উইকেটের পেছনে, কিংবা সামনে

উইকেট কিপিং হলো এক ধরনের আর্ট। উইকেটরক্ষকের প্রধান কাজ হচ্ছে ব্যাটসম্যানকে অতিক্রমণকারী বলকে থামানো। ব্যাটিং এবং বোলিং এর মতোই এটি ভিন্ন তবে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিভা। ক্রিকেটের মাঠে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করতে হলে বোলিং, ফিল্ডিং এবং উইকেট কিপিং তিনটিই অস্ত্র হিসেবে কাজ করে।

যখন বিশ্বের সর্বকালের সেরা উইকেটরক্ষকদের কথা আসে তখন মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং কুমার সাঙ্গাকারার নাম সবার আগে মাথায় আসে। কিংবা অ্যাডাম গিলক্রিস্ট বা মার্ক বাউচারও আসতে পারেন।

আমরা দীর্ঘকাল ধরে তাদের স্ট্যাম্পের পেছনে দেখে অভ্যস্ত। সাঙ্গাকারা ২০০৬ সালে উইকেট কিপিং শুরু করেন এবং ২০১৫ সালে অবসর নেয়ার আগ পর্যন্ত উইকেট-রক্ষক হিসেবে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ডিসমিসাল তার দখলে। ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতের ইতিহাসে অন্যতম সেরা উইকেটরক্ষক ছিলেন।

এই মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটের দরবারে সেরা চার উইকেটরক্ষক এর পরিচয় জেনে নিই। তাঁদের একটা ব্যাপার হল, উইকেটের পেছনে যেমন তাঁরা চতুর, তেমনি উইকেটের সামনে মানে ব্যাট হাতেও দাপুটে।

  • জস বাটলার (ইংল্যান্ড)

জস বাটলারের গ্লাভসবন্দী হাত প্রচন্ড দক্ষ। তিনি কালেভদ্রে উইকেট ডিসমিসাল হাতছাড়া করেন। তিনি ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে উইকেট কিপিং শুরু করেছিলেন। বর্তমানে ইংরেজদের তিন ফরম্যাটেই তিনি এই গুরুদায়িত্বটি পালন করছেন। তাই তিনি এই তালিকায় এক নম্বরে রয়েছেন। জস বাটলার বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সেরা উইকেটরক্ষক এর তকমা পেয়েছেন।

আর একটা এবার এখানে না বললেই নয় যে – সময়ের সাথে সাথে ধারাল হয়ে উঠছে তাঁর ব্যাট। বিশেষ করে তিনি এই মুহূর্তে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এক নম্বর ব্যাটার – এখানে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।

  • কুইন্টন ডি কক ( দক্ষিণ আফ্রিকা) 

জোহানেসবার্গে জন্মগ্রহণকারী দক্ষিণ আফ্রিকান এই ক্রিকেটারকে উইকেটের পিছনে সবচেয়ে দ্রুততম হাত হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কুইন্টন ডি কক পায়ের গতিবিধি থেকে বল সংগ্রহ পর্যন্ত উইকেটরক্ষণের প্রতিটি দিককে বিশেষভাবে আয়ত্ত করেছেন, যা তাকে প্রোটিয়া ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ উইকেটরক্ষকে পরিণত করেছে।

এছাড়াও, তিনি আইপিএল ২০২২-এর মৌসুমে লখনৌ সুপার জায়ান্টদের পক্ষে উইকেট কিপিং এ দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছেন যা তাকে বিশ্ব দরবারে সেরা উইকেটরক্ষক হিসেবে সমাদৃত করে তোলে।

  • টম ল্যাথাম ( নিউজিল্যান্ড) 

টম ল্যাথাম এই তালিকায় তিন নম্বরে অবস্থান করছেন। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে ডেভন কনওয়ে এবং টম ব্লান্ডেলের মতো সেরা উইকি-ব্যাটাররা রয়েছে, তবুও তারা ক্রিকেটের তিন ঘরানায়ই টম ল্যাথামের নিরাপদ হাতের  উপর বিশ্বাস রেখেছেন।

এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি সেরা উইকেট রক্ষকদের একজন। মাঝে মধ্যে নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের অনুপস্থিতিতে তাঁকে নেতৃত্বেও দেখা যায়।

  • লিটন দাস (বাংলাদেশ) 

বর্তমানে লিটন  দাস বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় ব্যাটার। তিনি ডানহাতি উদ্বোধনী ব্যাটার হিসেবে মাঠে নামেন। এর পাশাপাশি দলে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যায় তাকে। তা হলো উইকেট কিপিং। এককালের নিয়মিত উইকেট রক্ষক মুশফিকুর রহিম এর যোগ্য উত্তরসূরি হয়ে, উইকেট কিপিংয়ের মতো কঠিন দায়িত্বটা নিজের করে নিয়েছেন তিনি।

১০ জুন, ২০১৫ তারিখে মুশফিকুর রহিমের আঙুলের চোটজনিত কারণে তার পরিবর্তে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক ঘটেছিল তাঁর। টেস্টে এখন তিনিই বাংলাদেশের উইকেটের পেছনে দাঁড়ান নিয়মিত। পাশাপাশি ব্যাটার হিসেবেও তিনি দিনদিন সেরাদের একজন হয়ে উঠছেন।

ক্রিকেটের ক্ষেত্রে বলা হয় যে ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস। এইযে ক্যাচ নিয়ে প্রতিপক্ষের দুর্গ গুড়িয়ে দেয়ার  কাজটা অনেকাংশে করে থাকেন উইকেটরক্ষকরাই। স্ট্যাম্পের পিছনে থেকেও প্রতিপক্ষের ব্যাটারকে চাপে রাখার গুরুদায়িত্বটা তাদের ঘাড়ে ন্যস্ত থাকে। একটি শক্তিশালী ক্রিকেট দল হতে গেলে একজন শক্তিশালী উইকেটরক্ষক দলে থাকা অনস্বীকার্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link