শেষকালে ভিড়ল না তরী। টাইব্রেকার নামক ভাগ্য জুয়ায় বাংলাদেশের যুবারা ধরাশায়ী। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচের শেষে ভারতের যুবারা মেতেছে বুনো উল্লাসে। মাটিত লুটিয়ে নাজমুল হুদা ফয়সালদের বিষাদের গড়াগড়ি। সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ এর ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা ঘরের মাঠেই রেখে দিল শিরোপা। বাংলাদেশ বাড়ি ফিরল হয়ে দ্বিতীয় সেরা।
দক্ষিণ এশিয়ার ডার্বি। ভারত-বাংলাদেশ ময়দানে নামা মানেই তা ছড়াবে বাড়তি উত্তেজনা। উন্মাদনা ছাড়িয়ে যাবে অরুনাচলের সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গের উচ্চতা। সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালেও তেমন পরিবেশের ব্যত্যয় ঘটেনি।
ম্যাচের একেবারে শুরুতেই ৮০ হাজার দর্শককে গোল উৎসবের বাঁধভাঙা উল্লাসে মাতিয়েছেন ভারতের যুবারা। ফ্রি-কিক থেকে গোলের দ্বার উন্মোচন করেন ভারতের অধিনায়ক শিঙ্গামায়ুম শামি। সেই গোল প্রাপ্তিতে অবশ্য দায়টা বাংলাদেশের গোলরক্ষক ইসমাইল হোসেন মাহিনের বেশি। হাওয়ায় ভাসা বলটার গতিবিধি তিনি ঠিক পড়তে পারেননি।
তাতে করে সহজ গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিক ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দল। এরপর হন্যে হয়ে বাংলাদেশের যুবারা গোলের সন্ধান চালিয়েছে। প্রথমার্ধে সেই সন্ধানের উত্তর মেলেনি। চলেছে আক্রমণ আর পালটা আক্রমণ। ভারতের যুবারাও সময়-সুযোগ পেলেই দ্বিতীয় গোলের জন্যে এগিয়ে গিয়ে হয়েছে ব্যর্থ।
দ্বিতীয়ার্ধের একেবারে অন্তিম লগ্নে তো গোললাইন থেকে বল ফিরিয়েছিলেন বাংলাদেশের ডিফেন্ডার। তবে তার আগেই ম্যাচে সমতায় ফেরান বদলি হিসেবে নামা জয় আহমেদ। ভারতের রক্ষণে জটলা থেকে গোলের ঠিকানায় বল পাঠিয়েছেন জয়।
ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে ওই উন্মাদনার পারদকে এভারেস্টের চূড়োয় তোলেন তিনি। জয়ের তীব্র ক্ষুধায় দুই দলের ছন্নছাড়া আক্রমণ বারংবার থেমেছে এটাকিং থার্ড কিংবা ডি-বক্সের ঠিক ভেতরে। তবুও কোন দল আর দ্বিতীয় গোলের দেখা পায়নি।
এরপর যা হওয়ার হয়েছে তাই, ম্যাচ গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। প্রথমে করা ভুলের মাশুল অবশ্য মাহিন দিয়েছেন টাইব্রেকারে। ভারতের রোহেন সিংয়ের করা শট ঠেকিয়ে দেন মাহিন। সেই মুহূর্তে বাংলাদেশ দল হয়ত শিরোপার সুঘ্রাণ পেতে শুরু করেছিল। কিন্তু শিরোপার সাথে দূরত্ব বাড়ান দলের অধিনায়ক ফয়সাল।
গোলবারের অনেকটা উপরে শট হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে চাপে ফেলে দেন। ব্যাস! এরপর শেষ শটটা ঠেকিয়ে দিয়ে ভারতের শিরোপা জয়ের নায়ক বনে যান গোলরক্ষক সুরাজ সিং। পরক্ষণে শরীরের সমস্ত শক্তি হারিয়ে গোলাম রব্বানি ছোটনের শীর্ষরা লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। যেন মাটি খুড়ে নিজেদের আড়াল করলেই মিলবে সমস্ত প্রশান্তি।
শেষে এসে এই খেই হারানোর বেদনা বাংলাদেশের নতুন না। তাছাড়া ফিনিশিং দূর্বলতার ভয়াল থাবা দেশের ফুটবলের সর্বত্র বিরাজমান। এই দুর্দশার শেষটা যে ঠিক কোথাও, তাও যেন সকলের অজানা। আরও একবার শিরোপা হারের বিষাদের নোনা জলে ডুব সাঁতার দিয়েছে বাংলার যুবারা।