহাতি স্পিনার এনামুল হক জুনিয়র। সেখানে তিনি মাইটি টাইগার্স নামে ডিভিশন টু’র একটি ক্লাবে খেলছেন। কোচিং করাতে গিয়ে সাবেক ক্রিকেটার আফতাব আহমেদ এখন যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা। ইনজুরির কারণে ত্রিশেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার আটকে যাওয়া পেসার আবুল হোসেন রাজু এখন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়মিত খেলেন। সম্প্রতি নাসির হোসেনও যুক্তরাষ্ট্রে নিজের ঘাঁটি গড়তে দেশ ছেড়েছেন।

জাতীয় দলের সাবেক পেসার তাপস বৈশ্য কাজ করেন নিউইয়র্কের একটি ক্রিকেট একাডেমিতে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে অবশ্য খুব একটা আশাব্যঞ্জক উত্তর পাওয়া যায়নি তাঁর কাছে। তাঁর মতে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে খেলে তেমন টাকা পয়সা পাওয়া যায় না। এখানে প্রবাসী ভারতীয়রাই খেলেন, লিগ চালান। প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও কয়েকটা দল আছে।  মূলত ক্রিকেটারদের জন্য এখানে থাকা খাওয়া, দেশে ফেরার মতো কিছু অর্থ তাঁরা দেয়। তাই বেশিরভাগ ক্রিকেটারই ছুটি কাটানোর উদ্দেশ্যে এসেই খেলে যান।’

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বাংলাদেশের প্রায় ৩০ জনের মতো ক্রিকেটার যুক্তরাষ্ট্রে খেলার জন্য দেশটিতে ভিসা পেয়েছেন। একইভাবে, ইংল্যান্ডে খেলার জন্য আরো অনেকেই অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে ইংল্যান্ড আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য হলো, ইংল্যান্ডে ন্যাচারাল উইকেটে খেলা হয়, আর যুক্তরাষ্ট্রে খেলা চলে ম্যাট উইকেটে।

যুক্তরাষ্ট্রে খেলার ব্যাপারে তাপস বৈশ্যর কাছ থেকে ক্রিকেটারদের নিয়ে তেমন আশার কথা না শোনা গেলেও ইংল্যান্ডে খেলার ব্যাপারে এনামুল হক জুনিয়র ইতিবাচক দিকই দেখছেন বেশি। তাঁর মতে, ব্যাটারদের জন্য শেখার উপযুক্ত জায়গা হচ্ছে ইংল্যান্ড। এ ছাড়া  ইংলিশ বলা, নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো থেকে শুরু করে আরো অনেক দক্ষতা বাড়ে এই লিগগুলোর মাধ্যমে।

যুক্তরাষ্ট্র আর ইংল্যান্ড, এই দুই দেশের লিগে প্রায় গোটা পঞ্চাশেক বাংলাদেশি ক্রিকেটার নিয়মিতই অংশ নিচ্ছেন। যদিও তাঁরা খেলছেন অপেশাদার লিগে। তারপরও অবসর সময়ে ভ্রমণের পাশাপাশি ক্রিকেট নিয়েও ব্যস্ত থাকতে পারছেন। যেটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক।

তবে এর বিপরীতে কিছু প্রশ্নও উঠতে পারে যে, যেভাবে ক্রিকেটাররা ক্রিকেটের জন্য পরবাসী হচ্ছেন, তাতে একটা সময় পর সে সব জায়গা থেকে ভালো প্রস্তাব পেলে, দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেই মুখ ফিরিয়ে নেবেন না তো তাঁরা? ক্রিকেটের বিশ্বায়নে জাতীয় দল রেখে ভিনদেশি ক্লাবের দিকে ছোটা, সেটা তো এখন হরহামেশাই ঘটছে।

সেই স্রোতে, বাংলাদেশের এই ক্রিকেটাররা গাঁ ভাসালে ক্ষতিটা হবে দেশের ক্রিকেটেরই। তখন জাতীয় দলের রাডার থেকে দূরে সরে গেলেই একজন ক্রিকেটারের বাইরের দেশের ক্রিকেট লিগের দিকে খেলার ঝোঁক তৈরি হবে। ক্রিকেটের চলমান এ স্রোত সেই দিকেই টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কে জানে, অদূর ভবিষ্যতে, এই যুক্তরাষ্ট্র-ইংল্যান্ডই হতে পারে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের সবচেয়ে বড় বাজার!

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link