দুই মৌসুম আগেই ভুবনেশ্বর কুমার ফুরিয়ে গেছেন এমনটা ভেবে নিয়েছিলেন সবাই। ক্রমাগত ইনজুরি আর ফিটনেসজনিত সমস্যায় নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন এই তারকা। তবে এবারের আইপিএলে যেন নিজের পুরনো রূপে ফিরে এসেছেন ভুবনেশ্বর।
ক্যারিয়ারের শুরুতে টেস্ট স্পেশালিস্ট হিসেবেই জাতীয় দলে আবির্ভাব হয়েছিল ভুবনেশ্বরের। উইকেটের দুই দিকেই সুইং করানোর ক্ষমতা তাঁকে রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছিল। তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছেন এই পেসার। সুইংয়ের পাশাপাশি নাকল বল, স্লোয়ার কিংবা ইয়র্কারের মতো আয়ত্ত্বে এনে ব্যাটারদের জন্য রীতিমতো দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছেন ভুবনেশ্বর।
আইপিএলে এক প্রকার সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের ঘরের ছেলে বনে গেছেন এই পেসার। ২০১৬ সালে ২৩ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির খেতাব জেতার পাশাপাশি দলকে এনে দিয়েছিলেন শিরোপা জয়ের স্বাদ। সেবারে মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য এক জুড়ি গড়ে তোলেন এই তারকা। ফর্মটা ধরে রাখেন পরের মৌসুমেও, সেবারে তুলে নেন ২৬ উইকেট।
ভুবনেশ্বরের বলে আহামরি গতি না থাকলেও সব সময়েই ব্যাটারদের জন্য আতংকের এক নাম। বিশেষ করে পাওয়ার প্লেতে তাঁকে সামলানো বিশ্বের কঠিনতম কাজের একটি। স্লো পিচেও সুইং আদায় করে নিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। এছাড়া ডেথ ওভারেও দারুণ সব ইয়র্কারে ব্যাটারদের বিপাকে ফেলতে পটু এই পেসার।
কিন্তু ২০১৯ সালের পর থেকেই যেন ছন্দটা হারিয়ে ফেলেন এই তারকা। হ্যামস্ট্রিং কিংবা থাইয়ের ইনজুরিতে মৌসুমের বড় একটা সময় থাকতে হয়েছে মাঠের বাইরেই। ২০২১ মৌসুমে তো ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে আইপিএল মৌসুম কাটান, ১১ ম্যাচে শিকার করেন মাত্র ছয় উইকেট। একদিকে ইনজুরি আর বাজে ফর্ম, অন্যদিকে দীপক চাহারের উত্থানে জায়গা হারান জাতীয় দল থেকেই। সবাই ভেবেই নিয়েছিলেন তরুণ পেসারদের আবির্ভাবে হয়তো দৃশ্যপটে আর ফেরা হবে না ভুবনেশ্বরের।
২০২২ নিলামের আগে হায়দ্রাবাদও তাঁকে দলে ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখায়নি। বরং নিলাম থেকে দলে ভিড়িয়েছিল আগের তুলনায় অর্ধেক মূল্যে। ভুবনেশ্বর অবশ্য হাল ছাড়েননি, তিনি পরিশ্রমটা চালিয়ে গেছেন নিজের মতো করেই। ফিটনেস নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করেছেন, বোলিংয়ে যোগ করেছেন নতুন অস্ত্র। ফলে গত বারের মৌসুমেই ছিল ফিরে আসার ঝলক, শিকার করেন ১২ উইকেট।
জায়গা ফিরে পান জাতীয় দলেও, কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নামের প্রতি মোটেই সুবিচার করতে পারেননি। বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচে শিকার করেন মাত্র চার উইকেট, ভারতও বিদায় নেয় সেমিফাইনাল থেকেই। এবারের আইপিএল তাই ভুবনেশ্বরের জন্য ছিল নিজেকে জানান দেয়ার।
মৌসুমের শুরু থেকেই তাই ভুবির মাঝে আলাদা তাগিদ ছিল ভাল করার। প্রতি ম্যাচেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেও উইকেটের দেখা পাচ্ছিলেন না তেমন। তবে গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে যেন ফিরে এলেন পুরনো রূপেই। তাঁর দুর্দান্ত বোলিংয়ের কোনো জবাব ছিল না হার্দিক পান্ডিয়া-ডেভিড মিলারদের কাছে।
ইনিংসের শুরুতে যেমন গুঁড়িয়ে দিয়েছেন গুজরাটের টপ অর্ডার, তেমনি ডেথ ওভারে এসে সামলেছেন শুভমান ঝড়। শেষ পর্যন্ত চার ওভারে ৩০ রান দিয়ে শিকার করেন পাঁচ উইকেট।
বছর শেষের বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিতে পারফরম্যান্সের বিকল্প নেই জানেন ভুবনেশ্বর। সে কারণেই কিনা ক্যারিয়ারের শেষবেলায় জ্বলে উঠেছেন আপন মহিমায়।