সাকিব আল হাসান বলেছিলেন যে বিশ্বকাপের পর এক মুহূর্ত তিনি অধিনায়ক হিসেবে থাকবেন না। তিনি না চাইলেও আসলে তাকে অধিনায়কের ভাবনায় প্রথম পছন্দেই রেখেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির বোর্ড সভা শেষে তেমনটিই জানিয়েছেন বোর্ড প্রধান নাজমুল হোসেন পাপন।
তিনি বলেন, ‘ওর (সাকিবের) অ্যাভেলিভিলিটি নিয়ে আমরা শিওর না। তবে, অবশ্যই ও আমাদের প্রথম পছন্দ। অধিনায়ক হিসেবে; সবসময়ই ছিল এবং এখনও আছে।’
বিসিবি ভাবলেও সাকিবের ভবিষ্যৎ এগিয়ে যাচ্ছে তার নিয়মেই। কিন্তু, তাতে অবশ্য সাকিবের বিশ্বকাপ পূর্ববর্তী বলা ছাড়া বাকি কোন কিছুই তার হাতে অন্তত নেই।
কেননা চোখের এক বিরল সমস্যায় জর্জরিত সাকিব। তিনি ঠিক নিজেও যেন বুঝে উঠতে পারছেন না- করবেন কি? সাকিব দ্বিধায় রয়েছেন বটে। তবে বিসিবি অন্তত দ্বিধায় থাকতে চায়নি। তাইতো তিন ফরম্যাটে এক বছরের জন্যে নিযুক্ত করা হয়েছে নতুন অধিনায়ককে। সামনের দিনগুলোতে বা-হাতি ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশকে।
একটি দ্বিধা থেকে সাকিব কিংবা তার চোখ অন্তত মুক্তি দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে। তবে এখানেই দোদুল্যমান অবস্থার পরিসমাপ্তি ঘটে না।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দশম আসর চলমান। ফ্রাঞ্চাইজি এই টুর্নামেন্ট শেষ হওয়া মাত্রই শ্রীলঙ্কাকে আতিথিয়েতা দেবে বাংলাদেশ। সেই সিরিজেও সাকিব থাকবেন কিনা- সে প্রশ্ন রয়েই গেছে।
সম্ভাবনা বেশ প্রবল, তিনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলবেন না। চোখের চিকিৎসা করানোর উদ্দেশ্যেই সাকিবের এই বিরতি। তবে সিরিজের মাঝপথেই সাকিব ফিরে এলে তখন হয়ত আবার দ্বিধাগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নব্য নিযুক্ত নির্বাচক প্যানেল। এখানেও আসলে দ্বিধার হচ্ছে না শেষ।
সাকিবকে কেন্দ্রীয় চুক্তি অনুযায়ী তিন ফরম্যাটেই বেতনভুক্ত করা হয়েছে। তাতে করে সাকিব তিন ফরম্যাটেই নিয়মিত খেলবেন বলেই ধারণা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সাকিব নিজেই বহুবার বলেছেন, তিনি বেছে বেছে খেলবেন। কোন ফরম্যাট ছেড়ে দেবেন কিনা – তাও নিশ্চিত করে জানাননি। সে বিষয়েও ধুম্রজালেই থেকে যাচ্ছে বিসিবি।
শুধুই কি সাকিব? বিসিবির নির্ধারক পর্যায়ে আরও এক দোলাচলের সৃষ্টি করে রেখেছেন তামিম ইকবাল খান। গেল বছরের জুলাইয়ে হুট করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। এরপর নানা ঘটনা প্রবাহে নিজের সেই সিদ্ধান্ত বদলে ফেলার কথাও বলেছেন বাঁ-হাতি এই ওপেনার।
এরপর সাকিবের সাথে তার দ্বন্দের বিষয়টি বেশ কলুষিত করে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে। তাছাড়া নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ যাত্রা। তবে এখনও নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানাননি তামিম। তিনি জাতীয় দলের হয়ে খেলবেন, অথবা খেলতে পারবেন কিনা- সে বিষয়ে এখনও পরিষ্কার কোন ধারণা নেই বিসিবি প্রধানের কাছে।
পাপন বলেন, ‘জালাল ভাই ও আমি আরও কয়েকজনের নাম বলেছি। তারা তামিমের সাথে বসবে ঢাকায় আসার সাথে সাথে। তার সাথে সাথে আমি নিজেও বসব। ওনারা বসার পর আমিও বসব আবার।’
অতএব এখনও তামিমকে নিয়ে দ্বিধান্বিত অবস্থায়ই রয়েছে বিসিবি। যদিও তামিম একটি বিষয়ে স্বচ্ছতার প্রমাণ রেখেছেন। তার অনুরোধেই তাকে রাখা হয়নি কেন্দ্রীয় চুক্তিতে।
তবে সমস্যা হচ্ছে ভিন্ন জায়গায়। এই যে তামিম-সাকিবরা বোর্ডকে দ্বিধার মধ্যে রেখে দেন- তা নিশ্চয়ই ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে না বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। বরং দলের দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনায় বাধার সৃষ্টি করে।
এছাড়াও এমন দোলাচলে থাকা ক্রিকেট বোর্ড তাদের বিকল্প খুঁজতেও দুলতে থাকে পেন্ডুলামের মত। এসব নিশ্চয়ই অনুজদের জন্যে রেখে যাচ্ছে বাজে উদাহরণ। তামিম কিংবা সাকিব – তাঁরা কি বোঝেন?