একটা অব্যবস্থাপনা ঢাকতে গিয়ে বরাবরই ভুল সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে। ক্রিকেটে ‘এ’ দলের মূল কাজটা কি? অথবা ‘এ’ দলে কোন খেলোয়াড়দের জায়গা দেওয়া উচিত? এমন প্রশ্নের উত্তরে সবাই হয়ত বলবেন, জাতীয় দলের আশেপাশে থাকা, সম্ভাব্য পরবর্তী খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়া উচিত ‘এ’ দলে।
এর থেকে ব্যতিক্রম উত্তর হয়ত খুব একটা পাওয়া যাবে না। অথচ বিসিবি অধিকাংশ সময়ে উলটো পথেই যেন হেঁটে চলে। সর্বশেষ সংযোজন হিসেবে মুশফিকুর রহিম ও মুমিনুল হক-কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ‘এ’ দলের সাথে। জাতীয় দলের আসন্ন পাকিস্তান সিরিজের আগে ‘এ’ দল পাকিস্তান ‘এ’ দলের সাথে সিরিজ খেলবে।
পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে প্রথম চারদিনের ম্যাচটি হবে পাকিস্তানের মাটিতে। সে ম্যাচের জন্য মুশফিক ও মুমিনুল জায়গা পেয়েছেন ‘এ’ দলের স্কোয়াডে। নির্বাচকদের ভাবনাটা সম্ভবত স্পষ্ট। বহুদিন খেলার মধ্যে না থাকা অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের খেলার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। এখানেই মূলত অপারগতা ঢাকতে গিয়ে ভুল করে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সংস্থা।
‘এ’ দল জাতীয় দলের সুযোগের অপেক্ষায় থাকা খেলোয়াড়দের নিজেদের ঝালাই করে নেওয়ার জায়গা। সেখানে তরুণ ক্রিকেটাররা ভিন্ন কন্ডিশনে নিজেদের খেলে পরবর্তীতে জাতীয় দলের চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত হবে। তাছাড়া উচিত হচ্ছে সারাবছর ‘এ’ দলের কার্যক্রম চালানো। কিন্তু তেমনটি হয় না। পাইপলাইনে থাকা খেলোয়াড়রা পর্যাপ্ত সুযোগই পাননা খেলার।
যা একটু পান তাও আবার অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হয় তাকে। ২০০৫ সাল থেকে মুশফিকুর রহিম খেলছেন টেস্ট ক্রিকেট। দীর্ঘ প্রায় ১৯ বছরের যাত্রায় তাকে প্রস্তুতির জন্য ‘এ’ দলের সহয়তা প্রয়োজন হয় কি? এমন একটা প্রশ্ন চাইলেই তোলা যায়। যদি বলা হয় প্রস্তুতির কথা, তাহলে দেশের অভ্যন্তরে কেন লঙ্গার ফরম্যাটের একাধিক টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয় না, এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
মুশফিকুর রহিমের নিশ্চয়ই নতুন করে কিছু শেখার নেই। তিনি বাংলাদেশের অত্যন্ত পরিশ্রমী খেলোয়াড়দের একজন। তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। এমন একজন খেলোয়াড়কে প্রস্তুত হতে একজন উদীয়মানের জায়গা ছেড়ে দেওয়ার এই ধারা বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেয়।
আবার কবে লাল বলের ম্যাচ খেলার সুযোগ হবে বিদেশের মাটিতে সেটা তো অনিশ্চিত। পরিকল্পনার ঘাটতির কারণেই এমনটা ঘটে বাংলাদেশে। কেননা জাতীয় দলের পরীক্ষিত খেলোয়াড়দের ‘এ’ দলের সাথে যুক্ত করতে হয় বাধ্য হয়ে। এবারও তেমনটিই ঘটেছে।
মুশফিক আর মুমিনুল স্কোয়াডে থাকা মানেই তারা দুইজনই খেলতে নামবেন। সেদিক থেকে দুই তরুণ ক্রিকেটার বেশ ভিন্ন কন্ডিশনে খেলার সুযোগটা হারাবেন। এরপর তারা যখন জাতীয় দলে বিদেশের মাটিতে খেলতে নামবেন তখন খাবি খাবেন। এরপর আবার তাদের ফেরানো হবে ‘এ’ দলে। এ যেন এক অনন্ত চক্র। শেষ হওয়ার নয়।
আচ্ছা তাও হয়ত তর্কের খাতিরে, প্রস্তুতির প্রয়োজনে মুশফিক, মুমিনুলদের অন্তর্ভুক্তি মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু এনামুল হক বিজয়কে ঠিক কোন কারণে সেই ‘এ’ দলের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, সেটাও সম্ভবত বোধগোম্য নয়। তিনি তো কখনোই টেস্টের জন্যও বিবেচিত হন না। তাছাড়া সাদা বলের ক্রিকেটেও আসা-যাওয়ার মাঝেই দিন কেটে যায় তার। ৩১ বছর বয়সে এসে তিনি নিশ্চয়ই তরুণ প্রতিভা নন, যাকে গড়ে তুলতে হবে।
এখানেই আসলে পরিকল্পনার ঘাটতি, কাঠামোগত দূর্বলতাগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই ধারাই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে বাধ্য করে থমকে দাঁড়াতে। বাংলাদেশ বরং নিজেদের সেই শেষ না হওয়ার বৃত্তের মাঝেই ঘুরপাক খায়। বিশ্ব ক্রিকেট থেকে ছিটকে যায়।