রীতিমতো রান উৎসব চলছে বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) এবারের আসরে। এখন অবধি ঢাকা, সিলেট দুই পর্বেই হাইস্কোরিং উইকেটে আকর্ষণীয় ম্যাচ উপহার দিয়ে চারদিক থেকেই ভূয়সী প্রশংসা পাচ্ছে বিপিএল। চার ছক্কার বন্যা যেন বয়ে যাচ্ছে শেরে বাংলা ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম আর সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ২০২৫ বিপিএলের চলতি আসরের ১০ ম্যাচের মধ্যেই ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড ভেঙেছে দুই বার।
যদিও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) মাঠের বাইরের অনেক সমস্যায় জর্জরিত। কিন্তু বিসিবি অফিশিয়ালরা অন্তত একটা ক্ষেত্রে নিজেদের পিঠটা সগৌরবে চাপড়ে দিতে পারেন। টি-টোয়েন্টির চলনসই উইকেট এবার তারা উপহার দিতে পেরেছেন, যা সচরাচর বিপিএলে দেখা মিলে না। যদিও ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল সম্প্রতিই বাউন্ডারির দৈর্ঘ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সোমবার সিলেটে দূর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে ম্যাচ শেষে বাউন্ডারি বেশ ছোট, এই মর্মে বক্তব্য দিলে আবারও শুরু হয় আলোচনার ঝড়। তবে কি বাউন্ডারি ছোট, এজন্যই হচ্ছে এত হাইস্কোরিং ম্যাচ?
খোদ তামিম ইকবালও বললেন, ‘মাঠগুলো যেভাবে তৈরি করা হয়েছে তা খুবই ভালো। তবে বাউন্ডারির দৈর্ঘ্য আরও বড় হওয়া উচিত ছিল। পর্যাপ্ত জায়গা যেহেতু আছে, তবুও ৫৮-৬০ মিটারের ছোট বাউন্ডারি কেন দেওয়া হচ্ছে আমি জানি না।’
আইসিসির গাইডলাইন অনুসারে , পুরুষদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাউন্ডারির সর্বোচ্চ সীমা মাঠের মাঝখান থেকে ৯০ গজ (৮২.২৯ মিটার) আর সর্বনিম্ন ৬৫ গজ (৫৯.৪৩ মিটার)। এখন অবধি চলতি বিপিএলে সবচেয়ে বড় বাউন্ডারির দৈর্ঘ্য ছিল ৭০ গজ (৬৪.০৯ মিটার) আর সবচেয়ে ছোট বাউন্ডারি ছিল ৬৪ গজের (৫৮.৫২ মিটার)। যদিও বাউন্ডারির এই লিস্ট সংগ্রহ করা হয়েছে ঢাকা ও সিলেটের কিউরেটরদের থেকে। এজন্যই অনেক খেলোয়াড় আর উপস্থিত অনেকেই এই তথ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কেননা গত সোমবারের ম্যাচেই, ব্রডকাস্টিংয়ে দেখা গেছে মোটে ৫২ মিটারের ছক্কাও।
ব্রডকাস্টার যখন মাঠের পরিমাপ উল্লেখ করলেন সেখানেও দেখা গেল সিলেটে সবচেয়ে ছোট বাউন্ডারি লাইনটাও ৫৫ মিটারে। তাহলে বাউন্ডারি লাইনের তিন ছোট একটা শট কিভাবে ছক্কা হল সেটিও এখনো এক অমীমাংসিত রহস্য হয়েই রয়ে গেল। এবারে বিসিবি গ্রাউন্ডস কমিটির ম্যানেজার আবদুল বাতেনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও মেলেনি কোন সদুত্তর। এ ব্যাপারে তিনি সঠিক জানেন না এবং আন্তজার্তিক মানদণ্ড মেনেই মাঠ প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি মিরপুরের কিউরেটর গামিনী ডি সিলভা এবং সিলেটের ভেন্যু ম্যানেজার জয়দীপ দাসও।
বিপিএল গর্ভনিং কাউন্সিলের মেম্বার সেক্রেটারির দায়িত্বে আছেন নাজমুল আবেদিন ফাহিম। ছোট বাউন্ডারি নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তিনিও। সম্প্রতি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমি পিচ কিউরেটরদের বাউন্ডারির দৈর্ঘ্য বড় করতে বলেছিলাম। আমি জানি না বিপিএলের গর্ভনিং কাউন্সিল থেকে কে কি সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাউন্ডারির দৈর্ঘ্য নিয়ে। অন্তত আমি এমন কোন সিদ্ধান্ত দেইনি।’
বাউন্ডারি ছোট হওয়া বিভিন্ন রকম অসুবিধার কথাও জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘এতে ব্যাটারদের মনে একটা মিথ্যা আত্নবিশ্বাস জোগাবে। স্পিনাররা এখানে খেলায় কোন ইমপ্যাক্টই রাখতে পারবে না, ছন্দ হারাবে পেস বোলাররাও। ছোট বাউন্ডারির অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, যার কোনোটাই অন্তত পজিটিভ না। কিছু মাঠ থাকতে পারে যা আয়তনে ছোট বা কোন একটা নির্দিষ্ট দিকের বাউন্ডারিটা ছোট। তবে আমার প্রশ্ন হচ্ছে যথেষ্ট পরিমান জায়গা থাকা সত্ত্বেও বাউন্ডারি কেন ছোট হবে? আমরা এসব করে কিছুই পাব না।’
বিপিএল গর্ভনিং কাউন্সিল কিংবা গ্রাউন্ডস কমিটি কেউই এর দায়ভার নিতে চাচ্ছেন না। তাহলে প্রশ্ন উঠছে, বাউন্ডারির দৈর্ঘ্য কি একা একাই জাদু-টনায় ছোট হয়ে যাচ্ছে!