‘ফিনিশার’ শব্দটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে মহেন্দ্র সিং ধোনি, আন্দ্রে রাসেল বা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের মতো নাম। কিন্তু জানেন কি, ফিনিশারের সংজ্ঞা বদলে দেওয়া প্রথম ব্যক্তি কে? তিনি মাইকেল বেভান—একজন নিখুঁত শিল্পী, যিনি রানের পাহাড়ে চাপা পড়া দলকে শেষ মুহূর্তে এনে দিতেন জয়ের স্বাদ।
ফিনিশারের সংজ্ঞা বদলে দেওয়া এক নাম এই মাইকেল বেভান। তিনি ছিলেন এক ইতিহাস, এক জাদু, এক অমলিন নাম, যা ক্রিকেটের স্বর্ণালি অক্ষরে চিরকাল লিখিত থাকবে।
১৯৭০ সালে জন্ম নেওয়া এই অস্ট্রেলিয়ান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ওয়ানডেতে ছিলেন অদম্য। ১৯৯৬ সালের সেই বিখ্যাত সিডনি ম্যাচে যখন ৩৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল অস্ট্রেলিয়া, তখন একাই দলকে টেনে নিয়ে যান জয় বন্দরে। শেষ বলে চার মেরে নিশ্চিত করেন এক ঐতিহাসিক জয়। এমন দৃশ্য তার ক্যারিয়ারে বারবার দেখা গেছে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নাটকীয় সেমিফাইনালেও বেভান ছিলেন অপরিহার্য চরিত্র।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৩২ ম্যাচ খেলে ৫৩.৫৮ গড়ে ৬৯১২ রান করা বেভান ছিলেন নিখুঁত রান চেজার। সফল রান তাড়ায় তার গড় ছিল ৮৬.২৫—যা অবসর নেওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ! ১৯৬ ইনিংসে ব্যাট করে ৬৭ বার অপরাজিত থাকার রেকর্ড আজও অক্ষত। টেস্ট ক্রিকেটে সুবিধা করতে না পারলেও, ওয়ানডেতে তার ব্যাট ছিল নির্ভরতার প্রতীক।
২০০৭ সালে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও, তার অবদান আজও স্মরণীয়। পরবর্তীতে কোচিং করলেও ক্রিকেটার বেভানের ছায়া কখনোই ফিকে হয়নি। সময় বদলেছে, ফিনিশাররা এসেছে-গেছে, কিন্তু সত্যিকারের ফিনিশার কে? কিংবা সর্বকালের সেরা ফিনিশার কে? প্রশ্নের জবাবে একটাই নাম আসে চিরকাল — মাইকেল বেভান!
জয়ের এক অমোঘ চিহ্ন তিনি ছিলেন বারবার। বিপদ যখন অজির জন্য মহাবিপদ দাঁড়াত, তখন দাঁড়িয়ে যেতেন বেভা। শেষ পর্যন্ত, কেমন করে ম্যাচটি যেন তিনি জিতিয়ে দিতেন। ম্যাচের শেষ তুলির আচড় তাঁর চেয়ে ভাল কেউ দিতে জানতেন না। একে একে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে মাঠে নিজের অবিচল থাকার এক অপূর্ব ক্ষমতা ছিল তাঁর।
৫০ ওভারের সেই দুর্বোধ্য ম্যাচগুলো, যেখানে হারার সম্ভাবনাই থাকত বেশি। কিন্তু, যতক্ষণ বেভান থাকতেন, ভরসা থাকত। তিনি একাই ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। টানটান উত্তেজনায় ভরা এক বিশেষত্ব ছিল তাঁর মধ্যে, যা আজকের ক্রিকেটে কল্পনারও বাইরে
মাইকেল বেভান এক কাব্য, ম্যাচ ফিনিশের সেরা কাব্য। তিনি এক পংক্তি যা ক্রিকেটে বুকে গানের মতোই বেজে। আজও যখন কেউ অভাবনীয় ম্যাচ জিতিয়ে ব্যাট উঁচু করে ফিরে আসেন, তখন বেভানের নাম নস্টালজিয়ায় ভেসে বেড়ায়।