বড় চ্যালেঞ্জের সামনে বাংলাদেশের নতুন টপ-অর্ডার

ভারতগামী বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলটারই ছিল না কোনো বিকল্প ওপেনার। লিটন দাস আর নবাগত তানজিদ হাসান তামিমকে দিয়েই তাই আঁটা হচ্ছে ইনিংস শুরুর রণকৌশল। মূলত ব্যাট হাতে মিরাজের দুরন্ত ফর্মই শেষ পর্যন্ত টিম ম্যানেজমেন্টকে বিকল্প ওপেনারের ভাবনা থেকে সরে আসতে বাধ্য করেছে।

সর্বশেষ ১০ ম্যাচের পরিসংখ্যান আবার বলে, প্রায় প্রতি ম্যাচেই ২০/২১ রান তুলতেই প্রথম উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। তবে বিশ্বকাপের আগে আশা জাগানিয়া ব্যাপার হচ্ছে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি শত রান পেরিয়েছিল সাবলীল গতিতে। রান পেয়েছিলেন দুই ওপেনারই। একই সাথে, যে মিরাজকে মেকশিফট ওপেনার বিবেচনা করা হচ্ছে, সেই মিরাজও দুই প্রস্তুতি ম্যাচেই পেয়েছেন ফিফটি।

বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পাওয়ার মতো তেমন পারফর্ম করে আসেননি তানজিদ হাসান তামিম। তবে বিশ্বমঞ্চের পর্দা ওঠার আগে ঠিকই নিজেকে ঝালিয়ে নিতে পেরেছেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮৪ রানের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও খেলেছেন ৪৫ রানের সাবলীল একটি ইনিংস। তানজিদ তামিমকে সুযোগ দিয়ে যে, তিনি জ্বলে উঠতে পারবেন তা নিয়ে অবশ্য আত্মবিশ্বাসীই ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচক প্যানেলের সদস্য হাবিবুল বাশার সুমন।

সম্প্রতি ক্রিকেট গণমাধ্যম ক্রিকবাজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি তানজিদকে ইমার্জিং কাপ থেকে দেখছি। সত্যি বলতে ও এখন যেভাবে শট খেলছে তা আমাকে মোটেই বিস্মিত করে না। আমার চাওয়াটা হলো, ও যাতে এই ছন্দটা মূলপর্বেও নিয়ে যেতে পারে।’

বিশ্বকাপ দলে তামিম ইকবাল ছিটকে পড়ার কারণেই জায়গা হয়েছে তানজিদ তামিমের। তরুণ এ ওপেনারের সাথে তামিম ইকবালের তুলনা অমূলক মন্তব্য করে হাবিবুল বাশার আরো বলেন, ‘এই ধরনের তুলনার কোনো মানে হয় না। প্রতিটা ক্রিকেটারেরই নিজস্বতা আছে। আমাদের উচিৎ তামিমকে ওর মতো করে খেলতে দেওয়া। এখন আমরা যদি শুধু তামিম ইকবালের সাথে তুলনাই করতে থাকি, তাহলে সেটা মোটেই ওর জন্য ভাল হবে না।’

এশিয়া কাপে মেকশিফট ওপেনার হিসেবে খেলতে নেমেই আফগানদের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। মিরাজ তাঁর সেই ফর্মের স্রোত টেনে এনেছেন বিশ্বকাপের দুই প্রস্তুতি ম্যাচেও। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬৭ রানের ইনিংস খেলার পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেও করেছেন ৭৪ রান। মিরাজের এমন ব্যাটিং ফর্ম স্বস্তিই দিচ্ছে হাবিবুল বাশারকে।

এ নিয়ে তিনি জানান, ‘মিরাজ দারুণ একটা প্যাকেজ। একটা সময় আপনার মনে হতেই পারে, মিরাজকে দিয়ে হবে না। কিন্তু সে আপনাকে প্রতিনিয়ত ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করে যাবে। আসলে ক্রিকেটে নিজের আলাদা জায়গা তৈরি করতে হলে ভিন্ন কিছু করতেই হবে। মিরাজ সেটা করারই প্রাণান্ত চেষ্টা করে।ওর সামর্থ্য নিয়ে কারো প্রশ্ন নেই। সে আসলে সত্যিকারের ফাইটার ক্রিকেটার।’

২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের টপ অর্ডার সামলেছিলেন তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার আর সাকিব আল হাসান। এবার সেই ৩ জনের দু’জন দলেই নেই। আর সাকিবের ব্যাটিং পজিশন নেমে গিয়েছে চার বা পাঁচ। ৪ বছরের ব্যবধানে, এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের টপ অর্ডার সামলানোর দায়িত্ব থাকছে লিটন দাস, তানজিদ তামিম ও নাজমুল হোসেন শান্তর উপর। মেকশিফট ওপেনার হিসেবে এই দৌড়ে নিশ্চিতভাবেই থাকবেন মিরাজও।

ভারত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের নতুন এ টপ অর্ডার কতটা আলো ছড়াতে পারবে, তা সময়ই বলে দিবে। তবে নতুনত্বের এ জয়োগানে এবার বিশ্বকাপ রাঙানোর দিকেই চোখ সাকিব আল হাসানের দলের।

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link