টেস্ট ক্রিকেটে বল একটু পুরনো হলে বাংলাদেশের বোলিং ইউনিটের হতশ্রী দশা সামনে চলে আসে। ঠিক যেন দুর্ভিক্ষের দিনে হাড্ডিসার এক মানব দেহ। মিরপুর টেস্টেই দেখা মিলেছে বাংলাদেশের বোলারদের দুর্দশার চিত্র। তবে এই ঘটনা এবারই নতুন নয়।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সাথে এমন ঘটনা ঘটেছে বহুবার, লাগাতার। দক্ষিণ আফ্রিকার ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটে ১০৮ রানের মাথায়। তখন ৩১.৩ ওভার চলমান। এরপরই যেন নির্বিকার হয়ে গেছে বাংলাদেশের গোটা বোলিং ইউনিট। ১১৯ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ফেলেন প্রোটিয়া দুই ব্যাটার। কাইল ভেরেইন ও উইয়ান মুল্ডার দুইজনই তুলে নেন অর্ধ-শতক।
তাতে করে ম্যাচে লাগাম টেনে ধরার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে বাংলাদেশের। একই ঘটনা ঘটেছে ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ম্যাচে। সে ম্যাচে ১৪৪ রানের মাথায় ভারতের ছয়টি উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশের বোলিং ইউনিট। এরপর বল খানিক নরম হওয়ার পর উইকেটের দেখা পেতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। ততক্ষণে ভারতের স্কোরবোর্ডে যুক্ত হয়ে গেছে আরও ১৯৯ রান।
পাকিস্তানের বিপক্ষেও পরিস্থিতি প্রায় একই। রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট বাংলাদেশ জিতেছে বটে। কিন্তু প্রথম ইনিংস থেকেই ম্যাচের লাগাম নিজের হাতে রাখার সুযোগ ছিল। ১১৪ রানে পাকিস্তানের চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে। এরপর ২৪০ রানের পার্টনারশিপ গড়েন সৌদ শাকিল ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। শেষ অবধি ৪৪৮ রানের সংগ্রহ পায় পাকিস্তান।
এর আগে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোয়াইট ওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। সেই সিরিজের প্রথম ম্যাচেই একই ঘটনার অবতাড়না ঘটেছে। ১২৬ রানে ছয় নম্বর উইকেট হারায় লঙ্কানরা। এরপর ২৯৯ রানের মাথায় সপ্তম উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। শেষ অবধি শ্রীলঙ্কা থেমেছিল ৪১৮ রানে।
পুরান বলে বাংলাদেশের বোলিং ইউনিট বারংবার এক্সপোজ হয়েছে। নতুন বলের উজ্জ্বলতা ও শক্ত সিমের সুবিধা বাংলাদেশ নিতে পারে বটে। কিন্তু বল রুক্ষ হয়ে সিম যখন তার দৃঢ়তা হারিয়ে ফেলে, তখন বাংলাদেশ দলের বোলিং ইউনিটও নিজেদের হারিয়ে খুঁজতে শুরু করে।
টেস্ট ক্রিকেটে উইকেট শিকার ছাড়া ফলাফল পাওয়া প্রায় অসম্ভব। সেখানে পুরনো বলে বাংলাদেশের বোলিং ইউনিটের এমন দুর্বলতা ম্যাচ হারের অন্যতম কারণ। বোলিং ইউনিটের উন্নতি হচ্ছে বটে। কিন্তু সেই উন্নতিই শেষ কথা নয়। তৃপ্তির ঢেকুর তুলে ফেলার মত সময়ও আসেনি। বহুদূর পথ এখনও পাড়ি দিতে হবে টাইগার বোলিং ইউনিটকে। নতুবা দু-একটি টেস্ট জয়েই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে বাংলাদেশের টেস্ট যাত্রা।