এবারও কি চোখের জল হবে তাসকিন আহমেদের সঙ্গী? আরও একটি বিশ্বকাপ থেকে তিনি যে ছিটকে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে। এই দায় মূলত কার?
তাসকিন ইনজুরি প্রবণ সেটা সবারই জানা। সেই ইনজুরিকে একটুখানি দূরে সরিয়ে রাখতে টেস্ট ক্রিকেট থেকে আড়াল হলেন তাসকিন। তবে ঘুরে ফিরে সেই বিশ্বকাপের আগে তার ইনজুরি দিয়েছে মাথাচাড়া। যার দায়ভার এদফা অন্তত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রাপ্য।
সদ্য সমাপ্ত জিম্বাবুয়ে সিরিজে তাসকিন প্রায় ১৪৭ কিলো/ঘন্টায় বল ছুড়লেন। বাংলাদেশের কোন বোলার এতটা গতিতে নিয়ম করে বল করে গেছে শেষ কবে? থাক এই প্রশ্ন। আরেকটা প্রশ্ন করি, বলুন তো জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কি?
উত্তরটা হচ্ছে- কিছুই না। একেবারে সহজ বাংলায় বললে একেবারে কিছুই না। যে দল বিশ্বকাপের মঞ্চে খেলার সুযোগ পায়নি, যে দলের সাথে সিরিজ জয়ে র্যাংকিংয়ের উন্নতি হবে না, যে দলের সাথে ঠিকঠাক প্রতিযোগিতাও হয় না- সেই দলের সাথে সিরিজ খেলে প্রাপ্তির প্রত্যাশা নেয়াহেত ছেলেমানুষী। তেমন এক সিরিজে রীতিমত বাধ্য করা হয়েছে তাসকিনকে চার-চারটি ম্যাচ খেলার জন্যে।
ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের বুলি আওড়ায়ে বিসিবি তাসকিনকে সর্বদাই রাখে খোলস বন্দী করে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মত আসরে খেলতে যেতে চাইলেই সামনে আসে শত আপত্তি। অথচ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে টানা দশ ওভার বোলিং করে যাওয়ার অনুমতি ঠিকই পান তাসকিন।
তীব্র গরমে যখন পুরো দেশের মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাওয়ার উপক্রম, তখনও তাসকিন বোলিং করে গেছেন। তপ্ত গরমের হলকার মাঝে ১৪০ কিলো/ঘন্টায় তিনি বল ছুড়ে গেছেন। আপনার বোলিং আক্রমণের সেরা বোলার যাতে ইনজুরি আক্রান্ত না হয়, সেজন্য আপনি ভিনদেশী কোন টুর্নামেন্ট খেলতে দিতে চাইলেন না।
অথচ ঘরোয়া ক্রিকেট, যার প্রতিযোগিতার মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন, তেমন টুর্নামেন্টে খেলার বেলায় বাধাহীন তাসকিন। বড্ড অন্যায় সিদ্ধান্ত নয় কি? এমন অন্যায় অবশ্য নতুন না। খেলোয়াড়দের সর্বোচ্চটুকু কখন নিঙড়ে নিতে হবে সেটা জানেই না খোদ বিসিবি। কাকে কখন দরকার সেটাও রীতিমত অজানা।
ডিপিএলের সময় তাসকিনের বিশ্রামের বিষয়ে জোর দিতেই পারত বিসিবি। কিন্তু অদৃশ্য এক ক্ষমতাবলে তেমনটা আর কখনোই বাস্তব হয়ে ওঠেনি। অন্যদিকে জিম্বাবুয়ে সিরিজেও টানা চার ম্যাচ খেলার খুব বেশি প্রয়োজন কি তাসকিনের ছিল? সে উত্তরটাও না। সেই সিরিজে তাসকিন, শরিফুল ইসলামদের বিশ্রামে রেখে তরুণদের বাজিয়ে দেখা যেতো চাইলেই।
তাতে করে বিশ্বকাপের মঞ্চে অন্তত ইনজুরি আক্রান্ত তাসকিন, শরিফুলের বিকল্প ভেবে রাখা যেতে পারত। কিন্তু তেমন কিছুই বিসিবি করেনি। প্রচণ্ড ভয়ে কাবু বাংলাদেশ ক্রিকেট কর্তারা।
বাংলাদেশ দলের ভেতরটা যে ফাঁপা সেটা বেড়িয়ে আসতে দিতে যেন নারাজ। তাইতো গাধার খাটুনি খেটে হলেও তাসকিনদের জয় পাইয়ে দিতে হয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তারা না থাকলে কি ঘটে, সে প্রমাণ তো মিলেছে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে।
২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও তাসকিনের শতভাগ পায়নি বাংলাদেশ দল। ইনজুরি নিয়েই খেলেছেন তাসকিন। তাতে করে বাংলাদেশের উপকার তো হয়নি, ক্ষতিই হয়েছে বেশ। তাসকিনের সাথে এই ‘ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট’ নামক নাটক চলমান রয়েছে বহুদিন ধরেই। সম্ভবত এই নাটক হবে ধারাবাহিক।