ক্লোজ ইনের বিস্ময়

পরিসংখ্যান বলছে, টেস্ট ক্রিকেটের সফলতম ফিল্ডার হলেন একনাথ সোলকার। মাত্র ২৭ টেস্টে নিয়েছেন ৫৩টি ক্যাচ! ম্যাচ প্রতি ক্যাচের সংখ্যা ১.৯৬! জানিয়ে রাখা দরকার, ৬২ ম্যাচে ১১০ ক্যাচ (ম্যাচপ্রতি ১.৭৭) নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বব সিম্পসন।

‘ক্লোজ ইন’ ফিল্ডিংয়ে তাঁকে ধরা হয় সর্বকালের সেরা ফিল্ডারদের একজন। দাঁড়াতেন ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ পজিশনে, ব্যাটসম্যানের শরীর ঘেঁষে। কমপক্ষে ২০ টেস্ট খেলেছেন এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে গড়ে ম্যাচ প্রতি সবচেয়ে বেশি ক্যাচের মালিকও তিনি। বলছিলাম ‘Poor man’s Sobers’ বা ‘গরিবের সোবার্স’ খ্যাত ভারতীয় অলরাউন্ডার একনাথ সোলকারের কথা।

পরিসংখ্যান বলছে, টেস্ট ক্রিকেটের সফলতম ফিল্ডার হলেন একনাথ সোলকার। মাত্র ২৭ টেস্টে নিয়েছেন ৫৩টি ক্যাচ! ম্যাচ প্রতি ক্যাচের সংখ্যা ১.৯৬! জানিয়ে রাখা দরকার, ৬২ ম্যাচে ১১০ ক্যাচ (ম্যাচপ্রতি ১.৭৭) নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বব সিম্পসন।

১৯৭১ সালে ত্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেনে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্ট ম্যাচে হারিয়েছিল ভারত। সেই ম্যাচে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ফিল্ডার হিসেবে অসাধারণ ৬টি ক্যাচ নিয়ে ভারতের জয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন সোলকার। এছাড়া একই বছর ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারতের প্রথম টেস্ট জয়ের অন্যতম রূপকারও ছিলেন তিনি।

পোস্টে উল্লিখিত ছবিটির সময়কাল ১৯৭১ সালের ২৩ আগস্ট। ওভালে ভারত বনাম ইংল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় টেস্টের একটি দৃশ্য। অফ স্পিনার শ্রীনিবাস ভেঙ্কটরাঘবনের বলে শর্ট লেগ ফিল্ডারের হাতে ধরা পড়েন ইংলিশ উইকেটরক্ষক অ্যালান নট। অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত ক্যাচ লুফে নেয়া সেই ফিল্ডারটি ছিলেন একনাথ সোলকার।

‘বিখ্যাত’ সেই ম্যাচে সোলকার অবতীর্ণ হয়েছিলেন অলরাউন্ডারের ভূমিকায়। ছয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে করেছিলেন ৪৫ রান, বাঁ-হাতি সিম বোলিংয়ে উইকেট নিয়েছিলেন ৩টি আর ফিল্ডার হিসেবে ধরেছিলেন অনবদ্য ৩টি ক্যাচ। সোলকারের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স আর কিংবদন্তি লেগ স্পিনার ভগবত চন্দ্রশেখরের বোলিং (৮ উইকেট) নৈপুণ্যে সিরিজ নির্ধারণী শেষ ম্যাচে ভারত পেয়েছিল অবিস্মরণীয় এক জয়।

উল্লেখ্য, সেবারই ইতিহাসে প্রথমবারের মত ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জিতেছিল ভারত, সাথে সিরিজটাও জিতে নিয়েছিল ১-০ ব্যবধানে।

প্রয়াত ইংরেজ অলরাউন্ডার ও প্রবাদপ্রতিম ধারাভাষ্যকার টনি গ্রেগের দৃষ্টিতে, “Ekki was the best forward short leg I’ve ever seen.”

ভারতের বিখ্যাত ‘স্পিন কোয়ার্টেটের’ অপরিহার্য সদস্য বাঁ-হাতি স্পিন লিজেন্ড বিষেণ সিং বেদীর মতে, “His close-in catching was really intimidating. We would never have been as effective without Solkar at short leg.”

সোলকারের ফিল্ডিং সম্পর্কে সবচাইতে চমৎকার বর্ণনাটা দিয়েছিলেন ‘ঐতিহাসিক’ ওভাল টেস্ট বিজয়ের নায়ক ভগবত চন্দ্রশেখর, ‘Eknath Solkar fielded daringly close to the batsmen. He stood at least a couple of feet deeper than modern, helmeted short legs. He was perfectly still and stayed down till the ball left the bat, never taking his eyes off it, never turning his back. Some of his spectacular efforts in that Oval Test were catches he held incredibly close to the bat – diving forward.’

বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান ও বাঁ-হাতি বোলার সোলকারের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৮ মার্চ, মুম্বাইতে। তাঁর ডাকনাম ছিল ‘এক্কি’। উল্লেখ্য, ভারতের স্বাধীনতার পর জন্মগ্রহণকারী দেশটির ‘প্রথম’ টেস্ট ক্রিকেটার হলেন একনাথ সোলকার।

এক সেঞ্চুরি ও ছ’খানা ফিফটিসহ টেস্টে তিনি রান করেছেন ১০৯৮, ব্যাটিং এভারেজ ২৫.৪২। এছাড়া বাঁ-হাতে মিডিয়াম পেস আর অর্থোডক্স স্পিন বোলিংয়ে পেয়েছেন ১৮ টি উইকেট। বাঁ-হাতে ব্যাটিং, পেস, স্পিন সবই পারতেন বলে তাঁকে বলা হত ‘গরিবের সোবার্স’!

ক্যারিয়ারের একমাত্র সেঞ্চুরিটা পেয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, ১৯৭৫ সালে নিজের হোমগ্রাউন্ড মুম্বাইতে।

জানিয়ে রাখা ভাল, ২০০৫ সালের ২৬ জুন মাত্র সাতান্ন বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন। চলে গেলেও তাঁর কীর্তিগুলো অমর হয়ে রয়েছে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...