মারবেলার শান্ত সকালে যখন গলফের ছন্দে নিজের অবসর জীবন গুছিয়ে নিচ্ছিলেন উইজেক শেজনি, তখন যদি কেউ বলত — ‘তুমি এবার ক্লাসিকো খেলবে!’ —হয়তো তিনি এক চুমুক কফির সঙ্গে সেই কথাটাকেও গিলে ফেলতেন হালকা হাসিতে। ফুটবল তখন তাঁর জন্য অতীত। দশাসই একটা ভুড়ি বানিয়েছেন, বিয়ার খাচ্ছেন, সিগারে টান দিচ্ছেন – পুরোদস্তর অবসর জীবন।
পোল্যান্ডের হয়ে ইউরো ২০২৪-এর পর অবসর ঘোষণা করেছেন, ক্লাব ফুটবলও ফেলে রেখে চলে এসেছেন স্পেনের রৌদ্রস্নাত শহরে। কিন্তু, ফুটবল নামের এই অনিশ্চয়তার নাট্যমঞ্চে কখনো কখনো এমন স্ক্রিপ্ট লেখা হয়, যা বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে কল্পনাকেও হার মানায়। সেই ‘বিড়িখোর’ শেজনি বার্সেলোনার গোলপোস্টে দাঁড়িয়ে, আরেকটি স্বপ্নের ট্রফি হাতে নিলেন — কোপা দেল রে-র ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে উড়িয়ে দিলেন।
এ এক অসম্ভবের গল্প। কিংবা বলা যায়, এমন এক চরিত্রের গল্প, যিনি আজকের যুগের নিয়মমাফিক পেশাদার ফুটবলারের ছাঁচে গড়া নন। মাঠের পারফরম্যান্সের চেয়েও মাঝে মাঝে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে তাঁর ধূমপান, মাঠের বাইরের জীবন আর নির্মম তবে মোক্ষম বক্তব্যের জন্য। তবে, শেষ পর্যন্ত সবুজ মাঠের ডি বক্সেই তাঁর বিচারের আসর বসেছে, আর সেই মঞ্চেই তিনি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। আর সেখানে শেজনি নিজেই বিচারক, নিজেই ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক।
শেজনির মত চরিত্র ফুটবলে তেমন একটা নেই। তিনি যখন আর্সেনালে ছিলেন, তখন আজকের ‘হিরো এমিলিয়ানো মার্টিনেজ ছিলেন দলের তৃতীয় গোলরক্ষক। জুভেন্তাসে যখন গেলেন তখন খোদ জিয়ানলুইজি বুফন বনে গেলেন দুই নম্বর। এবার বার্সায় যখন শেজনি – তখন টার স্টেগানকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের জন্য রেজিস্টার করারই প্রয়োজন মনে করে না কাতালানরা। অথচ, ইনজুরিতে যাওয়ার আগে দলের অধিনায়ক ছিলেন টার স্টেগান। চাইলে এবার শেজনির ভাষাতেই বলা যায় – ‘গোলরক্ষক হিসেবে আমি খুব একটা খারাপ নই!’
হয়তো পোল্যান্ডের হয়ে চুপচাপ ইউরো থেকে বিদায় নেওয়াটা তাঁর মতো চরিত্রের জন্য ঠিক মানানসই ছিল না। গেল অক্টোবরে অনেকটা বাধ্য হয়েই বার্সেলোনা তাঁকে দলে নিয়েছিল। আর বার্সায় আসার পর থেকেই তিনি ফ্যান ফেবারিট। হয়তো চারটি ট্রফি জিতে, বার্সেলোনায় নিজের অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটানোই হবে প্রকৃত ‘উইজেক শেজনি গল্প’-এর শেষ টুইস্ট।
৩৫ বছরের এই প্রহরী নিজেই তো বলেছিলেন, ‘দেখা যাক, এটা ইতিহাসের অন্যতম সেরা গল্প হয় কি না। মজার তো বটেই। তবে, আমার মনে হয় আমার গল্পটাই ইতিহাসের সেরা হবে। তবে সেটা বোঝা যাবে মে মাসের শেষে।’ এই গল্পের শেষ পৃষ্ঠাটা কি সত্যিই লেখা হয়ে গেছে? নাকি শেজনির কাছে এখনও জমা আছে আরও কিছু চমক?