সূর্যের চারিদিকে আরও একবার ঘুরে আসবার শুরুটা করে ফেলেছে পৃথিবী। সেই সাথে গোটা পৃথিবীর মানুষ পুরনো সব হিসেব-নিকেশের অন্ত ঘটিয়ে নতুন করে শুরু করবার পরিকল্পনা করছে। সেদিক থেকে পিছিয়ে নেই ভারতীয় ক্রিকেট। ১২ বছর বাদে আবারও ভারতের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ২০১১ সালে নিজেদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপটা ঘরের মাটিতেই জিতেছিল ভারত। এবারও তাই আরও একবার চ্যাম্পিয়ন হবার ইচ্ছে ভারতের।
তবে সাম্প্রতিক পারফরমেন্স মোটেও সুখকর নয় ভারতের। বৈশ্বিক কোন আসরে শিরোপা যেন ধরাই দিচ্ছে না টিম ইন্ডিয়ার হাতে। খুব কাছে গিয়েও ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হচ্ছে ভারতীয় খেলোয়াড়দের। কোচ থেকে অধিনায়ক, সব কিছুতেই পরিবর্তন এনেও সফলতা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এবার খানিকটা আগে ভাগেই বিস্তৃত এক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বোর্ড অব ক্রিকেট ফর কন্ট্রোল ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)। নতুন এক ফিটনেস পরিমাপক পন্থা বেছে নিয়েছে বিসিসিআই।
‘ডেক্সা’ নামক নতুন ধরণের এই ফিটনেস নির্ণায়ক প্রস্তাব করেছেন ভারত জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রেন্থ ও কন্ডিশনিং কোচ রামজি শ্রীনিবাসন। তিনি ২০১১ সালে বিশ্বকাপ ও ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ী দলের সদস্য ছিলেন। সেই দুই শেষ সাফল্য ভারতের। এরপর থেকে যেন নিজেদের ছায়া হয়েই রয়ে গেছে ভারত। তবে এর পেছনে অবশ্য বেশ নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে ইনজুরি।
প্রায় প্রতিটা বৈশ্বিক আসরের শুরুতেই ভারতের শিবিরে হানা দেয় ইনজুরি। দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতি বেশ ভোগায় টিম ইন্ডিয়াকে। এর পেছনে অবশ্য কারণটা খেলোয়াড়দের খেলার চাপ বেড়ে যাওয়া। তাইতো, বিসিসিআই ওয়ানডে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ২০ সদস্যের একটি তালিকা তৈরি করেছে। এই বিশ খেলোয়াড়কে তদারকি করা হবে বিশেষভাবে। আর সেই বিশেষ তদারকির অংশ ‘ডেক্সা টেস্ট’।
ইয়ো ইয়ো টেস্টের সাথে কমবেশি সবাই পরিচিত। এই টেস্টে সাধারণত খেলোয়াড়দেরকে একটি পয়েন্ট থেকে আরেকটি পয়েন্ট অবধি নিজেদের গতি আর সক্ষমতা বাড়িয়ে দৌড়াতে হয়। ভারত দলে খেলোয়াড় নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই টেস্ট বহু আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রথম দিকে সেই টেস্ট নিয়ে খেলোয়াড়দের আপত্তি থাকলেও, মাঠে সেটা সুফল দেখে সাদরে গ্রহণ করে ভারতীয় ক্রিকেটাররা। তবে ইয়ো ইয়ো টেস্টই চূড়ান্ত মানদণ্ড হতে পারে না বলে মনে করেন, রামজি।
তিনি বলেন, ‘সব বিষয়ে বিবর্তন ঘটেছে এবং আমাদেরকে সেটার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সুতরাং কেবল ইয়ো ইয়ো টেস্টের উপর ভরসা করে থাকলেই হবে না। দক্ষতার ভিত্তিতে একটা কার্যক্রমও অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।’ সেই তাগিদ অনুভব করতে পেরেছে ভারতের ক্রিকেট বোর্ড। তাইতো তাঁরা ডেক্সা টেস্টও অন্তর্ভুক্ত করেছে বিশ্বকাপের খেলোয়াড় নির্বাচনের মানদণ্ড হিসেবে।
ডেক্সা টেস্টের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের শরীরের চর্বি পরিমাপ করা থেকে শুরু করে চর্বিহীন পেশি, শরীরের পানির পরিমাণ ও হাড়ের ঘনত্ব এসব বিষয় পরিমাপ করতে পারবে। এ বিষয়ে রামজি বলেন, ‘এটার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন যে ঠিক কোথায় চর্বি রয়েছে এবং নির্দিষ্ট অনুশীলন কোন তারতম্য ঘটাচ্ছে কিনা। এটা পুরো একটা চক্র। এই টেস্টিং প্রোটোকলটা অনেক আগেই বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন ছিল। বহু দল দশ বছর ধরেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করে।’
এই পদ্ধতিতে খেলোয়াড়দের অনুশীলন থেকে শুরু করে তাদের ডায়েট প্ল্যান সবকিছুই অন্তর্গত। খেলোয়াড়রা প্রতিনিয়ত পরিচর্যার মধ্যে থাকবে। তাদের পুরো শরীরে চর্বি পরিমাণ ১০ শতাংশের নিচে নিয়ে আসবে এই ডেক্সা পদ্ধতি। ফুটবলারদের ক্ষেত্রে অবশ্য আরও খানিকটা কড়াকড়ি রয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে শরীরের চর্বির পরিমাণ ৫-৮ শতাংশ থাকতে পারবে সর্বোচ্চ। সেখানে ক্রিকেটাররা খানিক স্বস্তিতেই রয়েছেন। এতে করে খেলোয়াড়দের ইনজুরি প্রবণতা কমবে। পাশাপাশি পেশি সুস্থ-স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পাবে।
এর ফলে, খেলোয়াড়দের সক্ষমতা বেড়ে যাবে বহুগুণে। ভারতীয় প্রতিটা খেলোয়াড়ই বেশ প্রতিভাবান। তবে ফিটনেসের দিক থেকে তাঁরা বার বার পিছিয়ে যাচ্ছেন। তবে এ কথাও সত্য ভারতীয় খেলোয়াড়দের প্রচণ্ড ব্যবস্তার মধ্য দিয়ে দিন পার করতে হয়। সেদিক থেকে শরীরে অবসাদ ভাব আসাও বেশ সাধারণ বিষয়। এসব কিছু মাথায় রেখে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিসিসিআই। কোনভাবেই শিরোপা হাতছাড়া করতে নারাজ গোটা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।