চন্দ্রাহত ভিভ

ষাটের দশকে ভারতের বোলিং বিভাগ মানেই বিষান সিং বেদি, এরাপল্লি প্রসন্ন, শ্রীনিবাসরাঘবন ভেঙ্কটরাঘবনের সাথে স্পিন চতুষ্টয় হিসেবে ছিলেন ভগবত চন্দ্রশেখর। এই চার স্পিন জাদুকর সেসময় ভারতের হয়ে প্রতিপক্ষকে গুড়িয়ে দেওয়ার গুরু দায়িত্ব পালন করতেন। জন্ম থেকেই পোলিওর কারণে ডান হাত কিছুটা দূর্বল ছিলো চন্দ্রশেখরের। এটি অবশ্য চন্দ্রশেখরের দূর্বলতা ছিলো যেমন তেমনি ছিলো শক্তিমত্তাও। বলা হয় ভারতের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় ম্যাচ উইনারও ছিলেন চন্দ্রশেখর।

ক্রিকেটের ভাষায় বানি বলতে কোনো ক্রিকেটার যখন স্রেফ উইকেটকিপার কিংবা বোলার হিসেবে দলে খেলছেন তাকে বোঝায়। আরেকভাবে সংজ্ঞায়িত করতে গেলে – ‘কোনো ব্যাটার কোনো নির্দিষ্ট বোলারের কাছে বার বার উইকেট দিয়ে আসেন সেটাকেই মূলত বানি বলে।’ যেমনটা গ্লেন ম্যাগ্রার বানি ছিলেন ইংলিশ তারকা মাইক আথারটন। তেমনকি ভগবত চন্দ্রশেখরের বানি ছিলেন ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি তারকা স্যার ভিভ রিচার্ডস।

ভিভ রিচার্ডসের অভিষেকটাও হয়েছিলো ভারতের বিপক্ষে। আর নিজের অভিষেক ম্যাচেই ভারতের বিপক্ষে চন্দ্রশেখরের বলে দুই ইনিংসেই আউট হন ভিভ! ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই তারকা বার বার ধরা দিয়েছেন চন্দ্রশেখরের কাছে।

চন্দ্রশেখরের কাছে ছিলো গতি, হ্যাঁ সেটা স্পিনার হওয়ার পরও সত্যি! মিডিয়াম পেসারদের মতোই বলে গতি দিতে পারতেন তিনি। এছাড়া অন্যতম সেরা অস্ত্র হিসেবে করতেন টপস্পিনও।

১৯৭৪-৭৫ ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে প্রথম ইনিংসে ৪ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ভিভ ফিরেন মাত্র ৩ রানে! চন্দ্রশেখরের বিপক্ষে যেনো ব্যাট করার কোনো সূত্র মেলাতে পারেননি ভিভ। পরের ম্যাচেই ভিভ ১৯২ রানের ইনিংস খেলেন! কিন্তু সে ম্যাচে আবার দলে ছিলেন না চন্দ্রশেখর! পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে ভার‍ত তখন ইংল্যান্ড সফরে। সেখানে সমারসেটের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে আবারও ভিভকে পেয়ে গেলেন চন্দ্রশেখর!

১৯৭৯ সালে ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা তারকা তখন ভিভ রিচার্ডস। সেই বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান ভারতের বিপক্ষে সমারসেটের হয়ে এক প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠে নামছিলেন তিনি। বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়ানো রিচার্ডসকে সেদিন চন্দ্রশেখর বলেছিলেন, ‘ওহে আমার প্রিয় খাদক, স্বাগতম।’

ভিভকে ক্যারিয়ারে মাত্র চারবার আউট করেছেন চন্দ্রশেখর। কিন্তু তবুও এই জুটি নিয়ে এতো আলোচনার কারণ ক্রিকেট বিশ্ব শাসন করা ভিভ ক্যারিয়ারে কখনোই চন্দ্রশেখরের বিপক্ষে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন না ভিভ। এক সাক্ষাৎকারে তো বলেছেন, ‘ অস্ট্রেলিয়ার ডেনিস লিলিকে খেলতেও আমার সমস্যা হয়নি, কিন্তু চন্দ্রশেখরকে খেলতে সমস্যা হতো। ‘

সত্তরের দশকে ভারতের প্রায় জয়গুলোতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিলো চন্দ্রশেখরের। তার খেলা ৫৮ টেস্টের মাঝে দশের বেশি টেস্টে ভারতের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান ছিলো এই স্পিনারের। ১৯৭১ সালে ওভাল টেস্টে জয়ের পর রাতারাতি তারকা বনে যান চন্দ্র। ১৯৭৩ সালে মাদ্রাজে ইংল্যান্ড বধের ম্যাচেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন চন্দ্রশেখর।

মরনে মরকেল-অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস, হ্যানসি ক্রনিয়ে-শচীন টেন্ডুলকারের মতোই ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা বানির একটি চন্দ্রশেখর ও ভিভ রিচার্ডস। ভিভ রিচার্ডস ক্যারিয়ারে কারো সামনে মাথা না নোয়ালেও চন্দ্রশেখরের সামনে কখনোই সেভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। বরং চন্দ্রশেখরের সামনে তিনি বরাবরই ছিলেন অসহায়! ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা স্পিনারদের তালিকা করলেও তাতে অনাসায়ে ঠাঁই পেয়ে যাবেন চন্দ্রশেখর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link