টেস্টের বিধ্বংসী বোলিং দাপট

ভারত-নিউজিল্যান্ড চলমান টেস্ট ক্রিকেটে হলো এক অনন্য বিশ্বরেকর্ড। জিম লেকার, অনিল কুম্বলের পর নিজের নামটি স্বর্ণাক্ষরে ইতিহাসের পাতায় তুলে নিলেন নিউজিল্যান্ডের বা-হাতি স্পিন বোলার আজাজ প্যাটেল। টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসের সবক'টি উইকেট নেওয়ার এমন বিরল রেকর্ডের অংশীদার পুরো ক্রিকেট ইতিহাসে মাত্র এই তিনজন।

ভারত-নিউজিল্যান্ড চলমান টেস্ট ক্রিকেটে হলো এক অনন্য বিশ্বরেকর্ড। জিম লেকার, অনিল কুম্বলের পর নিজের নামটি স্বর্ণাক্ষরে ইতিহাসের পাতায় তুলে নিলেন নিউজিল্যান্ডের বা-হাতি স্পিন বোলার আজাজ প্যাটেল। টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসের সবক’টি উইকেট নেওয়ার এমন বিরল রেকর্ডের অংশীদার পুরো ক্রিকেট ইতিহাসে মাত্র এই তিনজন।

আজকের তালিকায় তাই থাকছে টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে সেরা বোলিং ফিগারের তালিকা। সেখানে স্বভাবতই নাম নাম থাকছে আজাজ প্যাটেলের। আগে থেকেই আছেন জিম লেকার কিংবা অনিল কুম্বলেরা। আর কে কে কে আছেন? – চলুন জেনে নেওয়া যাক।

  • জিম লেকার (৯/৩৭)

জিম লেকার টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের একজন কিংবদন্তি। ডান-হাতি অফব্রেক বোলার লেকার ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্পিন বোলারদের একজন। ইংল্যান্ডের হয়ে ক্রিকেটের মাঠ মাতানো এই তারকা কতশত নানন্দিক সব বোলিং স্পেল যে উপহার দিয়েছেন দর্শকদের তার হিসেব রাখা দায়। তাঁর ঘূর্ণি জাদুতে প্রতিপক্ষের ঘায়েল হওয়া যেন অবধারিত। তেমনই এক অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছিল টিম অস্ট্রেলিয়া।

১৯৫৬ সালে অস্ট্রেলিয়াকে আতিথিয়তা দিয়েছিল ইংল্যান্ড। চলমান সিরিজের চতুর্থ টেস্ট অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপকে একাই গুড়িয়ে দেন জিম লেকার। তিনি মাত্র ৩৭ রানের বিপরীতে অজি নয় ব্যাটারের উইকেট তুলে নেন। যার ফলে ইংল্যান্ড সেই টেস্ট জিতেছিল ইনিংস ব্যবধানে এবং জিম লেকারের সেই অনবদ্য বোলিং ফিগার জায়গা করে নিলো আজকের তালিকার পঞ্চম স্থানে।

  • জর্জ লোহম্যান (৯/২৮)

ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বকালের সেরা পেসারদের একজন জর্জ লোহম্যান। ইংলিশ এই পেসার বেশ সুপরিচিত ছিলেন তৎকালীন সময়ে। মূলত তাঁর পেস ভেরিয়েশন, ফ্লাইট এসবকিছু তাঁকে বিধ্বংসী এক পেস বোলারে পরিণত করেছিল ১৮৮০ এবং ৯০ এর দশকে। টেস্ট ক্রিকেটের চতুর্থ সেরা বোলিং ফিগারের মালিক ইংলিশ এই ডান-হাতি পেসার।

১৮৯৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট সুযোগ পান জর্জ লোহম্যান। টেস্টে ইংলিশদের প্রথম ইনিংসে ইংলিশ ব্যাটাররা সংগ্রহ করে ৪৮২ রানে পাহাড়সম রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটারদের নিয়মিত বিরতিতে সাজঘরে ফেরান লোহম্যান। একটি, দু’টি করে মোট নয়টি উইকেট তুলে নেন লোহম্যান মাত্র ২৮ রান খরচায়। অগ্যতা দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচটি হেরে যায় এক ইনিংস ও ১৯৭ রান ব্যবধানে।

  • আজাজ প্যাটেল (১০/১১৯)

সাদা পোষাকের ক্রিকেটে সদ্য রঙিন রেকর্ড গড়া বোলিং ফিগারের অধিকারী নিউজিল্যান্ডের বা-হাতি  স্পিন বোলার আজাজ প্যাটেল। নিজ জন্মভূমি মুম্বাইয়ে কীর্তি গড়লেন তিনি, তবে তা ভারতের বিপক্ষে। ২০২১ এর ভারত বনাম নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্টে নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেলেন ব্ল্যাককাপস সদস্য আজাজ। বনে গেলেন ইতিহাসের তৃতীয় সেরা বোলিং ফিগারের মালিক।

আজাজ ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে একাই নিয়েছেন ভারতের সবক’টি উইকেট। তিনি রান খরচা করেছেন ১১৯টি। ৪৭.৫ ওভার বল করে ভারতীয় ব্যাটিং অর্ডারের শুরু থেকে শেষ অবধি সবার উইকেট নিজের নামে করে নেন আজাজ। যার ফলস্বরুপ ভারত অলআউট হয়ে যায় মাত্র ৩২৫ রানে। যদিও দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা নিউজিল্যান্ড রয়েছে ইনিংস ব্যবধান টেস্ট হারের শঙ্কায়। মাত্র ৬২ রানেই অলআউট হয়েছ ব্ল্যাক ক্যাপস ব্যাটাররা।

  • অনিল কুম্বলে (১০/৭৪)

ইতিহাসের সেরা টেস্ট বোলিং ফিগার তালিকার দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছেন ভারতীয় কিংবদন্তি স্পিন বোলার অনিল কুম্বলে। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁর করা অবিশ্বাস্য বোলিং এর জন্যে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে রইবেন ক্রিকেটের ইতিহাসে। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করা ভারত কেবল ২৫২ রানই সংগ্রহ করতে পেরেছিল।

দ্বিতীয় ইনিংসে অনিল কুম্বলে চারটি উইকেট পান যার ফলশ্রুতিতে পাকিস্তানকে মাত্র ১৭২ রানেই বেঁধে ফেলতে সক্ষম হয় ভারতীয় বোলাররা। তারপর ভারতীয় ব্যাটাররা অসাধারণ ব্যাটিং করে পাকিস্তানকে ৪১৯ রানের লক্ষ্য ঠিক করে দেয়। তারপর বাকিটুকু ‘দ্য অনিল কুম্বলে শো’। মাত্র ২৬.৩ ওভারের ৭৪ রান দিয়ে তিনি পাকিস্তানের সবক’টি উইকেট নিজের নামে করে নেন। যার ফলে ২০৭ রানে থামে পাকিস্তানের শেষ ইনিংস এবং ভারত ২১২ রানের বিশাল জয় তুলে নেয়।

  • জিম লেকার (১০/৫৩)

কিংবদন্তি জিম লেকার দ্বিতীয় বারের মতো হাজির সেরা বোলিং ফিগারের তালিকায়। এবার রয়েছেন এক নম্বরে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের সেরা বোলারদের সেরা বোলিং ফিগারের মালিক ইংল্যান্ডের জিম লেকার। ১৯৫৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা সেই চতুর্থ টেস্টটিরও মালিক বিবেচনা করা যেতে পারে জিম লেকারকে। সেই সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে একাই জিম লেকার নিয়েছিলেন নয় উইকেট।

তাঁর নেওয়া নয় উইকেটে মাত্র ৮৪ রানেই গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। যেহেতু অস্ট্রেলিয়া ফলো-অনে পড়ে যায় সেহেতু তাঁরা পুনঃরায় ব্যাটিং করতে নামলে আবার অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটাররা সম্মুখীন হন জিম লেকারের ধ্বংসযজ্ঞের। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৫৩ রান খরচায় লেকার তুলে নেন তাঁদের সবগুলো উইকেট। সেই এক ম্যাচেই ১৯টি উইকেট নিয়ে এক ম্যাচে সেরা বোলিং ফিগারের তালিকার শুরুতে রয়েছেন কিংবদন্তি জিম লেকার।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...