বাংলাদেশের ভরসা তবু পেস আক্রমণ

চারিদিকে সোরগোল। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড কেমন হবে, তাই নিয়ে নানানরকম ছক কষা হচ্ছে। কোন পজিশনে কার থাকা উচিত কিংবা উচিত না, তাই নিয়ে কাটাছেড়া হচ্ছে প্রচুর। দলে কে কখন ঢুকে যাবেন সে নিয়ে রয়েছে উৎকণ্ঠা। এসবের মাঝে খানিকটা আড়াল হয়ে যাচ্ছে দলে থাকা খেলোয়াড়দের নিয়ে আলোচনা।

এই যে যেমন বাংলাদেশের পেস আক্রমণ নিয়েই আলোচনা নেই একদম। অথচ দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা সময়টা পার করছে টাইগার পেসাররা। তর্কসাপেক্ষে ইতিহাসের সেরা ইউনিটই বলা চলে। এই নিয়ে বিস্তর এক আলোচনা সভার আয়োজনও করা যেতে পারে।

তবে একটা নিরিখে অন্তত আলাপ করাই যেতে পারে, যে বাংলাদেশের পেসাররা ঠিক কেমন করেছেন। ২০২৩ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে প্রথমবারের মত ওয়ানডে সুপার লিগের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ সেই সুপার লিগ শেষ করেছেন তৃতীয় অবস্থানে থেকে। সেটা খানিকটা গর্ব করবার মতই বিষয়।

বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই যে ওয়ানডেতে সমীহ করবার মত দল, সেটারই প্রমাণ। এই অর্জনের পেছনে পুরো একটা দল হয়েই বাংলাদেশ পারফর্ম করেছে বিগত চার বছর ধরে। ফাস্ট বোলাররাও ছিল সেই তালিকায়। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের তালিকায় সেরা ২০ এ রয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ।

দুইজন যথাক্রমে ২৭ ও ২৬ উইকেট নিয়ে রয়েছেন পাশাপাশি। ২০২১ থেকে ২০২৩ এই সময়কালে বাংলাদেশ মোট ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে ২৪টি। যার মধ্যে মুস্তাফিজ খেলেছেন ২০টি অন্যদিকে, তাসকিন খেলেছেন ১৮টি। উইকেটের ট্যালিটা হয়ত আরও একটু সমৃদ্ধ হতে পারত। তবে মুস্তাফিজ বেশ ধুঁকছিলেন নিজের ফর্ম নিয়ে।

চারিদিকে নানান গুঞ্জন তার হারিয়ে যাওয়ার। অবশ্য ক্ষণে ক্ষণে তিনি ফিরে এসেছেন। আলোক ঝলকানি দেখিয়েছেন। অন্যদিকে, তাসকিন সম্ভবত নিজেকে অভাগাই দাবি করবেন। যখনই তিনি একটুখানি পাখা মেলে উড়বার প্রস্তুতি নিয়েছেন তখনই মুখ থুবড়ে পড়েছেন।

ইনজুরি প্রতিবার তাকে পেছন থেকে টেনে ধরেছে। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে এই দুইজনই হয়ত নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশকে। সেটাই হয়ত প্রত্যাশিত। কারণ অভিজ্ঞতা আর সক্ষমতা বিচারে বাকিদের থেকে এই দুইজন রয়েছেন ঢের এগিয়ে।

এছাড়া বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের আরও একজন সেনানি হয়ে উঠছেন হাসান মাহমুদ। তরুণ এই পেসার ইতোমধ্যেই আলো কাড়তে শুরু করেছেন। সাবেক খেলোয়াড় থেকে শুরু করে ক্রিকেট বোদ্ধাদের বেশ মনে ধরছে হাসানকে। ওয়ানডে সুপার লিগে ছয়টি ম্যাচ খেলেছেন হাসান। এর মধ্যেই ১০ উইকেট নিজের ঝুলিতে পুরেছেন তিনি।

হাসানের ক্যারিয়ারের শুরুতেও হানা দিয়েছিল ইনজুরি। সবাই যখন মুখিয়ে ছিলেন হাসানকে জাতীয় দলের হয়ে মাঠ মাতাতে দেখার জন্য, ঠিক তখনই ইনজুরি তাকে পিছিয়ে দেয়। পিছিয়ে পড়া হাসান নিজের সদিচ্ছার বলে গুটি গুটি পায়ে জায়গা করে নিচ্ছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আঙিনায়।

অন্যদিকে, এবাদত হোসেন নিজের উপস্থিতি জানান দিতে শুরু করেছেন। তিনি ওয়ানডে সুপার লিগে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। খেলেছেন মোটে চার ম্যাচ। সেখান থেকে উইকেট বাগিয়েছেন চারটি। তবে ওয়ানডে অভিষেকের পর ২০২২-২০২৩ সালের মধ্যবর্তী সময় অবধি ১১ ম্যাচে ২১ উইকেট শিকার করেছেন এবাদত হোসেন।

এই চারজন ছাড়াও জাতীয় দলের প্রায় নিয়মিত মুখ শরিফুল ইসলামও খেলেছেন ওয়ানডে সুপার লিগে। ১২ ম্যাচ খেলা শরিফুলের ঝুলিতে আছে ১৬টি উইকেট। তবে তিনি প্রচুর রান খরচ করেন। সেটিই বড় চিন্তার বিষয়। কিন্তু মোটামুটি এই পাঁচ পেসারের সম্ভাবনা রয়েছে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে নিজেদের থিতু করবার।

সেদিক বিবেচনায় বেশ পোক্ত এক পেস বোলিং ইউনিট নিয়েই বিশ্বকাপের বিমান ধরবে টাইগাররা। নিয়ম করে হয়ত মুস্তাফিজ, তাসকিন ও হাসানকে দেখা যাবে একাদশে। তবে এবাদত, শরিফুলরাও নিশ্চয়ই নিজেদের একেবারে নিঙড়ে দিতেও মড়িয়া থাকবে। অবশ্য এদের যে কারও অবর্তমানে খুলে যেতে পারে পাইপলাইনের দরজা। সেখানটায়ও বেশ সামর্থ্য-বান খেলোয়াড়রা রয়েছেন।

এত সব অপ্রতুলতা আর শঙ্কার মাঝে বাংলাদেশের পেস বোলিং ইউনিট খানিকটা স্বস্তি দিচ্ছে। এখন দেখবার পালা, ময়দানের লড়াইয়ে ঠিক কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে টাইগার পেসাররা। ভারতের মাটিতে ট্রু উইকেট পেলে ঠিক কতটুকু নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখতে পারবে তাসকিন, ফিজরা তা হয়ত সময়ই বলে দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link