গতকাল সকালে মিরপুরের একটি গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। জাতীয় দল দেশের বাইরে থাকায় হোম অব ক্রিকেটে এমনিতেই চাপ কম। তবে বাংলাদেশ টাইগার্স ও হাই পারফর্মেন্সের ক্রিকেটারদের অনুশীলন চলছে। কিন্তু মাঠে যাওয়া সাংবাদিকদের মন-মেজাজ খুব একটা ভালো নেই। কারণ মাঠে বিশেষ কোন ঘটনা নেই, কাটছে অলস সময়। এমন সময় হঠাতই এক ক্রিকেটার অনুশীলন শেষ করে বের হচ্ছেন। তাই তাঁর সাথেই খানিকটা গল্প হলো।
বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সেই ক্রিকেটারের সাথে অনেক কিছু নিয়েই আলাপ হলো। এক পর্যায়ে কথা উঠলো বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ নিয়ে। এরপর প্রসঙ্গ গেল এনামুল হক বিজয়ের আবার টেস্ট দলে ফেরা নিয়ে। তাঁকে তিন-চারে খেলানোটা উচিৎ হবে কিনা এসব নিয়ে আরকি। কেননা তখনই আমরা মোটামুটি নিশ্চিত যে বিজয় আজ খেলছেন।
বিজয়কে নিয়ে আলোচনাটা বেশ দীর্ঘই হয়েছিল। তবে উল্লেখিত সেই ক্রিকেটারের একটা কথা বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। তিনি বলছিলেন, “বিজয়কে যেভাবে টেস্টে নামানো হচ্ছে এটা আসলে সঠিক প্রসেস না। বিজয় হয়তো নেমে আসলেই ভালো করতে পারে। সেই দোয়াই করি যেন ভালো করে। তখন বিজয়ের প্রশংসা করতে পারেন আপনারা। কিন্তু বিজয় রান করলেই এই প্রসেসটা ঠিক হয়ে যাবেনা। বিজয় রান করুক বা না করুক আপনাদের (সাংবাদিকদের) উচিৎ এই প্রসেসটার সমালোচনা করা।”
বিজয় রান করলেও এই প্রসেসটা ঠিক হয়ে যাবেনা এই কথাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক কোন প্রসেসের কথা বলা হচ্ছে সেটা একটু খুলে বলা যাক। বিজয় এবছর ঘরোয়া ক্রিকেটে অবিশ্বাস্য ফর্মে ছিলেন। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে হাজারের বেশি রান করেছেন। এক কথায় বিজয় একটা অবিশ্বাস্য মৌসুম কাটিয়েছেন।
আর সেটার পুরষ্কারও বিজয় পেয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে তাঁকে দলে ডাকা হয়েছে। কিন্তু ইয়াসির আলি রাব্বির ইনজুরিতে হঠাতই তাঁকে টেস্ট দলে ডেকে পাঠানো হয় এবং প্রথম থেকেই শোনা যাচ্ছিল দ্বিতীয় টেস্টে তিনি খেলছেন। আর এখানেই আসলে সমস্যাটা।
বিজয় এক মৌসুমে হাজারের বেশি রান করেছেন, অবিশ্বাস্য ফর্মে আছেন সবই ঠিকাছে। কিন্তু সেটা ছিল সাদা বলের ক্রিকেট, ওয়ানডে ফরম্যাট। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে পারফর্মেন্সের পুরষ্কার হিসেবে একজন ক্রিকেটার ওয়ানডে দলে ডাক পেতে পারেন, কখনো কখনো হয়তো টি-টোয়েন্টি দলেও পেতে পারেন কিন্তু কোন ভাবেই টেস্ট ক্রিকেটে নয়।
এছাড়া এবার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও অন্যতম বাজে মৌসুম কাটিয়েছেন তিনি। ১৫ ইনিংস খেলে তার রান ৩৯৬, গড় ২৮.২৮। গত ১২ বছরে এই প্রথমবার ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির মৌসুমে কোনো সেঞ্চুরি তিনি করতে পারেননি। ফলে কোনভাবেই টেস্ট ক্রিকেটের দলে তাঁর জায়গা পাবার কথা না।
কিন্তু সাদা বল আর লাল বল দুটি যে পুরোপুরি আলাদা সেটা বাংলাদেশের ক্রিকেট বোঝার চেষ্টা করেনি। তাও মেনে নেয়া যেত যদি টেস্ট ক্রিকেটে এর আগে বিজয়ের কোন সুখস্মৃতি থাকতো। ক্যারিয়ারের কোন পর্যায়েই বিজয় সাদা পোশাকের ক্রিকেটার ছিলেন না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যখন রঙিন পোশাকে বিজয় ভালো করছিলেন তখনো টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর পারফর্মেন্স ছিল করুণ।
সেজন্যই ২০১৪ সালে মাত্র চার টেস্টেই থেমে গিয়েছিল তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ার। সেই সময় বাংলাদেশের হয়ে যেই চার টেস্ট খেলেছিলেন তাঁর একটিতেও হাফ সেঞ্চুরি অবধি করতে পারেননি। আট ইনিংসে সর্বসাকুল্যে করেছিলেন ৭৩ রান। ব্যাটিং গড় ছিল ৯.১২। এমনকি আজ যে ২৩ রানের ইনিংস খেলেছেন টেস্ট ক্রিকেটে এটাই তাঁর ক্যারিয়ার সেরা।
এমনকি দেশেও তিনি অনুশীলন করছিলেন সাদা বলে। প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য। কিন্তু হঠাতই বিজয়ের ডাক পড়লো লাল বলের ক্রিকেটে। ফলে কোনরকম প্রস্তুতি ছাড়াই মাঠে নামতে হলো তাঁকে। জাতীয় দলে ফেরাটা অবশ্যই যেকোন ক্রিকেটারের জন্য গর্বের। কিন্তু বিজয় নিজেও কী এভাবে ফিরতে চেয়েছিলেন? কেননা দিন শেষে এই ভুল প্রক্রিয়ার মাশুল তো স্রেফ বিজয়ই গুনবেন।