টেস্ট ক্রিকেটে বিবর্তনের পথে হাঁটা ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে এখন ক্রীড়া জগতে। তবে তাই বলে যে ইংলিশ ফুটবল নিয়ে চর্চা হবে না এমন ভাবাটাও বড্ড বড় ভুল। দলবদলের মৌসুম চলছে। ইউরোপের ফুটবলে একদিকে যখন উৎসবের সুর অন্যদিকে নিশ্চয়ই বেদনাতুর নয়ন বিদায় জানাচ্ছে ক্লাবের তারকাদের।
কতশত খেলোয়াড়দের যে খুঁজতে হয়েছে নতুন ঠিকানা সে হিসেবটা এক বসায় বের করে ফেলাটা একটু কঠিন। তবে এবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে হওয়া বেশ কিছু তারকা খেলোয়াড়দের দলবদল নিয়ে আলোচনা করা যেতেই পারে। তবে বলাই বাহুল্য। এবারে ইংল্যান্ডের দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সরব ম্যানচেস্টার সিটি। দলবদলের বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্যই বলা যায়।
- আর্লিং হাল্যান্ড (ম্যানচেস্টার সিটি)
বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডে জার্সি গায়ে রীতিমত আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন আর্লিং হাল্যান্ড। এবারের দলবদলে সবার নজর ছিল তাঁর দিকেই। তিনি কোন ক্লাবে যাবেন সেটাই যেন ছিল আলোচনার শুরুতেই। বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদের মত ক্লাবের নামও শোনা যাচ্ছিলো হাল্যান্ডের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ হিসেবে। তবে না, তিনি বেছে নিলেন কিংবদন্তি কোচ পেপ গার্দিওয়ালার সান্নিধ্য।
ম্যানচেস্টার সিটিই হল তাঁর নতুন ঘর। তাঁর বাবাও একসময় মাঠ মাতিয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে। তিনি বাবার পথ অনুসরণ করেই সিটিজেন ডেরায় যুক্ত হলেন। গেল কয়েক মৌসুম ধরে সিটি স্ট্রাইকার অভাবে ভুগছিল। সে অভাব মোচনের জন্যেই হাল্যান্ড এসেছেনে ম্যানচেস্টার সিটিতে। প্রিমিয়ার লিগের সেরা গোলদাতা হওয়ার লড়াইটা বেশ জমবে নিশ্চয়ই।
- ফিলিপ কৌতিনহো (অ্যাস্টন ভিলা)
লিভারপুল তারকা হয়ে ফিলিপ কৌতিনহো ছেড়েছিলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। তবে অলরেড ছেড়ে যাওয়া সেই কৌতিনহোর দেখা মেলেনি আর। স্পেনের ক্লাব বার্সার হয়ে তিনি নিজের সক্ষমতার প্রমাণ রাখতে হয়েছেন পুরোপুরি অর্থেই বিফল। তাঁকে ধারে খেলতে পাঠাতে হয়েছিল বার্সেলোনাকে। তিনি খেলেছিলেন বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে। এক মৌসুমে মোটামুটি নিজের ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
তবে আবার বার্সেলোনায় ফিরে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন। ইনজুরিও তাঁকে একটা লম্বা সময় ছিটকে দেয় মাঠ থেকে। ততদিনে তিনি বার্সেলোনার জন্যে বোঝায় পরিণত হয়েছেন। বার্সেলোনা তাই তাঁকে পাঠিয়ে দেয় ইংল্যান্ডে। ধারে অ্যাস্টন ভিলায় খেলতে। সেখানটায় এদফা স্থায়ী হয়ে গেলেন কৌতিনহো। সাবেক ক্লাব সতীর্থ স্টিভেন জেরার্ডকে পেলেন তিনি ডেসিং রুমে, কোচের বেশে।
- গ্যাব্রিয়েল জেসুস (আর্সেনাল)
ম্যানচেস্টার সিটিতে একটা লম্বা সময় কাটিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান তারকা ফুটবলার গ্যাব্রিয়েল জেসুস। তবে ফর্মহীনতায় ভুগছিলেন বিগত কিছু মৌসুমে। তাছাড়া ইনজুরিও তাঁর ক্যারিয়ারে প্রধান অন্তরায় হয়ে সামনে এসেছে বহুবার। এমন অবস্থায় ম্যানচেস্টার সিটি বিকল্প খুঁজছিল। পেয়েও যায় আর্লিং হাল্যান্ড রুপে। অগ্যতা জেসুসকে খুঁজতে হয় নিজের জন্যে নতুন ঠিকানা।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের আরেক ক্লাব আর্সেনাল ব্রাজিলিয়ান এই স্ট্রাইকারকে নিজেদের দলে ভেড়ায়। মাঠে নিজের খেলার সময় নিশ্চিত করতেই মূলত জেসুস নতুন বাসস্থান খুঁজে নিয়েছেন। তাছাড়া নতুন ক্লাবে নতুন পরিবেশে একেবারে নতুন এক চ্যালেঞ্জ নিতে কে না চায়। সে চাওয়া থেকেই আর্সেনাল অভিমুখে যাত্রা গ্যাব্রিয়েল জেসুসের।
- ডারউইন নুনেজ (লিভারপুল)
বেনফিকার হয়ে দারুণ একটা মৌসুম পার করেছিলেন উরুগুয়ের আক্রমণভাগের খেলোয়াড় ডারউইন নুনেজ। তিনি পর্তুগালের ক্লাব ছেড়ে দেবে এবারের দলবদলে সেটা প্রায় নিশ্চিত ছিল। বেনফিকার জার্সি ছেড়ে তিনি গায়ে জড়িয়েছেন ইংলিশ ক্লাব লিভারপুলের লাল জার্সি।
লিভারপুলের তারকা ফুটবলার সাদিও মানে ছেড়েছেন দল। তাঁর অবর্তমানে লিভারপুলের একাদশে নুনেজের সুযোগ পাওয়া যেন অবধারিত। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের প্রতিযোগিতামূলক লিগে নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করাটাই হবে নুনেজের প্রধান চ্যালেঞ্জ। তবে নিশ্চয়ই অল্পতেই থেমে যেতে চাইবেন না ডারউইন নুনেজ। পাখা মেলে উড়বেন ইংল্যান্ডের আকাশে।
- জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি)
নিজেদের স্ট্রাইকিং দূর্বলতা ঘোচাতে এবং দলকে লম্বা সময়ের জন্যে এই দূর্বলতা থেকে দূরে রাখতে চায় ম্যানচেস্টার সিটি। তাইতো জুলিয়ান আলভারেজের মত উদীয়মান তারকা স্ট্রাইকারকেও দলে ভিড়িয়েছে ম্যানসিটি।জুলিয়ান আলভারেজ যে প্রতিভাবান তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কোচ পেপ গার্দিওলা নিশ্চয়ই প্রতিভার ঝলক দেখতে পেয়েছিলেন ২২ বছর বয়সী আলভারেজের মধ্যে।
আর্জেন্টিনার ক্লাব রিভার প্লেটের সাথে নিজের খেলা শেষ ম্যাচে ছয় গোল করেছিলেন আলভারেজ। তাতেই রীতিমত তাঁকে নিয়ে সাড়া পড়ে যায় অন্তর্জাল দুনিয়ায়। উদীয়মান ল্যাটিন এই তারকাকে দলে সুযোগ করে দিতেই বোধহয় গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে ছেড়ে দিয়েছে ম্যান সিটি।